উইকেটরক্ষকরা যখন উইকেটশিকারী

উইকেটরক্ষকদের পুরোটা ক্যারিয়ার সাধারণত উইকেটের পেছনেই কাটে। তবে, ব্যাতিক্রমও আছে।  বেশ কিছু উইকেটরক্ষক আবার গ্লাভস ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য বোলিংও করেছেন! সেই সাথে বল হাতে সফলভাবে উইকেটও শিকার করেছেন বেশ কয়েকজন।

গ্লাভস খুলে বল হাতে নেওয়াটা সহজ কাজ নয়। সেই কঠিন কাজটা করে সফল হয়েছেন, মানে উইকেটরক্ষক থেকে উইকেটশিকারী বনেছেন – এমন কয়েক জনকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)

ক্রিকেট বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষকদের একজন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ব্যাটিং এবং উইকেটরক্ষণের কাজে দুর্দান্ত হলেও বল হাতেও এক উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০০৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ। ভারতীয় দলে ধোনি ছাড়াও উইকেট রক্ষক হিসেবে দীনেশ কার্তিক ছিলেন। দীনেশ কার্তিকের জন্য গ্লাভস ছেড়ে দিয়ে বোলিংয়ে আসেব ধোনি। ৬ ওভার বল করে ট্রাভিস ডলিনকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে উইকেট শিকার করেন তিনি।

২০১১ সালে ইংল্যান্ড সফরে এবং ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বল করেন ধোনি। সেই টুর্নামেন্টে কেভিন পিটারসেন ও মাহেলা জয়াবর্ধনের উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি কিন্তু রিভিউ নিয়ে দু’জনেই বেচে যান। টেস্ট ক্রিকেটেও ধোনি ১৬ ওভার বল করেছেন।

  • অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তার ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় উইকেটের পেছনেই কাটিয়েছেন বেশ সফলতার সাথে। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এক বল করে এক উইকেট লাভ করেন তিনি।

২০১৩ আইপিএলে গিলক্রিস্ট বলেন এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ! মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে খেলায় শেষ ওভারে মুম্বাইয়ের প্রয়োজন ছিল ৫১ রানের অসম্ভব সমীকরণ। শেষ ওভারে বল করতে আসেন গিলক্রিস্ট। প্রথম বলেই হরভজন সিংয়ে তুলে নিয়ে শূন্য গড়ে এক স্ট্রাইক রেটে উইকেট শিকার করে রেকর্ড গড়েন তিনি। উইকেট পাওয়ার পর ওই সময়ের জনপ্রিয় গান ‘গ্যাংনাম স্টাইল’-এর আদলে কোমরও দোলান তিনি।

  • মার্ক বাউচার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

৯৯৯ আন্তর্জাতিক ডিসমিসালের মালিক দক্ষিণ আফ্রিকান এই উইকেটরক্ষক এক টেস্টে ১.২ ওভার বল করে এক উইকেট শিকার করেন। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক হিসেবে মার্ক বাউচারের বেশ সুনাম রয়েছে।

২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট জোন্সে ডোয়াইন ব্রাভোর উইকেট শিকার করেন মার্ক বাউচার। সেই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্রাভো। বাউচারের বলে অ্যাশওয়েল প্রিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রাভো।

  • টাটেন্ডা টাইবু (জিম্বাবুয়ে) 

ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা অংশই কাটিয়েছেন উইকেটের পিছনে। তবে টেস্ট ও ওয়ানডেতে দুই ফরম্যাটেই কিছু সময়ের জন্য বল হাতে নিয়েছিলেন এবং হয়েছিলেন সফলও। এক টেস্টে ৮ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের টাইবু। সেই সাথে ওয়ানডেতে ১৪ ওভার বল করে দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।

খুব অল্প বয়সে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কত্ব শুরু করেন টাইবু। টেস্টের তিনি দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ট অধিনায়ক, আর ওয়ানডেতে তিনি সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কদের তালিকায় আছেন চার নম্বরে। টাইবুই একমাত্র উইকেটরক্ষক যিনি ওয়ানডেতে ১০ ওভারের বোলিং কোটা পূর্ণ করেছেন। ৪২ রানে সেই ম্যাচে দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।

  • সৈয়দ কিরমানি (ভারত)

ভারতের কিংবদন্তীতুল্য  উইকেটরক্ষক হিসেবে পরিচিত সৈয়দ কিরমানি টেস্টে ৩.১ ওভার বল করে এক উইকেট নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি এবং সেবার ভারত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে।

একবার পাকিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টে ম্যাচের ফলাফল ড্রয়ের দিকেই এগুচ্ছিলো। একাদশে থাকা বেশ কয়েকজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানও সেদিন বল করছিলেন। সুনিল গাভাস্কারও সেদিন বল করেছিলেন! কিরিমানি ১৮ রানে ব্যাট করা আজিম হাফিজের উইকেট তুলে নেন।

  • মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা প্র্যাকটিস – কোথাও কখনোই খুব একটা বোলিং করতে দেখা যায়নি মুশফিকুর রহিমকে। অথচ মুশফিক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৫ ওভার বোলিং করেছেন। সেখানে অফ স্পিন বোলিংয়ে একটা উইকেটও পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক।

বিসিবি উত্তরাঞ্চলের হয়ে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) তিনি ১০ ওভার বোলিং করে ২৩ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। তাঁর বোলিংয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মধ্যাঞ্চলের আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link