ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর: কেমন হল প্রস্তুতি?
তবে ক্যারিবিয়ানদের মূল একাদশের কেউই ছিলেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশে। যদিও, টেস্ট স্কোয়াডে নতুন ডাক পাওয়া তেজনারায়ন চন্দরপল খেলেছেন প্রস্তুতি ম্যাচটি৷ তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলোয়াড় দিয়ে সাজানো এই একাদশের বিপক্ষে খুব একটা দাপট দেখাতে পারেনি টিম টাইগার্স।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের একাংশ এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। বিশেষ করে লাল বলের দুই ম্যাচ সিরিজ উপলক্ষে টেস্ট দলের সব সদস্য এখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থান করছেন। এরইমধ্যে টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তিন দিনের এই প্রস্তুত ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশ।
তবে ক্যারিবিয়ানদের মূল একাদশের কেউই ছিলেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশে। যদিও, টেস্ট স্কোয়াডে নতুন ডাক পাওয়া তেজনারায়ন চন্দরপল খেলেছেন প্রস্তুতি ম্যাচটি৷ তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলোয়াড় দিয়ে সাজানো এই একাদশের বিপক্ষে খুব একটা দাপট দেখাতে পারেনি টিম টাইগার্স। বলা যায়, প্রাপ্তি এবং অপ্রান্তি দুইটিই ছিল এই গা-গরমের ম্যাচে।
প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অবশ্য প্রথমেই বলতে হয় তামিম ইকবালের কথা। সর্বশেষ ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল কিন্তু এরপরের ম্যাচেই জোড়া ডাক মেরে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছেন সমর্থকদের। তবে ট্র্যাকে ফিরতে আবার সময় লাগেনি তামিমের, দেশসেরা এই ওপেনার প্রস্তুতি ম্যাচে দাপুটে এক দেড়শো রানের ইনিংস খেলেছেন। এখন তামিম এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে লাভটা বাংলাদেশেরই।
তামিম ইকবালের পর বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় সফলতম ব্যাটার নাজমুল শান্ত। অনেকদিন ধরেই অফ ফর্মের কারনে সমালোচনার কেন্দ্রে ছিলেন এই তরুন। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে তামিম ইকবালের সাথে জুটি গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন শক্ত ভিত্তি আর নিজে দেখা পেয়েছেন ফিফটির। অবশ্য প্রচলিত আছে যে, প্রস্তুতি ম্যাচে নাকি সবসময়ই শান্ত’র ব্যাট কথা বলে কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঘুরেফিরে ব্যর্থ হন তিনি। দেখার বিষয়, এবার কথাটা ভুল প্রমান করতে পারেন কিনা শান্ত।
বোলিংয়ের ইনিংসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় স্বস্তি মুস্তাফিজুর রহমানের ফেরা এবং ভাল বোলিং করতে পারা। লম্বা বিরতি কাটিয়ে প্রায় দেড় বছর পর লাল বলে ফিরেছেন ফিজ, আর এরপর নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেটসহ মোট তিনটি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। তাসকিন, শরীফুলের অনুপস্থিতিতে মুস্তাফিজুরের জ্বলে উঠা নিশ্চয়ই বাংলার বোলিং আক্রমণের শক্তি বাড়াবে।
মুস্তাফিজের পাশাপাশি তিন উইকেট শিকার করেছেন আরেক পেসার এবাদত হোসেন। ২০২২ সালের শুরু থেকেই আসলে অন্যরকম ইবাদতকে দেখছে বাংলাদেশ। এমনকি বছরের শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকাতেও উপরের দিকে আছেন বিমানবাহিনীর এই ফাস্ট বোলার। উইন্ডিজের টেস্ট সিরিজেও তার দিকে চোখ থাকবে দলের।
প্রাপ্তির হিসেবেই আসলে অস্বস্তি কিংবা অপ্রাপ্তির দিকটা বোঝা যায়। তামিম এবং শান্ত ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান বড় অংকের রান করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে উদীয়মান ওপেনার জয় ফিরেছেন শূন্য রানে, সাবেক অধিনায়ক মুমিনুলও পারেননি নিজের ফর্ম ফেরাতে।
ব্যাটারদের মত বোলারদেরও প্রায় একই অবস্থা। ফিজ, ইবাদত ছাড়া আর কোন বোলার পারেননি প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে। বিশেষ করে স্পিনাররা ছিলেন পুরোপুরি নখদন্তহীন। তাছাড়া রান খরচের দিক থেকেও অনিয়ন্ত্রিত ছিল বাংলাদেশের বোলাররা। মূল সিরিজে এসব সমস্যার যথাযথ সমাধান না ঘটলে ভরাডুবি ঘটতে পারে বাংলাদেশ টেস্ট দলের।
তবে আশার কথা, সদ্যনিযুক্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছিলেন না এই ম্যাচে। তিনি ফিরলে নিশ্চিতভাবেই প্রান ফিরে পাবে বোলিং লাইন, বিশেষ করে স্পিন বিভাগ আরো কার্যকরী হবে। তাছাড়া মিডল অর্ডারের ভঙ্গুর অবস্থারও একটা সমাধান হবেন তিনি।
একটি মজার কথা যোগ করা যাক, ২০১৮ সালের প্রস্তুতি ম্যাচে তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করেছিলেন, আর বাংলাদেশ করেছিলেন ৪০৩ রান। কিন্তু সেবারের সফরে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাত্র ৪৩ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও সেঞ্চুরি করেছেন তামিম, দলের সংগ্রহ তিনশের বেশি। ২০১৮ এর ঘটনা আবার ঘটবে নাকি এবার, নাকি চার বছর আগের সেই দুর্যোগ নেহাতই অঘটন হিসেবে প্রমান হবে; সিরিজ শুরু হলেই পাওয়া যাবে এসব উত্তর।