তিন ম্যাচ জিতেও এবারের আসরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে ভারত। মূলত প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দশ উইকেট ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আট উইকেটের হারে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় বিরাট কোহলির দল। সেমিতে যাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের জয় পাওয়ায় সব সমীকরণ পাশ কাটিয়ে বাদ পড়ে ভারত।
প্রথম দুই ম্যাচই ভারত খেলেছিলো দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারে বিরাট কোহলির দল। প্রথম দুই ম্যাচে তথা বিশ্বকাপে ভরাডুবির অন্যতম কারণগুলো কি হতে পারে সেগুলো নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।
- প্রথমে ব্যাট করা
নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান দুই দলের বিপক্ষেই প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত। আর এই দুই ম্যাচেই টপ অর্ডারে ব্যর্থ ছিলো দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১০ রানের দলীয় সংগ্রহের মাঝে ৪৭ বলে ৭৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন রোহিত। তবে টানা দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরে ততক্ষণে রান রেটের মারপ্যাঁচে পরে ভারত।
ভারতের বোলিং কোচ ভরত অরুন বলেন, ‘ টস জয়টা প্রতিপক্ষকে বড় সুবিধা দিয়েছে। শিশিরের কারণে আগে ব্যাট করা ও পরে ব্যাট করার মাঝে বিস্তর ফারাক দেখা যায়। ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এমনটা হওয়া উচিত নয়। ‘
- শিশিরের প্রভাব
প্রথম দুই ম্যাচে ভারতীয় বোলাররা শিকার করেছে মাত্র দুই উইকেট। আর এই দুই উইকেটই শিকার করেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জাসপ্রিত বুমরাহ। দুবাইতে সন্ধার ম্যাচ গুলোতে শিশির বেশ প্রভাব ফেলেছে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে উইকেট নিতে না পারার কারণে বোলাররা পিছিয়ে পড়ে। আত্নবিশ্বাসের ঘাটতি টাও দেখা যায় মোহাম্মদ শামি, জাদেজাদের মাঝে।
তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখান অশ্বিন। ভরত বলেন, ‘ শিশির একটা কারণ হতে পারে, তবে এমন বাজে পারফরম্যান্স মোটেও কাম্য নয়। আমরা আরো ভালো লড়াই করতে পারতাম। আমরা আরো ভালো ব্যাট করতে পারতাম। ‘
- আইপিএল
আরব আমিরাতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শেষ হওয়ার মাত্র ২ দিন পরেই বিশ্বকাপ দলে যোগ দেয় ভারতীয় খেলোয়াড়েরা। লম্বা সময় বায়োবাবলে থাকায় শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তি অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে ভারতকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর বুমরাহ বলেছিলেন, ‘মাঝে মাঝে বিরতির প্রয়োজন।’
কোচ ভারত অরুণ মনে করেন আইপিএল ও বিশ্বকাপের মাঝে কিছুটা বিরতি থাকলে খেলোয়াড়েরা বিশ্রাম নিয়ে নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে পারতো। তিনি বলেন, ‘টানা ৬ মাস খেলার মধ্যে থাকা খুব কঠিন। আমার মনে হয় এটা খুব প্রভাব ফেলেছে।’
- অধিক সন্নাসীতে গাঁজন নষ্ট
এবারের আসরে ভারতের হয়ে পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। দুবাইতে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলের চতুর্থ শিরোপা জয়ের পর সবারই প্রত্যাশা ছিলো ধোনি থাকায় দল বাড়তি অনুপ্রেরণা পাবে। খোদ বিরাট কোহলিও বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন ধোনিকে পেয়ে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ধোনির নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ভারত। এরপর ২০১১ সালে ভারতকে ওয়ানডে বিশ্বকাপও এনে দেন ধোনি।
সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর অবশ্য দলে ধোনির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হেড কোচ, ব্যাটি কোচ, বোলিং কোচদের পাশে বসে ধোনি কি কাজ করেন সেদিক উদ্দেশ্যে করেই মূলত গম্ভীর এমন মন্তব্য করেন। দিনশেষে এতো বড় বড় নাম দলের সাথে থাকার আদৌ কি কোনো লাভ হয়েছে?
- টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে কোহলির বিদায়
বিশ্বকাপের আগেই জানান দিয়েছিলেন এই বিশ্বকাপই অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির শেষ বিশ্বকাপ। ২০১৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির থেকে অধিনায়কত্ব নিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিরাটকে। টেস্টে পাশাপাশি সাদা বলের ক্রিকেটেও ভারত বেশ দাপুটে পারফরম্যান্সই দিচ্ছিলো। তবে দল হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিতে না পারায় কিনা বিশ্ব আসরে সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হয় বিরাট কোহলির দল।
বিশ্বকাপের আগে বিরাটের অধিনায়কত্ব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তে সাবেক ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত দলকে অপ্রস্তুত ও বাকিদের আবেগপ্রবণ করে ফেলবে।’