হোয়াট আ কামব্যাক!

৯০ ওভার। ১০ উইকেট। ২৯১ রান।

ওভাল টেস্টের শেষ দিনে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য সমীকরণটা ছিলো ঠিক এমনই। অপরদিকে, ভারতের প্রয়োজন ১০ উইকেট। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ইংল্যান্ড ওপেনারদের ব্যাটিং দৃঢ়তা ম্যাচে আশা জাগায় ইংলিশদের। বিনা উইকেটে ৯৭ রান করা ইংলিশরা শেষ দিনে জয়ের স্বপ্নেই মাঠে নামে। কিন্তু ভারতীয় বোলিং আক্রমণের আগ্রাসনে ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ইংলিশরা।

শেষ দিনের শুরুতেই ররি বার্নসের উইকেট তুলে নেন শার্দুল ঠাকুর। একশো রানেই আটকে যায় ইংলিশদের অসাধারণ ওপেনিং জুটি। পরের উইকেটে ডেভিড মালানের সাথে জুটি গড়ার পথে হাসিব হামিদও তুলে নিলেন ফিফটি। তখনো সবকিছুই যেনো ঠিকঠাক চলছিলো। ভারতও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলো দ্রুত উইকেট তুলে নিতে। দলীয় ১২০ রানে রান আউটের ফাঁদে ডেভিড মালান ফিরলেই বাঁধে বিপত্তি।

লাঞ্চ বিরতির আগে ২৭ ওভারে মোটে ৪০ রান তুলে ইংলিশরা। ম্যাচে ড্র করাটাই যে তাদের লক্ষ্য ছিলো সেটা তখন পরিষ্কার। দিনের বাকি ৬৩ ওভারে ইংলিশদের প্রয়োজন ২৩৭ রান, আর ভারতের দরকার ৮ উইকেট। ম্যাচের ফলাফল তখন ড্র এর সম্ভাবনাটাই বেশি উঁকি দিচ্ছিলো।

কিন্তু লাঞ্চ বিরতির পর যে ইংলিশদের সামনে অপেক্ষা করছিলো যে এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষা! যে পরীক্ষায় চরম ব্যর্থ হয়ে অসহায়ত্ব বরণ করে ইংলিশরা। ভারতীয় বোলারদের আগুনের গোলার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় ইংলিশদের ব্যাটিং শিবির।

১৪০ রানে ২ উইকেট থেকে ১৪৭ রানেই নেই ৬ উইকেট! মাঝের ৬ ওভারেই ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ভারত। গতকাল পর্যন্ত ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন দেখা ভারত শেষদিনে লাঞ্চ বিরতির পর যেনো মুখ থুবড়ে পড়ে বুমরাহ-জাদেজাদের সামনে। বিনা উইকেটে ১০০ থেকে ১৪৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন বড় হারের সামনে দাঁড়িয়ে ইংলিশরা।

ঠিক তখনি ২০১৯ সালে হেডিংলিতে অ্যাশেজ টেস্টে অজিদের বিপক্ষে একক দাপট দেখিয়ে হেডিংলি টেস্টে জয় তুলে নেওয়া বেন স্টোকসের ইনিংসটা হটাৎ স্মৃতিতে ভেসে উঠলো। আজ তিনি থাকলে কি হার থেকে রক্ষে পেতো ইংলিশরা? নাকি কেউ বেন স্টোকসের রুপে আজও এক নিশ্চিত পরাজয় থেকে বাঁচাবে ইংলিশদের! নাহ, বুমরাহ-যাদবদের ক্ষীপ্ত বোলিংয়ে কেউই পারেনি ইংলিশদের রক্ষা করতে।

৬ ওভারের ছোট্ট স্পেলে দুই ম্যাজিকেল ডেলিভারিতে ওলি পোপ ও জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে ইংলিশ মিডল অর্ডারে আগুনটা ধরিয়েছিলেন বুমরাহই। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগেই ইংলিশদের আট ব্যাটসম্যান তখন প্যাভিলিয়নে! ১৯৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংলিশরা। চা-বিরতির পর হারটা তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিরতির পর ১৭ রানে শেষ ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানের বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইংলিশরা।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আগের টেস্টের মতোই প্রথম দিনেই অলআউট হয় ভারত। শার্দুল ঠাকুরের ঝড়ো ফিফটিতে মান রক্ষা হয় সফরকারীদের। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৬২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে ইংলিশরা। সেদিন ওভালে ত্রানকর্তা হিসেবে রুপ নেয় ওলি পোপ- ক্রিস ওকসরা। পোপ-ওকসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় খাদের কিনারা থেকে দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ৯৯ রানের লিড পায় ইংলিশরা!

ম্যাচে তখন চালকের আসনে ইংলিশরাই। প্রথম ইনিংসে খেই হারিয়ে ফেলা ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ভীত গড়তে পারে কিনা সেটি নিয়েও ছিলো সংশয়। কিন্তু সবার চিন্তাভাবনা ছাপিয়ে রোহিত শর্মার প্রথম ওভারসিস সেঞ্চুরি ও পুজারা-পান্তের জোড়া ফিফটিতে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬৬ রান দাড় করায় ভারত!

৩৬৮ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা মাথায় নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে ১০০ রান এলেও ভারতের বোলিং দাপটে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ে ইংলিশদের ব্যাটিং শিবির। ম্যাচে ব্যাকফুটে থাকা ভারতই হটাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে পালটা বাজিমাত দেয় ইংলিশদের।

ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ওভাল টেস্টে শেষ পর্যন্ত বড় জয় পায় ভারত। আগের টেস্টেই প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার পর আর ফিরতে পারেনি সফরকারীরা। ঠিক পরের টেস্টেই পালটা বাজিতে মাত দিয়ে সিরিজে ২-১ এ এগিয়ে গেলো ভারত। আগের টেস্টে খেই হারানো ভারত ওভাল টেস্টে বীরত্ব দেখিয়ে দাপুটে জয় নিয়ে সিরিজে আধিপত্য বিস্তার করেছে বিরাট কোহলির দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link