নিখাঁদ বোলার ছিলেন তিনি। কেউ বলতেন রহস্য স্পিনার, কেউ বলতেন নতুন যুগের ক্যারিবিয় জাদুকর। সে আপনি যাই বলুন, আসলে তো বোলার। কিন্তু সেই সুনীল নারাইন হঠাৎ করেই কয়েক বছর আগে ভয়ানক এক ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন! কিভাবে হলেন? সেই রহস্যটাই এবার ভাঙা যাক।
২০১৭ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ইনিংস শুরু করতে গিয়ে সোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন নারাইন। ভয়ানক ধ্বংসাত্মক চেহারায় একের পর এক ঝড়ো ইনিংস খেললেন। এরপর বিগ ব্যাশে গিয়েও ইনিংস ওপেন করলেন। সেখানেও এক চেহারা।
মাঝে একটু ভাটা পড়েছিলো। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্লে অফ ও ফাইনালে একেবারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দুই ফিফটি করে জানান দিলেন, ব্যাটসম্যান সুনীল নারিন হারিয়ে যাননি। এখন কুমিল্লার উইন্ডবল চ্যাম্পিয়ন সেই নারিন।
হ্যাঁ, এই উইন্ডবল ব্যাপারটাতেই লুকানো রয়েছে নারাইনের ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার রহস্য।
২০০৯ সালে এক ট্রায়াল ম্যাচে ১০ উইকেটই তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচকদের নজরে পড়েছিলেন। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আসার পর থেকে ত্রাস হয়ে উঠলেন। তার ত্রাসের ওপর ভর করেই ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলার নারিন তখন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষন। এর মাঝে ২০১২ ও ২০১৪ সালে কলকাতাকে শিরোপা জেতানোর পথে বল হাতেই দারুন ভূমিকা রাখলেন।
কিন্তু ২০১৬ সাল নাগাদ নারিনের বোলার জীবন হুমকির মুখে পড়লো। বোলিং অ্যাকশন রিপোর্টেড হলো। ২০১১ সালে ওয়ানডে অভিষেকের আগেই একবার বোলিং অ্যাকশন শুধরে এসেছিলেন। কিন্তু ২০১৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আবার তার অ্যাকশন রিপোর্টেড হলো। এরপর থেকে বোলার হিসেবে পায়ের নিচে মাটি খুজে পেতে কষ্ট করতে হচ্ছিলো।
সে বছরই শেষ ওয়ানডে খেলে ফেললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। অ্যাকশন, ফর্ম আর বোর্ডের সাথে মনমালিন্য মিলিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে আর খেলা হয়নি। তবে ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু বোলার নারিন আগের মত আর ছিলেন না।
আর এই সময়টাতেই জন্ম অলরাউন্ডার নারিনের। আর সেটা উইন্ডবল ক্রিকেট দিয়ে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিনি প্রিমিয়ার লিগকে ‘উইন্ডবল ক্রিকেট’ বলা হয়। কংক্রিটের পিচে এই ধরণের ক্রিকেট খেলা হয়। প্রতিটি ইনিংসের দৈর্ঘ্য হয় ৮ ওভার। যেহেতু ওভার সংখ্যা কম, তাই শুরু থেকেই ব্যাট চালিয়ে খেলতে হয়। নারিন এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। শুধু নারিন কেন, ডোয়াইন ব্র্যাভো, কাইরন পোলার্ডের মতো ক্রিকেটারকেও উইন্ডবল ক্রিকেট খেলেছেন।
নারিন এই ফরম্যাটে রীতিমত ভয়ানক ক্রিকেটার। তার এই পরিবর্তন নিয়ে কলকাতার এক সময়ের এনালিস্ট এআর শ্রীকান্ত বলেছিলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে সুনীলের বাড়িতে ট্রফির পর ট্রফি সাজানো। আইপিএল ছাড়া বাকি ট্রফিগুলো কিন্তু উইন্ডবল ক্রিকেটে মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্যই।’
সোজা কথায় উইন্ডবল থেকেই এই ধ্বংসাত্মক নারাইনের জন্ম। বোলার নারাইন হয়তো আগের মত নেই। কিন্তু উইন্ডবলের কল্যান্ডে এক অলরাউন্ডার নারিনের তো দেখা মিললো।
বয়স প্রায় ৩৫ হয়ে গেছে। তার এই অলরাউন্ডার রূপ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট কখনো দেখতে পাবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তবে বিনোদনের ক্রিকেট, এই ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলো অন্তত নতুন রূপের নারাইনকে দেখিয়েই যাচ্ছে।
সে জন্য কুমিল্লা একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে। তারাও একটু উইন্ডবল দেখিয়ে দিলো।