ক্রিকেট মাঠে নয়, আর্শিন কুলকার্নির বরং ডাক্তারই হওয়ার কথা ছিল। এমনিতে মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের কুলকার্নি পরিবারে ডাক্তারের ছড়াছড়ি। পরিবারের কর্তা চিকিৎসক অতুল কুলকার্নি নিজের মেয়েকে ডাক্তার বানালেন। তবে, চাইতেন ছেলে আর্শিন যেন গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানোর পরিবর্তে তাঁর অপূর্ন স্বপ্ন পূরণ করে।
আসলে, বাবা অতুল চাইতেন ক্রিকেটার হতে। তবে, শেষমেশ পারিবারিক পেশা ডাক্তারিই বেছে নিয়েছিলেন। তাই, ছোট থেকেই ছেলেকে স্থানীয় ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেই ছেলেটাই আজকের আর্শিন কুলকার্নি।
আর্শিন মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব – ১৪ দলে স্থান করে নেয়। তখন একদিন স্থানীয় কোচিং ক্যাম্পে তাঁর দুই প্রশিক্ষক সেলিম খান ও তিলক অতুলকে ডেকে বললেন, ক্রিকেট প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে গেলে শোলাপুর ছেড়ে আর্শিনকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরের পুনেতে গিয়ে থাকতে হবে।
এদিকে ছেলেটি পড়াশোনাতেও ভালো। তাই, দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় সেদিন সন্ধ্যায় কুলকার্নিদের বাড়িতে পারিবারিক আলোচনা সভা বসলো। পরিবারের সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিলেন যে ছেলেটিকে পুনে পাঠানো হবে। তবে, স্থায়ীভাবে নয়।
সপ্তাহে সপ্তাহে তাকে শোলাপুরে ফিরতে হবে। কারণ, সে শোলাপুরের সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্র। ডাক্তার কুলকার্নি স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে ছেলের জন্য প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ছুটির বন্দোবস্ত করেছিলেন।
পুনেতে একটা ঘর ভাড়া নেওয়া হল। স্থির হল যে ছেলেটি পুনেতে ঠাকুমার সাথে থাকবে। প্রতি বুধবার ছেলেটি ঠাকুমার সাথে পারিবারিক গাড়িতে চেপে পুনে যাবে। আর, রবিবার ম্যাচ খেলে রাতে ফিরে আসবে। অনূর্ধ্ব – ১৯ পর্যন্ত এভাবেই চলতে লাগলো।
লেগ স্পিনিং – ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করা আর্শিনের উচ্চতা ও শারীরিক গঠন দেখে কোচরা তাঁকে লেগ স্পিন ছেড়ে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিং শুরু করার পরামর্শ দিলেন।
পেস বোলার হিসেবে অল্পবিস্তর ক্রিকেট খেলা ঠাকুরদা তাঁকে সুইং বোলিং নিয়ে পরামর্শ দিতেন। কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস ও হার্দিক পান্ডিয়াকে আদর্শ মেনে চলে আর্শিনের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে গেল।
চলতি অনূর্ধ্ব – ১৯ বিশ্বকাপে নজর কেড়ে আর্শিন কুলকার্নি জানান দিচ্ছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের তারকা হয়ে উঠতে পারার সক্ষমতা তাঁর আছে। বাকিটা বলে দেবে সময়।