সাহা! আহা!

কী ভিষণ এক দুসময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। সময় তাঁর পক্ষে ছিল না। দেশের ক্রিকেট বোর্ড কিংবা সতীর্থ কেউ নয়। গণমাধ্যমের একাংশকেও পাশে পাননি। শীর্ষ এক সাংবাদিক তো রীতিমত ‘দেখে নেবো’ বলে শোরগোল তুলেছিলেন। এক সময়ের সতীর্থ ও বর্তমানে বোর্ড সভাপতি পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তাঁর হয়ে বলার যেন কেউই ছিল না।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দলমালিকগুলোও খুব একটা পছন্দ করেনি তাঁকে। একদম শেষ দিনের শেষ বেলায় নিলামের ডাকে তিনি কোনোক্রমে দল পেয়েছিলেন।

এত নেই নেই-এর ভিড়ে ঋদ্ধিমান সাহার কেবল ছিল বলতে একটাই ব্যাপার। আর সেটা হল বিশ্বাস। নিজেকে আরো একবার প্রমাণ করার প্রবল আত্মবিশ্বাস। আর সেই দাপটেই তিনি জ্বলে উঠলেন আপন শক্তিতে। প্রমাণ করে দিলেন, ব্যাটটা আজো তাঁর কথা দিব্যি শোনে। যেন আরেকটাবার তাঁর ব্যাটটা এই প্রায় ৩৮ ছুঁইছুই বয়সে গিয়ে বলে উঠলো, ‘আমার হয়ে বলার জন্য আমি একাই একশো!’

হ্যাঁ, এক স্বস্তির বাতাস নিয়ে ঋদ্ধিমান সাহা ফিরে এসেছেন। মুম্বাইয়ের আকাশ-বাতাস ছেয়ে গেছে কাল বৈশাখী ঝড়ে। উমরান মালিক নামের আরেক ঝড়ের ১৫৩ কিলোমিটার গতির বলটায় পরাস্থ হওয়ার আগে যা যা করতে চেয়েছিলেন, তার পুরোটাই করতে পেরেছেন।

ভারতীয় ক্রিকেট কিংবা আইপিএলে ঋদ্ধিমান সাহাকে বরাবরই আন্ডাররেট করা হয়। অবশ্য শেষ আসরে ব্যাটিং দিয়ে বাংলার এই ছেলেটা সত্যিকার অর্থেই মন ভোলাতে পারেননি। ২০২১ সালের আইপিএলে ব্যাটিং গড় ছিল ১৪.৫, স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০’র নিচে।

সেই কারণেই কি না, গুজরাট টাইটান্স প্রথম কয়েকটা ম্যাচ মাঠেই নামায়নি ঋদ্ধিকে। কিন্তু, গোলটা বাঁধে অন্য জায়গায়। নিয়মিত ওপেনার শুভমান গিলের আদর্শ একজন সঙ্গী খুঁজে পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছিল। কিন্তু, শেষমেশ ভরসা গুজরাট ফ্র্যাঞ্চাইজি খুঁজে পেল সাহাতেই।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটায় সাহা একটু অন্যরকম। তিনি পাওয়ার প্লে-তে বোলারদের পিটিয়ে রান আদায় করতে ভালবাসেন। ২০১৯ সাল থেকে শুরু করে, এখন অবধি আইপিএলের পাওয়ার প্লেতে কমপক্ষে ১৫০ টি ডেলিভারি মোকাবেলা করেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে সাহার (১৩৪.৫) চেয়ে এগিয়ে আছেন মোটে তিনজন – পার্থিব প্যাটেল (১৪৫.৬), সুরিয়াকুমার যাদব (১৪১.৯) ও মানিশ পান্ডে (১৩৫.১)।

অথচ, এমন একজন ইউটিলিটি ব্যাটারের নিলামে কোনো ঠিকানাই শুরুতে পাওয়া যাচ্ছিল না। ভারতীয় বোর্ডের মত ফ্র্যাঞ্চাইজির নিয়ন্ত্রকরাও কি টিনের চশমা পরে বসেছিল?

নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটান্স তাও নিয়েছিল বলে একটা ঠিকানা পেয়েছিলেন সাহা। পেয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণের একটা মঞ্চ। মুম্বাইয়ের ওয়াঙখেড়েতে বসে ৩৮ বলে ৬৮ রানের ইনিংস দেখার সৌভাগ্য তো আর রোজ রোজ মেলে না।

সেই মঞ্চটার জন্যও আবার বেশ বেগ পেতে হয়েছিল সাহাকে। সাহার চেয়ে দল নির্বাচকদের দৃষ্টিতে এগিয়ে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েড। যতোই মধ্যম গোছের ব্যাটার, সাদামাটা উইকেটরক্ষক হোক না কেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এসেছেন সদ্যই। তাঁর ওপর সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেওয়া সেই ইনিংস তো ছিলই। ওয়েড সুযোগ পেয়েছিলেন প্রথম দিককার ম্যাচগুলোতে।

কিন্তু, গুজরাটের সিদ্ধি মিলেছে ঋদ্ধিতে এসেই। ২০২১ সালটা বাজে সময় ছিল। এর আগে ২০১৯ বা ২০২০ সালেও মাঝপথে এসে এমন দানবীয় হয়ে উঠেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। এবারও তাই হল। আহা!

 

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link