কে এখন অস্ট্রেলিয়া সামলাবেন!

টিম পেইনের এই পদত্যাগের ঘোষণায় অস্ট্রিলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডকে ভাবতে হচ্ছে এখন আবার নতুন করে অধিনায়ক নিয়ে। এই মুহূর্তে নতুন এক অধিনায়ক খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য এক বিষয় হবে। দলের মানসিকতায়ও আসতে মৃদু ধাক্কা লাগবার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তবুও তো বেছে নিতে হবে অধিনায়ক। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের কাছে রয়েছে তিন বিকল্প।

ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদার সিরিজ অ্যাশেজ। যে কোন ক্রিকেট বোদ্ধা অন্তত অকপটেই স্বীকার করে নেবেন পুরো বিশ্ব না হোক অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের জন্যে হলেও এই টেস্ট সিরিজ মর্যাদার, এই সিরিজ আত্মসম্মানের।

এবারের অ্যাশেজ শুরু হতে বাকি আর সপ্তাহ তিনেক। অস্ট্রলিয়ার ব্রিসবেনের বিখ্যাত গাবা স্টেডিয়ামে শুরু হবার কথা প্রথেম টেস্টের। আগামী মাসের আট তারিখে দিনক্ষণ সব নিশ্চিত। দলও হয়ে গেছে ঘোষণা। বাকি শুধু ঐতিহ্যের আরো একবার পরিক্রমা।

কিন্তু খানিক বিপাকে পড়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড। খানিক বললে অবশ্য ভুলই বলা হয়। বেশ বড়সড় একধাক্কাই পেতে হলো তাঁদেরকে। পুরোনো এক কেচ্ছা হঠাৎ করে আবার ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনাটা অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইনকে ঘিরে।

পুরোনো এক আপত্তিকর বার্তালাপ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। টিম পেইনের সেই বার্তালাপ নিয়ে বিচারও হয়েছে দায়মুক্তিও পেয়েছিলেন বছর চারেক আগে। নতুন করে আবার অ্যাশেজ সন্নিকটে থাকা অবস্থায় এমন ঘটনা সৃষ্টি করেছে বিব্রতকর এক পরিস্থিতি। মানসিক ভাবেও কিছুটা মর্মাহত হয়েছেন পেইন। তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে।

ঐতিহ্যবহনকারী মর্যাদার অ্যাশেজে এমন এক আপত্তিকর ঘটনার দায়ভার নিয়ে দলকে বিপদে ফেলতে চাননা টিম পেইন। অতীতের ভুল নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে জেগে উঠলে তা মানসিক অস্বস্তির সৃষ্টি অবশ্যই করে। তা যদি আবার ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তবে তা আরো বেশি পীড়াদায়ক এক বিষয়ে পরিণত হয়। টিক এমন পরিস্থিতিই পার করছেন টিম পেইন। তাই নিজেকে অব্যাহতি দিয়েছেন অধিনায়কত্ব থেকে।

কিন্তু টিম পেইনের এই পদত্যাগের ঘোষণায় অস্ট্রিলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডকে ভাবতে হচ্ছে এখন আবার নতুন করে অধিনায়ক নিয়ে। এই মুহূর্তে নতুন এক অধিনায়ক খুঁজে বের করা বেশ কষ্টসাধ্য এক বিষয় হবে। দলের মানসিকতায়ও আসতে মৃদু ধাক্কা লাগবার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু তবুও তো বেছে নিতে হবে অধিনায়ক। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের কাছে রয়েছে তিন বিকল্প।

  • প্যাট কামিন্স

অ্যাশেজ দলের সহ-অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। সাধারণ দৃষ্টিতে তাঁরই টিম পেইনের স্থলাভিষিক্ত হবার কথা। বিশ্বব্যাপি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে কামিন্সের। তাঁর পাশাপাশি রয়েছে দলকে নেতৃত্ব দেবার গুনও। বিশ্বের বাকি সব ক্রিকেট সমর্থকদের থেকে শুরু করে দেশীয় দর্শকদেরও পছন্দের অন্যতম একজন খেলোয়াড় তিনি। সুতরাং হয়ত তাঁকে দেখা যেতে পারে অধিনায়কের দায়িত্বে।

কিন্তু এক পেস বোলার হিসেবে তিনি অধিনায়কত্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো সমানভাবে পর্যালোচনা করতে সক্ষম হবেন কি না সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। স্বভাবতই পেস বোলার হিসেবে তাঁকে একটানা দশ ওভার পর্যন্ত বল করতে হবে, সুতরাং ক্লান্তিও স্বাভাবিক। তখন দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব কিছু মাথায় রেখেই হয়ত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট বিবেচনায় রাখবেন প্যাট কামিন্সকে।

  • স্টিভ স্মিথ

অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে বল টেম্পারিং এর দায়ে ক্রিকেট থেকে ছিলেন প্রায় এক বছর দূরে। সাজা হিসেবে। তাঁর সাথে যুক্ত হয়েছিল অধিনায়কত্বের নিষেধাজ্ঞা বছর দু’য়েকের জন্য। সেই স্টিভ স্মিথের উপর কি আবার ভরসা করতে চাইবে টিম অস্ট্রেলিয়া?

কিন্তু তিনিও হতে পারেন টিম পেইনের পরিবর্তে অনন্ত এই সিরিজের অধিনায়ক। ২০১৫ সালে মাইকেল ক্লার্কের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর যেন অন্য এক স্মিথে পরিণত হন তিনি। দায়িত্ববোধ থেকেই নিজের ব্যাটিং-কে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়।

তাঁকে আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নেবার সিদ্ধান্ত যদি টিম অস্ট্রলিয়া নিয়েই ফেলে তাতে খুব অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে টিম অস্ট্রেলিয়া কি ফিরবে আবার তাঁদের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়ের অধিনায়কের কাছে?

  • মারনাস লাবুশানে 

বেশ আগে থেকেই মারনাস লাবুশানের নাম ভেসে আসছিল অস্ট্রেলিয়ার আগামী দিনের নেতৃত্বদানকারীদের তালিকায়। তবে কি এবারই অধিনায়কের ব্যাটন হাতে দেখা যেতে পারে লাবুশানেকে?

দেখা যেতেই পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রথম বাঁধা হতে পারে তাঁর অভিজ্ঞতা। টেস্ট অভিষেক হয়েছে ২০১৮ সালে। খেলেছেন মোটে ১৮টি টেস্ট ম্যাচ। তাছাড়া মাঠে তাঁর ব্যক্তিগত আচার-আচরণও হতে পারে প্রশ্ন। সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধাদের নিন্দার মুখোমুখি হতে হয়েছে লাবুশানেকে বহুবার।

তাছাড়া টিম পেইন প্রশংসা করেছেন লাবুশানেকে। তাঁর মতে লাবুশানের মধ্যে রয়েছে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য। কিন্তু মারনাস লাবুশানে নিজেও জানেন যে তিনি তাঁর আচরণগত পরিবর্তন না আনতে পারলে অধিনায়কের মত এমন গুরুদায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ হবেন। হয়ত এবার সুযোগ পেলে তিনি পরিবর্তন করে নেবেন নিজেকে। হাজির হবেন একজন নতুন মারনাস লাবুশানে হিসেবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...