দুর্ভেদ্য দূর্গের সুড়ঙ্গ চেনা ইংল্যান্ডের

এই পৃথিবীর মরা ঘাসে তবু মুক্তির ফুল ফোটে। গানের এই কথাগুলোকেই সেই সময় সত্য প্রমাণ করেছিল বাংলাদেশ ওয়ানডে দল। মাশরাফি বিন মর্তুজার স্পর্শে দেশের ক্রিকেটে ফুল ফুটেছিল। অন্তত ঘরের মাঠটায় এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ হয়ে উঠল অপ্রতিরোদ্ধ এক পরাশক্তি। তবে সেই দুর্গে শেষবার ভাঙন ধরাতে পেরেছিল ইংলিশরা, সাত বছর পর আবারো একই পুনরাবৃত্তি।

গল্পের শুরুটা ২০১৪ সালে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তখন জয় বলে কোন শব্দই যেন নেই। ম্যাচের পর ম্যাচ হেরে চলেছে একটা দল। রঙিন পোশাকের ক্রিকেটের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেয়া হল মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। তিনি মরা ঘাসে মুক্তির ফুল ফোটালেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে জিততে শুরু করলো বাংলাদেশ।

সাফল্য আসলো ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এরপর ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিন সিরিজ জয়। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া হোঁচট খেল, ক্রিকেটের পরাশক্তিরা নড়েচড়ে বসল একবার। অন্তত ঘরের মাঠে মাশরাফিদের আর হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই।

ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের জয়ের অভ্যাসটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। জয় আসতে শুরু করেছিল বিদেশের মাটিতেও। সে সব যাই হোক, আজকের মূল আলোচনা ঘরের মাঠ নিয়ে। যেখানে সাত বছর পর কোন ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।

আর সাত বছর আগে, ২০১৬ সালে এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই সিরিজ হারতে হয়েছিল। এরপর এই লম্বা সময়ে ঘরের মাঠে কেউই বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারাতে পারেনি। ২০১৫ সালের পর আসলে দুই দেশের ক্রিকেটেই বিরাট পরিবর্তন এসেছে।

বাংলাদেশ হয়ে উঠছিল ওয়ানডে ফরম্যাটের শক্ত দল। যারা বিদেশের মাটিতেও ভালো খেলতে শুরু করেছিল।  ওদিকে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছেই হেরে বাদ পড়া ইংল্যান্ড নিজেদের নতুন করে ঢেলে সাজায়।

তাঁদের নজর তখন বিশ্বকাপের দিকে। ঠিকই ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা গেছে ইংল্যান্ডেই। শুধু বিশ্বকাপ জয়ী দলই নয়। এই ইংল্যান্ড দলকে বলা হচ্ছে সাদা বলের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম শক্তিশালী দল।

যেই দলটায় প্রায় প্রতিটা ক্রিকেটার ম্যাচ উইনার। যে কোনদিন যে কেউ দলটাকে জয়ে এনে দিতে পারে। দলের বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার থাকায় ব্যাটিং গভীরতাও থাকে অনেক। এছাড়া এই মুহূর্তে ক্রিকেট দুনিয়ার আর কেউই ইংল্যান্ডের মত আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে পারে না। ফলে এই ইংল্যান্ডকে হারানো ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি।

তবুও খেলাটাতো মিরপুরে। যেখানে গত সাত বছরে কেউ সিরিজ জিতে দেশে নিয়ে যেতে পারেনি। ওদিকে বাংলাদেশও ধীরে ধীরে নিজেদের দল গুছিয়েছে। এমন কি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জেতার ইতিহাসও গড়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া কিছুদিন আগেই ভারতকে হারানোর রেকর্ডও তো আছে। ফলে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সিরিজ জয়টা অসম্ভব ছিল না। সেটার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও। অল্প পুঁজি নিয়েও ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের দারুণ ভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশের বোলারদের। বোর্ডে আর অল্প কিছু রান না থাকার আক্ষেপ নিয়ে শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।

তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে করেছে তিনশোর বেশি রান। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ পাত্তাই পায়নি ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে।

ফলে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের দুর্ভেদ্য দুর্গ যেন সহজে ভেদ্য হয়ে ওঠে ইংল্যান্ডের কাছে। সাত বছর আগে তাঁরা যে কাজটা করেছিল। সাত বছর পরও সেটা ইংলিশরা করেছে হেসে খেলেই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link