অতৃপ্ত পরিসমাপ্তি

২০০৫ সালের জুলাই মাসে, বিশ বছরের এক তরুণের মাথায় উঠেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ক্যাপ। ঠিক ১৭ বছর পর আরেকটা জুলাইতে সেই ক্যাপ পুরোপুরি খুলে রাখলেন তিনি। উইন্ডিজ এই ক্রিকেটারের নাম দীনেশ রামদিন। অনিয়মিত, আক্ষেপময় এক ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তির ঘোষণা দিয়ে দিলেন ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে।

মাত্র তেরো বছর বয়সে একজন ফাস্ট বোলার হিসেবে ক্রিকেট জগতে পা রেখেছিলেন দীনেশ রামদিন। কিন্তু কার্টলি অ্যামব্রোস হওয়ার বাসনা ছেড়ে পরবর্তীতে উইকেট কিপিংয়ে মনোযোগ দেন তিনি। কিশোর বয়স থেকেই নিজের ক্রিকেটীয় দক্ষতা দেখাতে ভুল হয়নি তাঁর।

নিজের জন্মস্থান ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি, এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ-১৯ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

আন্তজার্তিক ক্রিকেটে দীনেশ রামদিনের আগমন ঘটে টেস্ট ক্রিকেট দিয়েই। ডানহাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি জাতীয় দলে উইকেট রক্ষকের দায়িত্বটাও সামলাতেন তিনি। কলম্বোতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে ৫৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর কিছুদিনের ব্যবধানে ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রঙ্গিন পোশাকটাও গায়ে জড়িয়েছিলেন রামদিন। 

শুরুর দিকে দীনেশ রামদিন ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। লোয়ার-মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে প্রায় সময়ই রান করেছেন, হয়ে উঠেছিলেন উইন্ডিজের নিয়মিত একাদশের সদস্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭২, ভারতের বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলে ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন রামদিন। কিন্তু বছর কয়েকের মধ্যেই ম্লান হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। অফ ফর্মে থাকা রামদিনকে নিয়েই অবশ্য ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিল ক্যারিবিয়ানরা। 

২০০৯ সালে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন দীনেশ রামদিন কিন্তু টানা ব্যর্থতার কারনে বাদ পড়তে হয় জাতীয় দল থেকে। ২০১১-১২ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে দুইবছর পর আবারও উইন্ডিজ দলে জায়গা করে নেন তিনি। এর পরের তিন চার বছর জাতীয় দলে প্রায় সময়ই ছিলেন দীনেশ রামদিন। কিছুটা অধারাবাহিক হলেও প্রয়োজনের সময় রান করতে দেখা যেত তাকে।  

তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে গড়পরতা ব্যাটিং পারফরম্যান্স দিয়েও টিকে থাকার মূল কারন ছিল দীনেশ রামদিনের চমৎকার উইকেট কিপিং। উইকেটের পিছনে তাঁর সক্ষমতার কারনে নির্বাচকদের কাছে প্রথম পছন্দের উইকেট কিপার ছিলেন তিনি।

ড্যারেন সামির অবসরের পর অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষকের হাতে নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেয়া হয়। নিজের প্রথম টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ এ হারলেও পরে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ভালভাবেই অধিনায়কত্ব শুরু করেছিলেন।

২০১৫ সালে অবশ্য দীনেশ রামদিনকে সরিয়ে জেসন হোল্ডারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সবমিলিয়ে ১৩টি টেস্টে টস করেছিলেন রামদিন যেখানে মাত্র চারটি ম্যাচে জয় পেয়েছিলেন। এছাড়া একটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ক্যারিবীয়দের অধিনায়ক ছিলেন রামদিন। এসময় একটি করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি জিতেছিল দলটি। 

২০১৬ সালের পর থেকেই মূলত একপ্রকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন দীনেশ রামদিন। সেইবছরের মার্চে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, একই বছরের অক্টোবরে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন। এছাড়া ২০১৯ সালে ভারতের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন এই উইকেট কিপার। 

সবমিলিয়ে ৭৪ টি টেস্ট, ১৩৯ টি ওয়ানডে আর ৭১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার পর অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন দীনেশ রামদিন। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন তিনি। এখন পর্যন্ত অবশ্য এই বর্ষীয়ান ক্রিকেটারকে দলে নেয়নি ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কোন ক্লাব।  

একজন সলিড উইকেটরক্ষক এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে দীনেশ রামদিনের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ ছিল না বিন্দুমাত্র। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই প্রতিভার প্রতিফলন পুরোপুরি দেখাতে পারেননি রামদিন। সেই অতৃপ্ততা হয়তো তার নিজের মনেও আছে।

উইন্ডিজ ক্রিকেট তাঁকে মিস করবে না সেটা নিশ্চিত, তবে মনে রাখবে কিছু মুহুর্তের জন্য। মনে রাখবে সেঞ্চুরি করার পর ভিভ রিচার্ডসকে উদ্দেশ্য করে করা সেই সেলিব্রেশনের জন্য।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link