এমন ম্যাচ সেরা হয়ে কী লাভ!

দৃশ্যপট ১

১৫ এপ্রিল, ২০২৩। আইপিএলে লখনৌ সুপারজায়ান্টস আর পাঞ্জাব কিংসের মধ্যকার ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করা লখনৌর দেওয়া ১৬০ রানের লক্ষ্য পাঞ্জাব কিংস টপকে গেল ৩ বল হাতে রেখেই।

বল হাতে ১ উইকেট আর ব্যাটিংয়ে ৪১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে সে ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা।

দৃশ্যপট ২

৩০ এপ্রিল, ২০২৩। এবার চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ। সে ম্যাচে পাঞ্জাবের ভাগ্য ঝুলছে সিকান্দার রাজার উপরে। মাথিশা পাথিরানার করা ম্যাচের শেষ বলে ৩ রান নিতে পারলেই ম্যাচ জিতবে পাঞ্জাব।

এমন টানটান উত্তেজনার মুহূর্তে চেন্নাইয়ের হতাশা আর একই সাথে পাঞ্জাবের উচ্ছ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়ালেন সিকান্দার রাজা। পাথিরানার সে বলে দৌড়ে তিন রান নিয়ে পাঞ্জাবের জয় নিশ্চিত করলেন জিম্বাবুইয়ান এ অলরাউন্ডার।

ম্যাচসেরা, এরপর এক ম্যাচে উইনিং রান। দুটোই যার কাছ থেকে এসেছে, সেই সিকান্দার রাজাকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়ার সাধ্যি কার বলুন! কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এই দুটি ম্যাচের পরের ম্যাচেই তিনি একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন।

শুরুটা হয়েছিল লখনৌর বিপক্ষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পরের ম্যাচেই একাদশে জায়গা হারিয়ে। এরপর চেন্নাইয়ের বিপক্ষে অমন বিস্ময়করভাবে ম্যাচ জেতানোর নায়ক হিসেবে যাকে নিয়ে পাঞ্জাব জয়োৎসব করেছে, সেই সিকান্দার রাজাই বাদ পড়েন পরের ম্যাচে।

আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৬ টি ম্যাচ খেলা সিকান্দার রাজা খুব একটা খারাপ করেননি। ২৫.৬ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ১২৮ রান। সাথে ১৪০.৬৬ ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটটাও তাঁকে নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে রাখবে। এর পাশাপাশি হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ৩ টা উইকেটও।

আহামরি তেমন কোনো পারফরম্যান্স নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশ্বায়নে খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতাটাও বাড়ছে তরতর করে। তাই সিকান্দার রাজার একাদশ থেকে বাদ পড়ার ব্যাপারটা অবাক করা কিছুই নয়।

তবে, বিস্ময়টা তখনই বাড়ে, যখন ম্যাচসেরা হওয়ার পরের ম্যাচেই তিনি বাদ পড়েন, কিংবা প্রায় হেরে যাওয়ার ম্যাচকে ঘুরিয়ে দেওয়ার পরও পরেও একাদশে ঠাই হয় না। কারণ এমন ঘটনা তো আর সচরাচর চোখে পড়ে না।

তবে পাঞ্জাব কিংস ম্যানেজমেন্ট কিছুটা অন্য পথেই হেঁটেছে। মূলত গত ২ ম্যাচের প্রথম একাদশে তাঁরা ৪ বিদেশি কোটাই পূরণ করেনি। কারণটা হচ্ছে, বিদেশিদের জন্য ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার প্রয়োগের নিয়ম হচ্ছে, বিদেশিরা এ ক্ষেত্রে ঠিকই মাঠে নামতে পারবেন।

তবে, সেক্ষেত্রে শুরুর একাদশে সর্বোচ্চ ৩ জন বিদেশি রাখতে হবে দলগুলোকে। আর এই নিয়মের বেড়াজালেই ভিন্ন পরিকল্পনায় শুরুর একাদশে তিন বিদেশি নিয়ে গত দুটি ম্যাচ খেলেছে পাঞ্জাব কিংস।

মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে যেমন ম্যাথিউ শর্ট, লিয়াম লিভিংস্টোন আর স্যাম কারেন প্রথম একাদশে ছিলেন। এরপর ম্যাথিউ শর্টকে সাবস্টিটিউট করে নাথান ইলিসকে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নামিয়েছিল পাঞ্জাব কিংস।

একই ভাবে কলকাতার বিপক্ষে ম্যাচে ভানুকা রাজাপাকশে, লিয়াম লিভিংস্টোন আর স্যাম কারেনকে নিয়ে মাঠে নামে শিখর ধাওয়ানের দল। যাতে করে বোলিং ইনিংসের সময় একজন বিদেশি পেসার ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নামাতে পারে।

ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের প্রয়োগ মানেই মূলত অলরাউন্ডারের গুরুত্ব কমে যাওয়া। কলকাতার ভেঙ্কটেশ আইয়ার এই কথা তো কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে বলেছেন। আর এ কারণেই সিকান্দার রাজা পারফর্ম করার পরও দলে জায়গা পাচ্ছেন না।

এমনকি ম্যাচ সেরা হওয়ার মতো পারফর্ম করার পরও টিম ম্যানেজমেন্টের ভিন্ন ভাবনায় তাঁর একাদশে থাকার জায়গাটা শেষ পর্যন্ত পাকাপোক্ত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে সিকান্দার রাজা আক্ষেপের সুরে তাই বলতেই পারেন, ম্যাচসেরা হয়ে কী লাভ তাহলে!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link