টি-টোয়েন্টিতে কেন আফগানিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ!

আফগানিস্তান দলের ক্রমশ উন্নতি প্রচণ্ড রকমের ঈর্ষণীয়। স্কটল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশে দল হেরেছিল ছয় উইকেটের বড় ব্যবধানে। আবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সেই স্কটল্যান্ডকেই ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান দল। টি-টোয়েন্টির মুখোমুখি লড়াইয়েও তাঁরা বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে। দু’দল ছয়বার মুুখোমুখি হয়েছে, সেখানে আফগানিস্তান চারটিতেই জিতেছে, বাংলাদেশ জিতেছে বাকি দু’টিতে।

আফগানিস্তান দলের ক্রমশ উন্নতি প্রচণ্ড রকমের ঈর্ষণীয়। স্কটল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশে দল হেরেছিল ছয় উইকেটের বড় ব্যবধানে। আবার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সেই স্কটল্যান্ডকেই ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান দল। টি-টোয়েন্টির মুখোমুখি লড়াইয়েও তাঁরা বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে। দু’দল ছয়বার মুুখোমুখি হয়েছে, সেখানে আফগানিস্তান চারটিতেই জিতেছে, বাংলাদেশ জিতেছে বাকি দু’টিতে।

টি-টোয়েন্টিতে তাঁদের অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়ছে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) ও পাকিস্তান সুপার লিগে (সিপিএল) এক গাদা আফগান ক্রিকেটার অংশ নেন বরাবরই। আর সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ থাকে হাতেগোনা।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) বাংলাদেশেরে চেয়ে আফগানিস্তানের অংশগ্রহণ থাকে বেশি। তিনি আফগান ক্রিকেটার – মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান আজকাল প্রায় প্রতিটা আইপিএলই খেলেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশে থেকে আইপিএলে থাকেন কেবল সাকিব আল হাসান আর মুস্তাফিজুর রহমান।

তো আর বলে না দিলেও চলে যে – বাংলাদেশের চেয়ে এখন আফগান ক্রিকেটারদের চাহিদা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশি। টি-টোয়েন্টির দক্ষতার বিচারেই আফগান ক্রিকেটাররা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আফগান রুকিরা বেশি প্রাধান্য পান।

আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) ক্রিকেট পরিচালক অ্যান্ডি মোলস মনে করেন, আফগান ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টির ম্যাচ উইনার। তিনি বলেন, ‘আফগান ক্রিকেটাররা প্রমা করেছে এই ফরম্যাটে ব্যাট কিংবা বল হাতে তারা ম্যাচ উইনার। আমাদের খেলোয়াড়রা আস্তে আস্তে পরিপক্ক হচ্ছে। ওদের প্রতিভা তো আছেই, এখন ওদের সক্ষমতা অনুযায়ী খেলার আত্মবিশ্বাসও বাড়ছে। ক্রিকেটের প্রশ্নে ওরা সব সময়ই খুব ইতিবাচক।’

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ঘাটতির জায়গা কয়েকটি। একজন রহস্য স্পিনার তৈরি করতে না পারার ব্যর্থতা তো আছেই, এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই যিনি নিয়মিত ১৪০-এর ওপর স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করতে পারেন। কিংবা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোটার গতির কোনো ফাস্ট বোলার নেই। টি-টোয়েন্টিতে এই ফ্যক্টরগুলো না থাকলে খুব মুশকিল।

সিপিএলে ১৫ বছর বয়সী অনভিষিক্ত আফগান স্পিন সেনসেশন নূরের দল পাওয়াটাই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের পার্থক্য বোঝার জন্য যথেষ্ট। অবশ্য, খুব বেশি ভেতরে ঢুকতে হবে না, ২০ ওভারের ক্রিকেটে দু’দলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি লড়াইগুলো দেখলেই চলবে।

সাকিব আল হাসান-সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ক্রিকেটারের কোচিং করানো মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মনে করেন, আফগান বোলাররা নিজেদের দেশের প্রাণহীন উইকেটে বোলিং করতে অভ্যস্ত। সেটাই তাঁদের স্কিল বাড়াতে সাহায্য করে।

বিপিএলে লম্বা সময় কোচিং করানো এই কোচ বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যেসব আফগান ক্রিকেটার খেলছেন, তাদের অধিকাংশই বোলার। তারা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের চাপে রাখে। হয় উইকেট পায় সময় মত, কিংবা খুব মিতব্যয়ী বোলেং করে। তারা আমাদের বোলারদের মত নয়। আমি মনে করি, ওরা দেশে যে মানের উইকেট পায় সেটাই ওদের এই উত্থানের কারণ। ওখানে উইকেট খুবই ফ্ল্যাট হয়, ওই উইকেটে ভাল করাটা ওরা শিখে নেয়। ফলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ভাল করে। এজন্যই তারা আমাদের মত নয়।’

সালাহউদ্দিন মনে করেন, টি-টোয়েন্টিতে ভাল করার জন্য আনর্থডক্স কিছু দরকার। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা হল, আমাদের বোলারদের মধ্যে বাড়তি কিছু নেই। আমাদের বোলাররা মূলত অর্থডক্স, মানে সাদামাটা। আমাদের ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করতে পারে এমন কেউ নেই। মুস্তাফিজের কিছুটা ডিমান্ড আছে, কারণ ওর স্কিলে কোয়ালিটি আছে। বাকিদের সেটা নেই।’

