Social Media

Light
Dark

টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আসেনা!

ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের বিখ্যাত ‘বাংলাটা ঠিক আসেনা’ কবিতার প্রথম লাইনগুলো যদি বদলে একটু অন্যরকম করে বলা যায় – ‘ওয়ানডেতে ওরা খুব ‘সিরিয়াস’, কথায় কথায় হারে না, জানেন দাদা, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আসে না।’

যতই দেশের মাটিতে শেষ দুটো সিরিজে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে স্লো টার্নিং উইকেট দিয়ে উড়িয়ে দিক বাংলাদেশ, আসলে একটু যদি তলিয়ে দেখা যায় টি-টোয়েন্টিটা সত্যিই বাংলাদেশের ঠিক আসেনা। গত চার বছরের পারফরমেন্স যদি দেখা যায় এই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের ম্যাচ গুলো বাদ দিয়ে তাহলে দেখা যাবে ৪০টা ম্যাচে জয় মাত্র ১৩টা।

আর ঠিক এই কারণেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতই উন্নতি করুক টি-টোয়েন্টিতে এখনও পেছনের সারিতেই থাকতে হচ্ছে আর তার ফলশ্রুতি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি রাউন্ড টপকে তারপর সুপার ১২-তে প্রবেশ করতে হবে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে। এই বিশ্বকাপে সম্ভাবনা কেমন বাংলাদেশের, দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।

  • শক্তি

বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টিতে শক্তি যদি বলতে হয় সেটা কিছুটা তাদের বোলিং। মুস্তাফিজুর এখনও অনেক দলের কাছেই ধাঁধার মত। ‘ফিজ’ এর কাটার ও স্লোয়ার গুলো টি-টোয়েন্টি তে সত্যিই ভীষণ রকম উপযোগী, এর সাথে যোগ করা যাক নবাগত নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদী হাসানের টাইট বোলিং। সাকিব আল হাসানকে সাহায্য করার জন্য এই দুই স্পিনার যথেষ্টই কার্যকরী হতে পারেন, বিশেষত আমির শাহীর স্লো পিচে।

এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও বল হাতে খুব খারাপ অপশন নন। ব্যাটিং এ নবাগত মোহাম্মদ নাঈম ইদানিং ভালো খেলছেন, ২০১৯ সালে ভারত সফরে অনবদ্য একটি ৮১ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, সমস্যা তাঁর স্ট্রাই করেট এছাড়া ওপেনিং এ লিটন দাসের ওপর অনেকটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ। আর সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এই অভিজ্ঞ ত্রয়ীর ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার দিকে নিয়মিত তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।

  • দুর্বলতা

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের শক্তির চেয়ে দুর্বল দিক গুলো খুঁজে বের করা মনে হয় অনেক সহজ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা তথাকথিত কোনো বিগ হিটার দলে না থাকা, এর ফলে বড় রান টি-টোয়েন্টিতে তুলতে গেলে নিয়মিতই হিমশিম খান মাহমুদউল্লাহরা।

আর বিগ হিটার না থাকার সবচেয়ে বড় কারণ দেশের মাটিতে যেসব আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ খেলোয়াড়রা খেলেন সেখানে স্লো এবং ঘূর্ণি পিচ, যা টি-টোয়েন্টিতে বিগ হিটিং এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, ফলত বাংলাদেশে লম্বা লম্বা ছক্কা মারার খেলোয়াড় তৈরীই হয়না। আর এর প্রভাব আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি পড়ে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে, ১৪০ এর বেশি রান তাড়া করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বহু সময়ই শোচনীয় সব ব্যাটিং ব্যর্থতা দেখিয়েছে।

বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ড, ওমান, পাপুয়া নিউ গিনি ম্যাচে হয়তো উৎরে যাবেন সাকিবরা, কিন্তু সুপার এইটে বড় ম্যাচে ভালো ভালো স্পিনারদের সামনে আবারও পা হড়কাতেই পারেন তাঁরা। এছাড়া মাহমুদল্লাহ (যদিও, ফিনিশার হিসেবে তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম সুবিধাজনক নয়) ছাড়া এখনও ভালো কোনো ফিনিশার না থাকাও ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে। সাকিব যতই ব্যাটে বলে এক বিরাট ভরসা হোন না কেন, ব্যাট হাতে নিয়মিত ম্যাচ জেতানোতে সাকিব এখনও যথেষ্টই পিছিয়ে।

অন্য সমস্ত দেশে যথেষ্ট ভালো মানের লেগ স্পিনার থাকলেও বাংলাদেশে একটা লেগ স্পিনারের অভাব কিন্তু টুর্নামেন্টে অনুভূত হতেই পারে। লেগ স্পিনাররা বরাবরই টি-েটোয়েন্টি ম্যাচ জেতায়, পেসার মুস্তাফিজ ছাড়া দারুন ম্যাচ জেতানো বোলারের কিন্তু অভাব এই বাংলাদেশে।

  • বাংলাদেশ দল ও তাদের সম্ভাবনা

তামিম ইকবাল এই বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় (নাকি সরতে বাধ্য করা হলো?) ব্যাটিং এ একটা বড় ফাঁক কিন্তু তৈরী হলো। সৌম্য সরকারকে ওপেনিং এ নিয়মিত খেলাবে না হয়তো বাংলাদেশ, তবে ওপেন ছাড়া অন্য কোথাও খেলালে সৌম্যর সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

লিটন, নাঈম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের দিকে নিয়মিত তাকিয়ে থাকবে দল। যদিও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ দেড় বছরে অতি সাধারণ পারফরমেন্স করার পরেও মুশফিকুর কিকরে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেন, সেটাও এক রহস্য। ২০১৯ এ ভারতের বিরুদ্ধে দিল্লৗতে ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পরে বাকি ম্যাচ গুলোতে তাঁর গড় ১০ ও পেরোয়নি।

দলে ফিনিশার হিসেবে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে তৈরি করার চেষ্ঠা চলছে, আফিফ ছয় নম্বরে খুব খারাপ নন। তবে, তাঁকে আরো ওপরের দিকে সুযোগ দেওয়ার দাবিও আছে। অন্যদিকে, মুশফিক টি-টোয়েন্টি তে কিপিং গ্লাভস তুলে রাখায় নুরুল হাসান সোহানকে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলানো হবে, নুরুলের কিপিং দুর্দান্ত হলেও ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি করার প্রয়োজন আছে। যদিও, সোহান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্লগার হিসেবে ভাল করছেন।

শামিম হোসেন পাটোয়ারি সাত নম্বরে খুব ভালো অপশন হতে পারেন, ২০ বছরের এই শামিম কিন্তু বড় শট মারতে পারেন। তবে, সীমাবদ্ধতা তাঁরও আছে। মেহেদী হাসান যেকোনো পজিশনে ব্যাট করতে পারেন এবং তাঁর অফস্পিন যথেষ্টই কার্যকরী। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ দলে মোটামুটি একটা ব্যালান্স থাকলেও বিগ হিটারের অভাব, ভালো লেগ স্পিনার না থাকা ও বড় ম্যাচে চোক করে যাওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সুপার ১২-এর বেশি যাওয়া সম্ভব নয়। আবারও ওই এক-আধটা চমকের সাথে বাংলাদেশের ‘টি-টোয়েন্টিটা ঠিক আসেনা’ এই ট্যাগটাও জুড়েই থাকবে।

  • বাংলাদেশ স্কোয়াড:

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, মেহেদী হাসান, শামিম হোসেন পাটোয়ারি, নাসুম আহমেদ ও নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link