বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট, একটা আলাদা রকমের মাদকতা চিরদিনের জন্য। ওই মেরুন টুপি, মেরুন জার্সির দলটা কোথাও গিয়ে যেন ভীষণ আপন সবার কাছে। তাঁদের জন্যই বোধহয় ৭০ হাজারের ইডেন গার্ডেন্স কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়, কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের চার ছক্কার উল্লাসে মেতে ওঠা দর্শককূলের কাছে ব্র্যাথওয়েট যেন ঘরের ছেলেই।

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট, একটা আলাদা রকমের মাদকতা চিরদিনের জন্য। ওই মেরুন টুপি, মেরুন জার্সির দলটা কোথাও গিয়ে যেন ভীষণ আপন সবার কাছে। তাঁদের জন্যই বোধহয় ৭০ হাজারের ইডেন গার্ডেন্স কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়, কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের চার ছক্কার উল্লাসে মেতে ওঠা দর্শককূলের কাছে ব্র্যাথওয়েট যেন ঘরের ছেলেই।

মারলন স্যামুয়েলস এর দু’বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স যেন স্যামুয়েলসকে বসিয়ে দেয় রাজার আসনে। আর দুবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ও বসে পড়েন পূর্বসূরী ক্লাইভ লয়েডের পাশে। আবারও একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হইহই করে এসে গিয়েছে, স্যামি – ব্র্যাথওয়েট – স্যামুয়েলসরা আর মেরুন জার্সিতে নেই কিন্তু ক্যারিবিয়ানরা তাঁদের সদর্প উপস্থিতি জানান দিতে আসছে গেইল, পোলার্ড, রাসেল, ব্র্যাভো, লুইস, পুরান দের মত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দৈত্যদের নিয়েই।

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবারও মরু অভিযানে নামছে তৃতীয় বার কাপ জয়ের দুর্নিবার আশায়। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রচুর ম্যাচ হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশ সবাই হারিয়েছে তাঁদের, র‌্যাংকিংয়ে নামতে নামতে এখন তাঁরা ৯ নম্বরে। গত বিশ্বকাপের পরে খেলা ৬৭ ম্যাচের মধ্যে জয় এসেছে মাত্র ২৪টা ম্যাচে।

কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই অন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কারণ এর মধ্যে বেশিরভাগ ম্যাচেই সেরা দল একসাথে খেলেনি ক্যারিবিয়ানদের। শেষ তিনটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার সেমি ফাইনাল খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বড় মঞ্চে সবাই একসাথে খেললে ঠিকই জ্বলে উঠতে জানে আর জানে বলেই র‌্যাংকিংয়ে নিচের দিকে থাকা ক্যারিবিয়ানরা এবারেও তাঁদের সাম্রাজ্য ধরে রাখার জন্য যথেষ্টই এগিয়ে থেকে শুরু করবে।

  • শক্তিমত্তা

ক্যারিবিয়ান দলের মূল শক্তি হলো দুর্ধর্ষ সব পাওয়ার হিটারের উপস্থিতি। যথেষ্ট পরিমাণে অলরাউন্ডার উপস্থিত থাকার জন্য দলের ব্যাটিং গভীরতাও যথেষ্টই বেশি। গেইল, লুইস, হেটমায়ার, পুরান, সিমন্স, রাসেল, পোলার্ড, ব্র্যাভোর মত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্দান্ত সব পারফরমার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে, এঁরা প্রত্যেকেই ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে ‘হটকেক’ এর মত।

এইরকম দুরন্ত ব্যাটিং লাইন আপ দিয়ে বড় রান স্কোরবোর্ডে সাজানো বা বড় রান তাড়া করা দুক্ষেত্রেই ক্যারিবিয়ানরা নিজেদের দিনে অসাধারণ। মিডল ওভার বা স্লগ ওভারে ঝড় তুলতে পোলার্ড ও রাসেল দলের সবচেয়ে বড় ভরসা, পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁদের কেমন ভাবে ব্যবহার করা হয় তার ওপর খানিকটা নির্ভর করবে ক্যারিবিয়ানদের ভাগ্য।

  • দুর্বলতা 

এবারের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং যতটা ধ্বংসাত্মক, বোলিং এর দিকে কিন্তু ততটাও আহামরি নয়। সুনীল নারিন নিয়মিত ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেললেও বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি, নারিন থাকলে অবশ্যই বোলিংয়ে বৈচিত্র বাড়তো। প্রায় ৬ বছর বাদে দলে ফেরানো হয়েছে পেসার রবি রামপালকে, এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকার পর বিশ্বকাপে নেমে মানিয়ে নেওয়াটা অসুবিধের হতে পারে।

