কি জানি কিসের লাগি

গতকাল মুশফিক যখন বাইশ গজে নামলেন তখন বাংলাদেশ একটা অথৈই সাগরে ভাসছে। তবে চিন্তার কিছু ছিল না। কেননা মুশফিকুর রহিম তখন তাঁর ব্যাট প্যাড নিয়ে মাঠে নামছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানটা তখনো বাইশ গজে আছেন। মুশফিকের সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো না, তাতে কী বিশাল একটা অভিজ্ঞতার ঝুলি তো তাঁর কাঁধে আছে।

মাহমুদুল হাসান জয় এই টেস্টে ভালো করতে পারেননি। তবে তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশকে একটা ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন। তবে হঠাত করেই এই দুজনের বিদায়ে শেষবেলায় পথ হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তখন টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় আশার নাম মুশফিকুর রহিম। নিজের ৮০ তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তিনি।

মুশফিক সত্যিই লড়াইটা কড়েছেন। যদিও অধিনায়ক মুমিনুল হক কিংবা ইন ফর্ম লিটন দাসও মুশফিকের সাথে লড়াইয়ে যোগ দেননি। তাঁরাও ফিরে এসেছেন দ্রুতই। সেই সময় দিন পার করার বড় দায়িত্ব ছিল মুশির কাঁধে। রাব্বিকে নিয়ে সেটা করে এসেছিলেন তিনি। আজ নতুন করে শুরু করবেন বলে।

যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা ভালো সময় পার করছিলেন না তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা অনেকদিন ধরেই। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজেও ভালো করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটেও সেই নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই চেনা মুশফিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে গতকাল শেষবেলায় মুশফিকের ব্যাট নতুন ভোরের আভাষ দিচ্ছিল।

আজও যতক্ষণ বাইশ গজে ছিলেন মুশফিক অনবদ্য, অকল্পনীয়। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল হক জানিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিক ভাইকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। সত্যিই তো, সতেরো বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা মুশফিককে নিয়ে চিন্তা কিসের। তিনি তো শুধু ভরসার হাত বাড়িয়ে দিবেন।

সবমিলিয়ে মুশফিক পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৯২ মিনিট ব্যাটিং করেছেন। সেটাও অবার গতকাল শেষবেলায় এবং আজ সকালে কঠিন সময়ে। দলেরও বিপর্যয়ের সময়। অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন ১৩৪ বলে। তাঁর ব্যাটিং দেখে কমেন্ট্রি বক্স থেকে মার্ক নিকোলাস প্রশংসা করছিলেন। বলছিলেন মুশফিক নাকি দারুণ পেশাদার।

তবে বেচারা মার্ক নিকোলাস তখনো কথাটা বলে উঠতে পারেননি। এর এক বল পরেই রিভার্স স্যুইপ করে আউট হয়ে আসলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এমন একটা অর্ধশতক পাওয়ার পরপরই একটা আত্মঘাতী শট খেলে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন তিনি। সেই বলটা খেলার সময় মুশফিক তাঁর সতেরো বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালেন না।

এমনও না বাংলাদেশ তখন কঠিন সময়টা পার করে ফেলেছে। তখনো বাংলাদেশের একটা লম্বা পথ পারি দেয়া বাকি। তাঁকে সঙ্গ দেয়ার জন্য অপরপ্রান্তে মেহেদী হাসানও মিরাজও ছিলেন। তাহলে ঠিক কীসের তাড়ায় ছিলেন মুশফিক? আবার নির্দিষ্ট করে এই শটটা কেন খেলতে গেলেন সেই প্রশ্নটাও এখন অনেক পুরনো।

মুশফিকের এই রিভার্স স্যুইপ নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। ক্যারিয়ারে অনেকবার এই শট খেলে নিজের উইকেট দিয়ে এসেছেন। আজ টেস্ট ম্যাচে, দলের এমন পরিস্থিতিতেও মুশফিক আবার একই শট খেলে উইকেট দিয়ে আসলেন। যদিও তিনি এই ব্যাপারে কোন সমালোচনাও সহজ ভাবে নেননা। কেননা এই শট খেলেই নাকি অনেক রান পেয়েছেন তিনি।

তাহলে প্রশ্নটা আসে ঠিক কী কারণে অর্ধশতক পূরণ করার পরই এমন একটা শট খেললেন তিনি। যদি হাফ সেঞ্চুরি করার পর একটা টেস্ট ম্যাচে মুশফিক তাঁর মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন সেটাও তো বিশাল অন্যায়। মুশফিকের মত একজন ব্যাটসম্যান যিনি নিজের ৮০ তম টেস্ট ম্যাচ খেলছেন তিনি মাত্র ৫০ রান করেই মনোযোগ হারান কী করে?

এমনও না যে তখন বাংলাদেশের দ্রুত রান করা প্রয়োজন। তাহলে একটা চার মারা কেন অতি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলো মুশফিকের? উত্তরটা কী মুশফিজ নিজেও জানেন? নাকি মুশফিক রবীন্দ্রনাথের একটা গানের লাইন আওড়াবেন ,’ কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায়।‘

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link