ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবলে টিকে থাকতে খেলোয়াড়দের মেনে চলতে হয় সুনির্দিষ্ট ডায়েট, নিয়মিত বিরতিতে গ্রহণ করতে হয় পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু, পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম ফুটবলারদের খাবারের রীতিতে আসে পরিবর্তন।
সেজন্য অবশ্য ফুটবল থেকে দূরে থাকেন না তাঁরা; অন্য সময়ের মতই অনুশীলন, ম্যাচ খেলা চালিয়ে যান। তবে রোজা রেখে এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভিন্ন রুটিন অনুসরণ করতে হয়।
একটা সময় খেলোয়াড়রা রোজা রাখার ব্যাপারটি গোপন রাখতে চাইতেন, ম্যানেজার বা মেডিকেল টিমের কাছে বলতেন না। কিন্তু বর্তমানে এমন চিত্র নেই বললেই চলে, প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাব এই নিয়ে বেশ সহায়ক। সেজন্য যারা রোজা রাখবেন তাঁদের নিয়ে আগে আলোচনায় বসে খাদ্য তালিকা ঠিক করা হয়। তখন পুষ্টিবিদি বলে দেন কখন কি খেতে হবে।
এ নিয়ে ক্রিস্টাল প্যালেসের স্পোর্টস মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. জাফর ইকবাল বলেন, ‘যখন রোজা রাখা শুরু হয় তখন আমাদের সতর্ক থাকতে হয় তাঁদের যেন ভাজা বা উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার না দেওয়া হয়। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে উপোস থাকার পরে ভারি খাবার খেলে শরীরে বাড়তি ফ্যাট জমে। এটি এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো রোজাদার ফুটবলাররা সঠিক ধরনের খাবার খাচ্ছে তা নিশ্চিত করা।’
ইফতার ও রাতে ফুটবলাররা কি খেয়ে থাকেন সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যখন তাঁরা রোজা ভাঙ্গে তখন আমরা দ্রুত শক্তি দেবে এবং সতেজ অনুভব করাবে এমন খাবার দিয়ে থাকি। সেটা হতে পারে ফল বা খেজুর। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তুলনামূলক ভারি খাবার দেয়া হয়। সেসময় গ্রিলড চিকেন, মাছ ও মাংসের সাথে প্রোটিন পানীয় সরবরাহ করা হয়।’
এছাড়া ফুটবলারদের দৈনন্দিন রুটিনেও বেশকিছু নিয়ম নীতি যোগ করা হয় রমজান উপলক্ষে। রাতের বেলায় বেশি বেশি তরল পান করা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিতের দিকে বাড়তি দৃষ্টি থাকে মেডিকেল বিভাগের।
রোজা রেখে খেলাটা আদতে কঠিন মনে হলেও ইসলাম ধর্মাবলম্বী খেলোয়াড়রা এটা উপভোগ করেন। রোজার কারণে তাঁরা মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেন।
রমজান নিয়ে ডা. জাফরের রয়েছে একাধিক হৃদয় ছোঁয়া গল্প। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ইফতারের জন্য আনুষ্ঠানিক বিরতির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০২১ সালে ক্রিস্টাল প্যালেস ও লেস্টার সিটির ম্যাচে মুসলিম ফুটবলারদের রোজা ভাঙার সুযোগ করে দিয়েছিলেন রেফারি।
টটেনহ্যামের হয়ে কাজ করাকালীন ঘটেছিল দারুণ এক ঘটনা। তিনি বলেন, ‘ম্যানেজার তখন কথা বলছিল ড্রেসিংরুমে, হঠাৎ গার্ড খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। জিজ্ঞেস করলে সে বলে এটা ডাক্তারের জন্য। তাঁর জানা ছিল আমি রোজা রেখেছি, সারাদিন খাওয়া হয়নি। তাই আমাকে না জানিয়ে ঠিক সময়ে খাবার প্রস্তুত রেখেছিল।’