এছাড়া স্পিন বিভাগে হেডেন ওয়ালশ ছাড়া ম্যাচ জেতানো স্পিনার কিন্তু দলে নেই, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন বোলার হিসেবে ততটাও দুর্দান্ত নন, যে বিপক্ষের ব্যাটিংয়ে ত্রাস সঞ্চার করবেন। এছাড়াও ব্যাটিং এর ক্ষেত্রে একটা জিনিস বলা যায় যে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানেরই ধারাবাহিকতার যথেষ্টই অভাব। সবসময়ই বড় বড় শট মারার প্রবণতা কিন্তু আমিরশাহীর উইকেটে বিপদ ডেকে আনতে পারে, স্লো উইকেটে নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করার ভীষণ প্রয়োজন পড়ে, এক্ষেত্রে কিন্তু পিছিয়েই থাকবেন ক্যারিবিয়ানরা।

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ও তাঁদের সম্ভাবনা 

বিশ্বকাপের দলে জেসন হোল্ডার মূল দলে না থাকা বেশ খানিকটা অবাক করার মত, হোল্ডারের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড হয়তো আহামরি নয়, কিন্তু তিনি মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারে যেকোনো জায়গায় ব্যাট করা ও নিয়মিত ৪ ওভার করার ক্ষমতা রাখেন, শুধু বোলার হিসেবেও হোল্ডার একটু খরুচে হলেও মন্দ নন।

তবে সিপিএলে দারুন পারফরমেন্স করা রোস্টন চেজ দলে থাকা বেশ গভীরতা বাড়াবে ক্যারিবিয়ান ব্রিগেডে, চেজ মূলত টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত হলেও এবারে সিপিএলে ব্যাট ও বল হাতে চমকে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত একটাও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা না থাকা চেস মিডল অর্ডার ব্যাটিং ও দারুন কার্যকরী অফ ব্রেক দিয়ে এক বড় চমক হতে পারেন এই বিশ্বকাপে।

বোলিংয়ে বড় চমক হতে পারেন বাঁহাতি সিমার ওবেদ ম্যাককয়। টি-টোয়েটির চাহিদা মেনে দারুন সব ভ্যারিয়েশন রয়েছে ম্যাককয়ের ঝুলিতে, যা আমিরশাহীর পিচে ব্রম্ভাস্ত্র হতে পারে, আর খানিকটা অপরিচিত হওয়ায় বহু ব্যাটসম্যান এরই মাথাব্যথা হতে পারেন ম্যাককয়।

অলরাউন্ডার হিসেবে আন্দ্রে রাসেলের দিকে তো অবশ্যই চোখ থাকবে, একার হাতে যেকোনো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন নিজের দিনে।এমনিতে দুর্ধর্ষ সব টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ে ঠাসা ক্যারিবিয়ান দল বিশ্বকাপে কতোটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারে সেটাই সবচেয়ে লক্ষ্যনীয় বিষয়।

আর অত্যন্ত কঠিন গ্ৰুপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থাকলেও নিজেদের সেরা খেলাটা গেইল, ব্র্যাভো, পোলার্ড, রাসেলরা খেলতে পারলে তাহলে শুধু গ্ৰুপ পর্বের বাঁধা পেরোনো কেন চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে অস্বাভাবিক হবে না। তখন ১৪ নভেম্বর দুবাই স্টেডিয়ামে ‘ডি জে ব্র্যাভো’র তালে তালে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ড্যান্স এ হয়তো আবার ও মাতবেন গেইলরা, আর ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান বিশপের গলায় মুগ্ধতা ছড়ানো কণ্ঠে শোনা যাবে হয়তো ‘নিকোলাস পুরান, রিমেম্বার দ্য নেম।’ অপেক্ষা তো আর মাত্র কয়েকদিনের।

  • ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোয়াড

কাইরেন পোলার্ড (অধিনায়ক), এভিন লুইস, ক্রিস গেইল, শেমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, অ্যান্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্র্যাভো, রোস্টন চেজ, আকিল হোসেন,  রবি রামপল, অ্যান্দ্রে ফ্লেচার, ওবেদ ম্যাককয়, হেডেন ওয়ালশ জুনিয়র, ওশেন টমাস, লেন্ডল সিমন্স।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...