কেন জরুরী শার্দুল!

চার নাকি পাঁচ? – একজন টেস্ট অধিনায়ক কজন বোলারকে নিয়ে মাঠে নামবে সেই বিষয়ে এই তর্ক বহু পুরনো। কেউ বলেন চার তো কেউ বলেন পাঁচ।

টেস্ট জিততে হলে বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট তুলতেই হবে। এই প্রাথমিক সত্যটা জানার পরেও অবাক করার মতো বিষয় টেস্ট ক্রিকেটের গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে যে দুটি দল সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়েছে সেই ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্টিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়া কিন্তু দিনের পর দিন চার স্পেশালিস্ট বোলার খেলিয়ে একের পর এক টেস্ট জিতে গেছে।

লয়েডের দলে ওই চার পেসারের বাইরে যিনি মাঝে মধ্যে পঞ্চম বোলারের কাজটা করতেন তিনি ল্যারি গোমস, ৬০ টি টেস্ট খেলে সাকুল্যে ৪০০ ওভার বল করেছেন। অর্থাৎ টেস্ট প্রতি প্রায় ছয় ওভার এবং ইনিংস প্রতি প্রায় তিন! স্টিভ এর অপরাজেয় দলের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটাই তাই। চার যোগ্য বোলার খেলিয়েই যদি ম্যাচের পর ম্যাচ জিতে যাওয়া যায় তাহলে কেন পঞ্চম বোলার?

সেটারও অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে। আজ এই হাই প্রেসার এবং একের পর এক ম্যাচ খেলে যাওয়ার যুগে হঠাৎ করে ইনিংসের মাঝে কোন এক বোলার চোট পেলে (আর এই দলের চোট পাওয়ার যা হার) বা ফর্ম হারালে পঞ্চম বোলারের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। যেমন হলো সেঞ্চুরিয়নে।

জাসপ্রিত বুমরাহর প্রথম ইনিংসে পাওয়া চোটের কোন প্রভাব বোঝা গেল না শার্দুল এর কার্যকরী বোলিংয়ে। যেটা সহযোগিতা করলো প্রথম ইনিংসে একটা ভদ্রস্থ লিড নিতে। আর ওই লিডটাই ম্যাচের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ালো। আর ঠিক এখানেই লুকিয়ে আছে একটা অদ্ভুত সত্য।

সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে যদি প্রায় ভারতের সমান রান করে দিত আর ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯০ এ অলআউট হতো, সেক্ষেত্রে ম্যাচের ফল কি হতো? যে দলের ওপেনাররা ফেল করলে ব্যাটিং শুরু হয় ছয় নম্বর থেকে সেই দলের পক্ষে পাঁচ ব্যাটার এ খেলাটা কি একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়?

টেস্ট জিততে গেলে যেমন বিপক্ষের ২০টা উইকেট দরকার তেমনি বোলারদের কেও ডিফেন্ড করার জন্য একটা নূন্যতম রান দিতে হবে। প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে দ্বিতীয় ইনিংসে ঋষভের ওই কার্যকরী ইনিংস এবং সঙ্গে অশ্বিন এর সহযোগিতা না থাকলে ম্যাচের ফল উল্টো হলেও হতে পারতো। আর এটা শুধু এখানে নয়, বারবার হয়েছে। পন্থের কার্যকরী কয়েকটা ইনিংসের সঙ্গে কখনো অশ্বিন কখনো ওয়াশিংটন সুন্দর কখনো বা শার্দুল ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে না গেলে বছরের শেষে টেস্টের গ্রাফটা এতটা উজ্জ্বল দেখাতো না।

তাহলে কি দাঁড়ালো? দলে আমার পঞ্চম বোলার ও চাই আবার ষষ্ঠ ব্যাটারও চাই। সেটার উপায় একটাই। দলে এমন একজন খেলোয়াড়কে ভীষণ দরকার যিনি প্রয়োজনে ৪০টা রান ও করে দেবেন আবার সেই সঙ্গে দুটো উইকেট ও এনে দেবেন এবং সবচেয়ে বড় কথা বড় বড় ব্যাটারদের ব্যর্থতা ঢেকে দিয়ে দল কে জয়ের রাস্তা দেখাবেন।

এই জায়গায় দল রবীন্দ্র জাদেজা বা শার্দুল ঠাকুর (এই দুজনের বাইরে কাউকে দেখছি না) যাকেই খেলাক না কেন তাকে নিয়মিত এই কাজটা করে যেতে হবে। তবেই ভারতও জিতবে আবার পূজারা রাহানের শততম টেস্ট খেলার স্বপ্নও পূরণ হবে। দুটোই খুব প্রয়োজনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link