বিচিত্র দর্শন ট্রফির গল্প

খেলায় জয়-পরাজয় নাকি মূখ্য ব্যাপার নয়, অংশগ্রহণটাই আসল ব্যাপার। খেলাধুলার দর্শন এটাই বলে। আবার একই সাথে এটাই সত্যি যে বিশ্বের সেরা সব ক্রীড়াবিদরা মাঠে নামেন শুধুই জয়ের জন্য। ট্রফি জয়ই তাঁদের জন্য শেষ কথা। ক্রিকেটেও এর ব্যতিক্রম হয় না। বিশ্বের নামী-দামী সব অধিনায়করা মাঠে নামার আগেই বলে রাখেন, ‘ট্রফি জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’

বাইশ গজের কিছু ট্রফি যেমন ক্রীড়া আসরের মর্যাদা ও আভিজাত্যকে ফুটিয়ে তোলে, তেমনি কিছু ট্রফি জম্ম দেয় সমালোচনার। আজ তেমনই কিছু বিচিত্র ট্রফির গল্প বলবো – যাদের ভুতুড়ে দর্শন নিয়ে হাস্যরস যেমন হয়েছে, তেমনি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনাও।

  • বিস্কুটের আদলে ট্রফি

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি উম্মোচন করা হয়। মোড়ক খুলে যখন ট্রফি উম্মোচন করলেন দুই দলের অধিনায়ক, তখন তাদের চক্ষু চড়কগাছ। অবাক অনুষ্ঠানে থাকা সাংবাদিকরাও।

ট্রফি নয় যেন একটি ‘বিস্কুট’ বের হয়ে এসেছে। তিনটি লাঠির উপরে বড় একটি বিস্কুট। এ কেমন ট্রফি! পরে জানা গেলো টাক নামক একটি বিস্কুট প্রস্ততকারক কোম্পানি ওই সিরিজের স্পন্সর ছিলেন, তাই তাদের বিস্কুটের ডিজাইনে করা হয়েছে এই ট্রফি। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা সইতে হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি)।

  • বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় এই নামে। দুই দেশের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার অ্যালান বোর্ডার ও সুনীল গাভাস্কারের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এই সিরিজের। তো ১৯৯৬ সালে এই সিরিজের ট্রফি নিয়ে হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।

বাদামি রঙের একটি বড় কাঠের টুকরার মাঝে সাদা রঙের একটি বল, ট্রফির নকশা ছিলো এমনই। আসলে কি ভেবে যে নকশা করেছিলো সেটা এখনো রহস্য! বল আবার ক্রিকেট বলের মতোও নয়। অনেকটা ভূগোলের ক্লাসে ব্যবহৃত গোলকের মতো। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেবার ট্রফি ঘরে তুলেছিলো ভারত।

  • কোকা-কোলা ট্রফি

এক সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হতো শারজাহ কাপ নামে একটি টুর্নামেন্ট। ১৯৯৮ সালের আসরে অংশ নেয় ভারত,অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।

ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের হাতে আয়োজকরা যে ট্রফিটা তুলে দিয়েছিলো সেটি দেখতে ছিলো বড়ই অদ্ভুত। বিশাল আকৃতির কোকের বোতলের মুখের আদলেই তৈরি করা হয়েছিলে ট্রফিটি। কোকা-কোলা ছিলো সেই টুনামেন্টে অফিসিয়াল স্পন্সর।

  • আফ্রিদি ট্রফি

২০১৫ সালে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সিরিজে জয় পায় শহীদ আফ্রিদির নেতৃত্বধীন পাকিস্তান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধিনায়কের হাতে যখন ট্রফি তুলে দেওয়া হয়, দেখা গেল ট্রফিটি ঠিক আফ্রিদির দুই হাত উঁচু করে উদযাপনের আদলে বানানো হয়েছে।

পরদিন একটি সংবাদ মাধ্যম মজা করে লিখেছে আয়োজকরা কি আগেই জানতো এই ট্রফিটা কে জিতবেন? সত্যি যদি এই সিরিজটা শ্রীলঙ্কা জিততো তাহলে বিষয়টা কেমন হতো?

আবার ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের ট্রফিও বানানো হয় একই নকশায়।

  • সিপিএল ট্রফি

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) ট্রফিটাও ভুতুড়ে। এটার ওপরে একটি বল আর নিচে চারদিকে অনেকগুলো হাত। যেন হাতগুলোর সব বলটি ধরতে চেষ্টা করছে।

  • ওয়ার্ন-মুরালিধরন সিরিজ

অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ওয়ার্ন-মুরালিধন সিরিজে এক ট্রফি বানানো হয়েছে দুই স্পিনার হাত দিয়ে। একজন অফ স্পিনার আর অন্য জন লেগ স্পিনার নিজ নিজ স্টাইলে হাতের মুঠোয় বল ধরে আছেন এমন।

  • ‘বহুজাতিক’ ট্রফি

সবচেয়ে অদ্ভুত ট্রফিটার দেখা মিলে ২০০৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার দুই প্রীতি ম্যাচের সিরিজের ট্রফি তো ছিল বেশ লম্বা আর বিরাট চওড়া! ট্রফির ওপরে বসান ছিলো আরব আমিরাত, ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশের পতাকা – মানে, সত্যিকারের এক বহুজাতিক ট্রফি!

দুই অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় ও ইনজামাম উল হক দু-জন মিলেও ট্রফিটা তুলতে পারেননি। উভয় দল একটি করে ম্যাচ জেতায় ট্রফিটি কেউ নেয়নি। পরে স্থানীয় একটি ক্লাবে দেওয়া হয় ট্রফিটি। এমন একটি ট্রফি নিজ দেশে বয়ে নিয়ে যেতে কে চাইবে বলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link