এক সময় বাংলাদেশ বাঁ-হাতি স্পিনের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। মোহাম্মদ রফিক, আব্দুর রাজ্জাক কিংবা সাকিব এসেছেন। কিন্তু, এরপরে অনেকে আসলেও তাঁরা কেউই এই তিনজনের মত প্রভাব রাখতে পারেননি। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘যদি স্পিনের কথা বলি, তাহলে বলতেই হয় যে তাঁরা খুবই সাধারণ মানের। ব্যাটসম্যানরা সহজেই বুঝে ফেলে। কোনো নতুনত্ব নেই। যথেষ্ট পরিমান বৈচিত্র নেই, ফলে বাইরে তারা সুযোগ পায় না। আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টিতে কার্যকর এমন অনেক খেলোয়াড় আছে। ওরা যে এখানে আমাদের চেয়ে এগিয়ে সেটা না মানার কোনো সুযোগ নেই।’

ব্যাটিয়ের প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিনের দাবি, বাংলাদেশের পাওয়ার হিটিং দক্ষতার অভাব আছে, তাই টি-টোয়েন্টির বাজারে ব্যাটসম্যানরা প্রতিযোগীতা করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাওয়ার হিটিংয়ে যথেষ্ট দক্ষতা নেই। ব্যাটসম্যানদের প্রতিযোগীতা করতে না পারার এটাই মূল কারণ। বিপিএলেও তেমন কাউকে আমরা পাই না। তাই, টপ অর্ডার খেলার মত ব্যাটসম্যানদের বাইরে থেকে আনা হয়। এই সমস্যা ৫, ৬ কিংবা ৭ নম্বর পজিশনেও আছে। কারোরই ফিনিশিং অ্যাবিলিটি নেই। ওরকম শারীরিক সক্ষমতাই নেই। এটা বড় সমস্যা। বাইরের লিগে সুযোগ পেলে সেটা হবে টপ অর্ডারের কেউ। আমাদের টপ অর্ডারে তেমন কেউ নেই।’

টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে ভাল করতে পাওয়ার হিটিংয়ের বিকল্প নেই। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের পাওয়ার হিটিং শিখতে হবে। কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এই দক্ষতা আছে। ও লম্বা, নিচের দিকে ব্যাটি কিংবা ব্যাকফুটে ভাল খেলেন। খেলাটা শেষ করতে পারেন। ও যদি নিজের বোলিংয়ে আরেকটু গুরুত্ব দিত, তাহলে টি-টোয়েন্টিতে দারুণ এক প্যাকেজ হত। এখনো সেটা সম্ভব, সে জন্য বোলিয়য়ে আরেকটু গুরুত্ব দিতে হবে। ভারসাম্য আনার জন্য দলগুলো অলরাউন্ডারদের দিকে বেশি ঝুঁকে।’

সালাহউদ্দিন মনে করেন, টি-টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজের ভাল সম্ভাবনা আছে, যদি তিনি নিজের অস্ত্রাগার আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন। আজকাল মুস্তাফিজ নিজের ইনস্যুইং আর আউটস্যুুইং ডেলিভারিতে বেশ জোর দিয়েছেন, সেখানে সাফল্যও পাচ্ছেন। এর সুবাদে আইপিএলে এখন তিনি বেশ সফল।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ওর ডেডিকেশন নিয়ে প্রশ্ন নেই। ইনজুরি বড় একটা প্রভাব ফেলেছিল। একটা ব্যাপার বুঝতে হবে যে – খেলোয়াড়দের উন্নতি সব সময় ধারাবাহিক ভাবে নাও হতে পারে। এখানে কিছু উত্থান-পতন থাকে। তবে, ওই সময় টিকে থাকতে হবে। এই পর্যায়ে এসে কারো ভরসা হারিয়ে ফেলা ঠিক না। সব সময়ই তারা এমন একটা জায়গায় থাকেন, যার থেকে আরো ভাল করা সম্ভব। ক্যারিয়ারটা একটা বাঁশের মত, যেটা বেয়ে উপরে উঠতে হবে। আর এই বাঁশের পুরোটা মসৃন নয়। ফলে, উন্নতি হতে হতে এক পর্যায়ে বাঁধা আসবেই। ওই পরিস্থিতিটা মোকাবেলা করতে হবে।’

মুস্তাফিজের ব্যাপারটা দারুণ ব্যাখ্যা করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ধরেন একজন ব্যাটসম্যান শুধু ড্রাইভ আর পুল করতে জানে। এই দু’টো শট দিয়েই রান করেন। একদিন খেই হারিয়ে ফেললেন। কারণ, তাঁর হাতে আর কোনো অপশন নেই। তখন সে শিখে নেবে কিভাবে কাট করতে হয়, কি করে ফ্লিক করতে হয়। এখানে একটা একটা করে শিখতে হয়, এটাই নিয়ম। মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। না, শেখার আগ পর্যন্তও তাঁকে পারফর্ম করতে হবে। সে এখন সেটাই করছে। আমি আশাবাদী যে সে শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। ওই ক্ষুধা তাঁর মধ্যে দেখেছি। ওর ভেতরে কিছু একটা আছে। তাই, ও আর কখনো আইপিএল খেলতে পারবে না – সেটা বলা যায় না। তবে, বাকিদের জন্য এটা কঠিন কাজ, কারণ তাঁদের বিশাল পরিবর্তন আনতে হবে।’

– ক্রিকবাজ অবলম্বনে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...