সৌরভ গাঙ্গুলির জন্যে দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা । ব্যাটে বলে সেরা হওয়ার পরও যে তাঁকে ঐ দিনেই দেওয়া হয়েছিল এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা!
গল্পটা শুরু করা যাক। কলকাতার যুবরাজ, মানে সৌরভ গাঙ্গুলিকে কে না চেনে। ব্যাটে বলে দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে তিনি তো ভারতীয় ক্রিকেটকে এটাও শিখিয়েছিলেন কিভাবে মাথা উঁচু করে থাকতে হয়, কিভাবে জবাব দিতে হয়।
অধিনায়ক হিসেবেও অনফিল্ডে সৌরভ গাঙ্গুলি ছিলেন বেশ আক্রমণাত্নক। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন গাঙ্গুলি। ব্যাট হাতেও আক্রমণের ধার বজায় রাখতেন তিনি বহাল তবিয়তেই। তবে মাঝে মাঝে এই অতি আক্রমণাত্মক ব্যাবহার নিয়ে সমস্যায়ও পড়তে হত তাকে। কারণ, তাঁর এই আক্রমণ যে মাঝে মাঝে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে না পেরেও প্রকাশ পেয়ে যেত। আর বলাই বাহুল্য, তাতে তাঁকে সমস্যা পোহাতে হত বেশ!
এরকমই একটা ঘটনা ঘটে এমন এক ম্যাচে, যে ম্যাচ ছিল তাঁর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে উদ্ভাসিত এক ম্যাচ। যে ম্যাচে তিনি শুধু ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেই ক্ষান্ত হননি, বল হাতেও নিয়েছিলেন ৫ উইকেট! ম্যাচটি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ভেন্যু ছিল কানপুর, তারিখ ছিল ১১ ডিসেম্বর, ২০০০!
জিম্বাবুয়ের ভারত সফরের চতুর্থ ওয়ানডে ছিল। টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। অজিত আগারকার আর গাঙ্গুলির বোলিং তোপে ৪৫.৪ ওভারে মাত্র ১৬৫ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। নিজের বোলিং কোটার পুরো ১০ ওভার শেষ করে গাঙ্গুলির বোলিং ফিগার দাঁড়ায়- ৫/৩৪!
প্রথম ইনিংসের মত শেষটাতেও গাঙ্গুলি নিজের ঝলক অব্যাহত রাখেন। রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাট চালানো গাঙ্গুলী ৬৮ বলেই করে ফেলেন ৭১ রান। এই রানের আক্রমণাত্মক দিকটা বোঝাতে হলে একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট- ১২ চার ও ১ ছয়!
এখন, একজন ক্রিকেটার একটা ম্যাচে ব্যাট হাতে খেলেছেন ৭১ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস, বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট! স্বাভাবিক ভাবেই এই ম্যাচের ম্যাচ সেরা কে তা নিয়ে নিশ্চয়ই আপনার সন্দেহ থাকার কথা নয়! সৌরভ গাঙ্গুলি, তাই তো? সেটা হয়েছিল ঠিক, কিন্তু সৌরভের ঠোঁটে কোনো হাসি ছিল না।
ম্যাচ চলাকালীন সৌরভ গাঙ্গুলি আইসিসির আচরণবিধি ভঙ্গ করেন। ম্যাচ চলার সময় জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান মুলেকি নিকালার এলবিডব্লু আবেদন করার সময় অন ফিল্ড আম্পায়ার চান্দু শাথের সাথে অসদাচরণ করেন তিনি।
ম্যাচ রেফারি ব্যারি জারমানের চোখ এড়ায়নি এ ঘটনা। ম্যাচ শেষে সৌরভকে ডাকেন তিনি, শুনিয়ে দেন এক ওয়ানডে ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সহ সিরিজের পর আরো দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।
তবে এই শাস্তি শুধু সৌরভকেই দেওয়া হয়নি। মাঠে সৌরভের সাথে উইকেটরক্ষক বিজয় দাহিয়াও অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন, একই ঘটনাতে। বিজয়কেও দেওয়া হয় এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।
এই দুজনই সিরিজের শেষ ওয়ানডেটা মিস করে আর রাহুল দ্রাবিড় প্রথমবারের মত ভারতের হয়ে অধিনায়কত্ব করতে মাঠে নামেন।
নটে গাছটি মুড়োল, গল্পটি শেষ হল। ব্যাটে বলে দারুণ কীর্তি গড়েও জুটেছিল এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা। দিনটা সৌরভ ভোলেন কি করে!