ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট মানেই ক্রিকেটের আলো জ্বলমলে এক দুনিয়া। বড় বড় তারকাদের সাথে মেশার সুযোগ, বর্নিল অভিজ্ঞতা আর বিশাল অংকের অর্থের হাতছানি। তবে, এই আলো জ্বলমলে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অন্ধকার দিকও আছে।
একই পজিশনে একাধিক সেরা খেলোয়াড় থাকায় প্রতিযোগিতা হয় ব্যাপক। ফলে নিজেকে প্রমাণের আর ভরসার প্রতিদান দেয়ার পাহাড়সম চাপ থাকে মাথার উপরে।
সেই চাপকে জয় করতে পারলে সহজ হয় পারফর্ম করা, তবে লিটন দাস পারেননি তেমন কিছু করতে। তাই তো ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগ, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) কিংবা সব শেষ গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ভক্ত-সমর্থকদের বিশাল প্রত্যাশা সঙ্গী করে এসব টুর্নামেন্টে খেলতে গেলেও নামের সাথে সুবিচার করতে পারেননি লিটন।
কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগের কথাই ধরা যাক; সারে জাগুয়ার্স দলে টেনেছিল লিটন দাসকে। দলটির প্রথম চার ম্যাচের সব কয়টিতেই সুযোগ পেয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে সাকিবের মন্ট্রিয়েল টাইগার্সের বিপক্ষে করেছেন ১১ বলে ৯ রান। পরের ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও তৃতীয় খেলায় টরেন্টো ন্যাশনালসের সাথে করেছেন ২০ বলে ২১।
আর তুলনামূলক দুর্বল মিসিসাগা প্যান্থারসের বিপক্ষে লিটন দাস খেলেছেন ৩০ বলে ২৫ রানের বেমানান ইনিংস। এই ম্যাচে এক চারে ও এক ছয়ের মারে দুই বলে দশ রান করেছেন ঠিকই, কিন্তু বাকি ১৫ রান করতে তাঁর লেগেছে ২৮ বল।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এমন ডট বল খেলা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু। পরের ম্যাচে তাই লিটন দাসের সুযোগ পাওয়া নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এর আগে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন লিটন দাস।
ব্যাট হাতে ৫ বলে ৪ রানে আউট হওয়ার চেয়ে সেদিন তাঁর বাজে কিপিং নজর এড়ায়নি কারোই। দুইবার সহজ স্ট্যাম্পিং মিস করে দলের হার ত্বরান্বিত করেছিলেন তিনি।
যেই সিপিএল দিয়ে বিদেশি লিগে যাত্রা শুরু হয়েছিল লিটন দাসের; সেখানেও নিজের প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেননি তিনি। জ্যামাইকা তালাওয়াসের হয়ে দুই ম্যাচ খেলে ৪২ রান করেছেন, তাও মাত্র ৯১.৩ স্ট্রাইক রেটে। দুইবারই ডান-হাতি পেসারের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছিলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাসের স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর বেশি; সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে সেটা ১২৮। অথচ বিদেশি লিগে সেটা ১০০ এরও কম। পরিসংখ্যানেই এটা স্পষ্ট, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে টিকে থাকতে একটু বেশিই বোধহয় সতর্ক থাকতে চেয়েছেন তিনি।
এজন্য ধীরে খেলতে গিয়ে নিজের উপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি করেছেন তিনি। সেই চাপ থেকে বেরুতে গিয়ে আউট হয়েছেন বারবার।
বাংলাদেশের পোস্টার বয় যদি হন সাকিব আল হাসান, তবে ব্যাটিংয়ের এখন সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা বোধহয় লিটন দাস। এই দুজনে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে একসাথে জ্বলে উঠতে পারলে আনন্দে ভাসতে পারতো পুরো বাংলাদেশ।
কিন্তু, লিটনের ফর্ম উল্টো শঙ্কিত করে চলছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। পুরো টুর্নামেন্টেই নিজের ছায়া হয়ে আছেন এই ওপেনার।
সত্যি বলতে অবশ্য ভিনদেশি লিগগুলোতেই বড্ড অচেনা একটা রূপ ধারণ করেন লিটন দাস। স্বাভাবিক ভাবেই সংশয় জাগে সত্যিই কি এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ল্যাসি ব্যাটার?