আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে ল্যাঙ্গুয়েজ। এইটা সকল ক্ষেত্রেই।
যার নিজস্ব ল্যাঙ্গুয়েজ (আইডেনটিটি) নাই তার আসলে কিছুই নাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম নিয়েও আমি এই কথা বলি যে, এদের কোন ল্যাঙ্গুয়েজ স্থায়ি হয় নাই।
ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাগ্রেসিভ। পাকিস্তান দ্রুতগতির বোলার আনছে, এরা আরো দ্রুতগতির বোলার আনবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান আছে, এরা তার চেয়েও হার্ড হিটার খুঁজে বের করবে। দলে দরকার থাকুক বা না থাকুক, অ্যাগ্রেসিভনেসের জায়গাটা এরা সবসময় ধরে রাখার চেষ্টা করে।
সাউথ আফ্রিকা কনফিউজড। দল জিততে যাচ্ছে অথচ কি করতে হবে এরা কিছুতেই বুঝতে পারে না, শেষ মুহুর্তে হেরে যায়। আবার দল হারতে যাচ্ছে সেইটাও বোঝে না, দেখা যাবে জিতে গেছে। এইটা ওদের দুর্বলতা হইলেও এইটাই ওদের আইডেন্টিটি।
নিউজিল্যান্ড কনসিসট্যান্ট। ওয়ানডেতে দল জিতলেও রান ২৩০ দল হারলেও ২৩০ রান। এর কম বেশি হিসাব ওদের মধ্যে নাই, ওরা এইটাই পারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলবে বিউটিফুল ক্রিকেট। সবসময় দেখা যাবে খেলাটাকে কত আনন্দময় করা যায় সেইটা তাদের ক্রিকেটারদের প্রধান লক্ষ্য। ক্রিস গেইলরা কখনোই ইংল্যান্ডে জন্মাবে না।
ইন্ডিয়াতে একশ কোটি লোক। তার মধ্যে থেকে জীবনেও ওরা বেটার বোলিং এটাক তৈরী করতে পারলো না। ব্যাটিং নির্ভর টীম করাটাই ওদের ক্রিকেটিয় ল্যাঙ্গুয়েজ।
আর পাকিস্তান একটা আনপ্রেডিক্টেবল দল। বিশ্বের সেরা খেলোয়ারদের নিয়ে টীম করলেও এরা সর্বনিন্ম রানের রেকর্ড করে হেরে যেতে পারে।
কোন স্থায়ি ক্রিকেট ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করতে পারে নাই শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশ। তবে মাশরাফির আমলে একটা ল্যাঙ্গুয়েজ দাঁড়াইতেছিল, ‘ধরে দিবানি’।
মাশরাফির দলটা ধরে দিবানি বলে খেলতে নামলে দুনিয়ার যে কোন দলকে হারায়ে দিতে পারতো। এইটাকে আমি বলি ইমোশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ; যেইটা নাইন্টিসেভেনের আকরাম খানের দলে ছিল। বাট ওই ল্যাঙ্গুয়েজটা আমরা ধরে রাখতে পারি নাই।
এই ল্যাঙ্গুয়েজটা নার্সিং করার দরকার ছিল।
ক্রিকেটে দল জিতবে কিংবা হারবে। টানা ২০ ম্যাচ হারলে কিংবা জিতলেও কোন লাভ ক্ষতি নাই যদি নিজেদের একটা ল্যাঙ্গুয়েজ না দাঁড়ায়। কয়েকজন দক্ষ খেলোয়ারের দক্ষতা কিংবা পিচের সুবিধা ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে হারায়ে দেয়া যেতেই পারে তাতে কি যায় আসে? ওইখানে আমাদের ক্রিকেটটা কোথায়?
সাকিব তামিম বেশিদিন থাকবে না, পিচে সুবিধাও সবখানে পাওয়া যাবে না, ফলে কিছু ম্যাচ জেতার ফলাফল হিসেবে একটা সমর্থন পাওয়া যেতে পারে, তাতে তো টীম দাঁড়াবে না।
টীম দাঁড় করাইতে হইলে আগে টীমের ল্যাঙ্গুয়েজ দাঁড় করাইতে হবে। তারপর দল হারুক বা জিতুক, সাপোর্টাররা ম্যাচটা এনজয় করবে। খেলা আনন্দের জন্য, জেতার জন্য নয়।
বিসিবির কাছে অনুরোধ, ম্যাচ জয়ের পিছে দৌড়ানোর তো দরকার নাই, নিজেদের ক্রিকেটটা যেন এনজয় করতে পারি সেই ল্যাঙ্গুয়েজটা দাঁড় করান।
আমাদের বোর্ড সভাপতি কিন্তু তার নিজের একটা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রতিষ্ঠা করে ফেলছেন। দল জিতলে তিনি বলবেন, ‘আমি তো আগে থেকেই জানতাম’, আর দল হারলে বলবেন, ‘আমি তো কিছু বুঝলাম না।’
তো, ক্রিকেট টীমের ল্যাঙ্গুয়েজটা কই?
টিআরপি হাঙরি ক্রিকেটের যুগে জাতীয়তাবাদি মশলা মাখায়ে অল্প সময়ের জন্য উত্তেজনা সৃস্টি করা যায়, বাট সেইখানে তখন আর ক্রিকেট বলতে কিছু থাকে না। এইজন্য আমাদের ক্রিকেটে আনন্দের জায়গায় ঢুকে পরছে রাগ ক্ষোভ ঘৃনা। ক্রিকেট তো এইরকম না।
ডিয়ার বিসিবি, জল অনেকদূর গড়াইছে, এখন ক্রিকেটে মন দেন। ক্রিকেটটা দাঁড়াইলে টিআরপি এমনিতেই আসবে। জয়ও।