এটা তুমি কি করলে, মার্ক?

পরের বলে যা হল হয়ত তার জন্য প্রস্তুত ছিল না ওয়াহ পরিবার-সহ গোটা অস্ট্রেলিয়া দল। ওভারের বাকি আর দুই বল। আবার সেঞ্চুরিও সন্নিকটে। সাথে ব্যাটিং করছে একজন টেল এন্ডার। তাই বেশি না ভেবে স্টিভ ভাই মার্ককে বললেন পরের বলটা সিঙ্গেল নেবার চেষ্টা করতে। গুড লেংথে পরা পরের বলটি স্টিভ বুঝেশুনে ডিফেন্স করলেন। বলটি এমন জায়গায় ছিল যেখানে সিঙ্গেল নেবার চান্স ফিফটি ফিফটি।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্ট। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়া ৩৮৮ রানে তাদের নবম উইকেট হারিয়ে ফেলে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রেইগ ম্যাকডারমট নামলেন ঠিকই, কিন্তু ইনজুরির কারণে তাঁকে নাম নিতে হল রানার। সেই রানার হয়ে আসলেন মার্ক ওয়াহ।

আর অপর প্রান্তে ৯১ রানে ব্যাটিং করছিলেন মার্ক ওয়াহর জমজ ভাই স্টিভ ওয়াহ। ইনিংসের ১৩৫.৪ ওভারের সময় সুইপার কাভারে ঠেলে দিয়ে ওয়াহ ব্রাদাররা দুই রান নিলেন। ওয়াহ পৌছে গেলেন ৯৯ রানে। ওই শটটি দুই রান নেয়ার মত মোটেই ছিল না। কিন্তু দুই ভাই একসাথে নামলে যা হয় আর কি!

কিন্তু, পরের বলে যা হল হয়ত তার জন্য প্রস্তুত ছিল না ওয়াহ পরিবার-সহ গোটা অস্ট্রেলিয়া দল। ওভারের বাকি আর দুই বল। আবার সেঞ্চুরিও সন্নিকটে। সাথে ব্যাটিং করছে একজন টেল এন্ডার। তাই বেশি না ভেবে স্টিভ ভাই মার্ককে বললেন পরের বলটা সিঙ্গেল নেবার চেষ্টা করতে। গুড লেংথে পরা পরের বলটি স্টিভ বুঝেশুনে ডিফেন্স করলেন। বলটি এমন জায়গায় ছিল যেখানে সিঙ্গেল নেবার চান্স ফিফটি ফিফটি।

মার্ক আর স্টিভ জমজ ভাই। আবার তাদের মধ্যে এমন কানেকশন আছে যে, একজনের জ্বর হলে আরেকজনের জ্বর হয়। একজনের দাঁতে ব্যাথা হলে আরেকজনের বাদ যায় না। এ যেন দুই দেহ এক প্রাণ। এক অপরের মনের কথা যে খুব সহজেই বুঝত তা বলার জন্য কোন বিশেষজ্ঞ না হলেও চলবে। কিন্তু ঐ মুহূর্তে তা আর হল না।

বলটিতে স্টিভ রান নিতে চাননি। আর অপরদিকে মার্ক রান নেয়ার জন্য অর্ধেক পাড়ি দিয়ে ফেলেন। যে সময় স্টিভের কল পেলেন ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। ফিল্ডার বলটি কুড়িয়ে স্টাম্পের সামনে থাকা ফিল্ডারকে মারলেন। ফিল্ডার স্টাম্প ভেঙে ফেললে, আউট হয়ে যান ক্রেইগ। ফলে স্টিভকে অপরাজিত থাকতে হয় ৯৯ রানে।

যেই মূহুর্তে মার্ক ওয়াহ স্টিভ ওয়াহর রান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত খেয়াল করেছেন, সেখান থেকে মার্ক ওয়াহ (ক্রেইগ ম্যাকডারমেট এর রানার) এর কিছুই করার ছিল না একমাত্র আউট হওয়া ছাড়া। কিন্তু তারপরও সেই পজিশন থেকে আউট না হবার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মাঝ পিচে যখন তিনি ছিলেন তখন ফিল্ডার বল থ্রো করে স্টাম্পের কাছে থাকা ফিল্ডারের কাছ থেকে। তারপরও তাকে রানআউট করার সময় তার এবং ক্রিজের মধ্যে ফাঁক ছিল বড়জোর দুই ইঞ্চি।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কোনদিন ঘটেনি যে এক ভাইয়ের জন্য আরেক ভাই সেঞ্চুরি মিস করেছেন। এর জন্য ঘটনাটি আজও পর্যন্ত বিখ্যাত হয়ে আছে। এই ঘটনার পর স্টিভ ওয়াহ আজও পর্যন্ত মার্ক ওয়াহকে কোন ক্রিসমাস গিফট দেননি। যদিও স্টিভ শিকার করেছে যে ওটা তার দোষ ছিল।

একটা কথা আছে – ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’। মার্ক ওয়াহ সেদিন কোন ভুল না করলেও হয়ত তার প্রায়শ্চিত্ত করেছেন তিনি ১৯৯৯ সালের অ্যাশেজের লর্ডস টেস্টে। কারণ সেই টেস্টে তিনিও আউট হয়েছেন ৯৯ রানে। তাতে হয়ত তৎকালীন অজি অধিনায়ক আর মার্কের টুইন ভাই স্টিভ ভাই সেঞ্চুরি না পাওয়ায় মন খারাপ করেছেন। আর সাথে অনুবাধন করেছেন ৪ বছর আগে তার সেঞ্চুরি না পাওয়াটা তার মতই কষ্ট দিয়েছে তাঁর ভাইকে। কারণ তাঁরা তো একটি ফুলের দুইটি কুড়ি!

স্টিভ আর মার্ক যখন হুইল চেয়ারে বসে বসে তাদের জীবনের শেষ দিন গুলি পার করবেন, তখন সেদিনের স্মৃতিটা আবারও রোমান্থন করবেন ঠাট্টার ছলে। এ নিয়ে গল্প শোনাবেন তাঁদের নাতি পুতিদের। আরও শোনাবেন দুই ভাইয়ের এক জামার গল্প। যেমনটা বর্তমান সময়ে করেন, কোনো সাক্ষাৎকারে।

ভাই ভাইয়ের জন্য অনেক মহান কিছু করে। তা যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকে। ক্রিকেট মাঠে দুই ভাইয়ের এক বলের ভুল বোঝাবুঝি টাও একই ভাবে স্মরণীয় থেকে লেখা হয়ে গেছে ইতিহাসে। তবুও ভাই তো ভাইই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...