সেকেন্ড বয়দের শক্তিমত্তা

বলতে গেলে ভারতের এই বেঞ্চ শক্তি বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট দেশকেই হারাতে সক্ষম। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে বেঞ্চ শক্তির এই দাপুটে জয়ের মধ্যে দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে আগাম অশনি সংকেত দিয়ে রাখলো ভারত! বিশ্ব আসরে তাদেরকে রুখতে পারবে কি কোনো দল? প্রশ্নটা তোলা রইলো।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলছে ভারতের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচেই ৭ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারী ভারত। এই দলে বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজা, রোহিত শর্মাদের মতো কোনো তারকারাই নেই! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে তাঁরা প্রত্যেকেই এখন ব্রিটিশ ঘাটিতে। একই সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে তাই দ্বিতীয় সারির দল পাঠায় বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)।

তবে, এই দ্বিতীয় সারির দলটা শুধু নামেই! অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান ছাড়াও এই দলে আছেন শ্রেয়াস আইয়ার, পৃথ্বি শ, য়্যুজভেন্দ্র চাহাল, কুলদিপ যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, সুরিয়াকুমার যাদব, ঈশান কিষাণের মতো তারকারা। তাদের নিয়ে গড়া এই দল যেনো মূল দলের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বিশ্বের যেকোনো দলের জন্যই ভারতের এই কথিত দ্বিতীয় সারির দল যে হুমকি হতে পারে সেটার প্রমাণ তাঁরা দেখালেন প্রথম ম্যাচেই। আর লঙ্কানদের এই খর্বশক্তির দলের জন্য শিখর বাহিনীকে ভারতের মূল দলই বলা চলে।

গতকাল (১৮ জুলাই) কলম্বোর প্রেমাদাসায় টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৬২ রান সংগ্রহ করে লঙ্কানরা। লোয়ার অর্ডারে নামা চামিকা করুনারত্নের ৪৩ ছাড়া কেউই পেরোতে পারেননি চল্লিশের কোটা! ভারতের পক্ষে চাহাল, দীপক চাহার ও কুলদীপ নেন ২ টি করে উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পৃথ্বী শ এর ঝড়ে প্রথম ৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে রান পঞ্চাশের বেশি! এরপর দলীয় ৫৮ রানে শ’ ২৪ বলে ৪৩ রানে আউট হন।

দ্বিতীয় উইকেটে অভিষিক্ত ইশান কিষাণ ও ধাওয়ানের ৮৫ রানের জুটি। ভারতের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে মনে হচ্ছিলো পাহাড়সম কোনো লক্ষ্যমাত্রা গুটি কয়েক ওভারেই তাড়া করতে হবে। এরপর কিষাণের ৫৯ রানের পর মানিষ পান্ডে, সূর্যকুমার যাদবদের ব্যাটে ৭ উইকেটের অনেক সহজ পায় ভারত।

একপ্রান্তে শুরু থেকেই ব্যাট করে ৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ধাওয়ান। তখনো ১৩.২ ওভার বাকি ছিলো! লঙ্কান বোলারদের কোনো পাত্তাই দেয়নি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। লঙ্কানদের মূল দলকে একপ্রকার পাড়ার বোলারদের মতো তুলোধুনো করে ভারতের এই দ্বিতীয় সারির দল।

এইতো সিরিজ শুরুর আগেই লঙ্কানদের সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা বলছিলেন ভারত দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়ে নাকি লঙ্কানদের অপমান করছেন! ব্যাপারটা যে হাস্যকর সেটা তো কালকের ম্যাচেই প্রমাব করে দিলো তাঁর লঙ্কাবাহিনী। ভারতের এই দলতো পরে খর্বশক্তির কোনো দলের সাথেও সিরিজ জিততে হিমসিম খেতে হবে এই নব্য লঙ্কান দলকে। আদৌকি এই দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে লড়াই করার মতো শক্তিমত্তা শ্রীলঙ্কার আছে?

কথিত এই দ্বিতীয় সারির দলের সামনে যে প্রথম ওয়ানডেতে এক প্রকার দাঁড়াতেই পারেনি লঙ্কানরা। শুধু শ্রীলঙ্কাই নয় এই স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের যোগ্যতা আর সামর্থ্যের বিচারে বিশ্বের যেকোনো দলকেই হারানোর ক্ষমতা রাখে তারা।

ভারতের শক্তিশালী বেঞ্চ শক্তির প্রভাবটা হারে হারেই টের পেলো লঙ্কাবাহিনী। লঙ্কাবাহিনীর মধ্যে অর্জুনা রানাতুঙ্গাও আছেন অবশ্য! ক্রিকেট বিশ্বও দেখলো ভারতের পাইপলাইন শক্তির আসল রুপ। সম্প্রতি পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড তাদের কাউন্টি দলের বেশিভাগ খেলোয়াড়কে নিয়ে শেষ মূহূর্তে স্কোয়াড সাজায়! মূল দলের প্রায় সবাই ছিলেন আইসোলেশনে।

সেখান থেকে এই দ্বিতীয় সারির দল পাকিস্তানের মূল স্কোয়াডের বিপক্ষে ৩-০ তে ওয়ানডে সিরিজ ছিনিয়ে আনে। অবশ্য ইংল্যান্ডের সেই বেঞ্চ শক্তির হিসেবে ভারতের কথিত এই দ্বিতীয় সারির স্কোয়াডকে আমি মূল দলের চেয়ে কোনো অংশেই কম দেখি না। প্রতিভা, যোগ্যতা, সামর্থ্যে আর ঘরোয়া ক্রিকেট সহ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) বিপুল অভিজ্ঞতাই মূলত এই দলকেও করেছে অনেকটাই দূর্ভেদ্য।

সত্তর কিংবা আশির দশক ক্রিকেট পাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের যুগ বলেই জানা হয়। এরপর নব্বই পরবর্তী সময়ে সেখানে একক আধিপত্য বিস্তার করে অজি ক্রিকেট। প্রায় দীর্ঘ সময় রাজত্বের পর এখন সেভাবে ক্রিকেট বিশ্বে নির্দিষ্ট কোনো দল রাজত্ব করছে না।

তবে একের পর এক সিরিজ জয়, বিদেশের মাটিতে আধিপত্য আর ভারতের বর্তমান বেঞ্চ শক্তি প্রমাণ করে আগামী এক যুগে ক্রিকেট বিশ্বে হয়তো ভার‍তই দাপট দেখাবে। পাইপলাইনে অজস্র খেলোয়াড়, মূল দলের তারকায় ঠাঁসা একটা দল বিরাট কোহলির নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত অবশ্য আইসিসির ট্রফি জিততে পারেনি। অভাবটা শুধু যেনো একটা শিরোপার!

আসছে সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আরব আমিরাতে খেলা। মাঠে যেকোনো দলের বিপক্ষেই ভারতের আধিপত্য অবশ্যই থাকবে। তবে মূল দলের স্কোয়াড ছাড়াও কথিত এই দ্বিতীয় সারির দলেও যে তারকায় টইটম্বুর। শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভেতরের লড়াই শেষে কারা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিবে সেটাই দেখার বিষয়।

তবে, বলতে গেলে ভারতের এই বেঞ্চ শক্তি বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট দেশকেই হারাতে সক্ষম। আর লঙ্কানদের বিপক্ষে বেঞ্চ শক্তির এই দাপুটে জয়ের মধ্যে দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে আগাম অশনি সংকেত দিয়ে রাখলো ভারত! বিশ্ব আসরে তাদেরকে রুখতে পারবে কি কোনো দল? প্রশ্নটা তোলা রইলো।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...