গড়পড়তা এক ব্যাটসম্যান হঠাৎই বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন হয়ে উঠলেন। ২০১৩ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে কখনো ৫০ এর নিচে তাঁর ব্যাটিং গড় নামেনি। মাঝে কখনো কখনো ৭০ গড় নিয়েও ব্যাট করেছেন। এছাড়া তাঁর বিধ্বংসী স্ট্রাইকরেট নিয়ে গত কয়েকবছরে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ওপেনারে পরিণত হয়েছেন। ফলে ২০১৩ সালটা রোহিত শার্মা ক্রিকেট ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বটে। তবে ২০২১ সালটাও নিশ্চয়ই মনে রাখতে চাইবেন রোহিত।
এবছর ব্যাট হাতে স্বাভাবিক ক্রিকেটটাই খেলেছেন রোহিত। নিয়মিত রান করেছেন, দারুণ কিছু ইনিংসও খেলেছেন। সবমিলিয়ে গত কয়েকবছরে যেমন ক্রিকেট খেলছিলেন এবছরটাও ঠিক তেমনই ছিল। রোহত শর্মা বলতে আমরা যা বুঝি সেরকম ব্যাটিংই করেছেন। তবুও এবছর রোহিতের ক্যারিয়ারের স্মরণীয় এক বছর হয়ে থাকবে।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনারদের একজনে পরিণত হয়েছেন রোহিত। সাদা বলের ক্রিকেটে গত ৭-৮ বছরে তাঁর চেয়ে বেশি ধারাবাহিক খুব কম ব্যাটসম্যানকেই দেখা গিয়েছে। তাও ওপেন করতে নেমে বিশ্বের সেরা বোলারদের বিপক্ষে কী দাপুটে ব্যাটিংটাই না করেছেন। তাঁর ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটও যে কারো জন্য ইর্ষনীয়। নিজের বিধ্বংসী ব্যাটিং এর জন্য হিটম্যান উপাধিও পেয়েছেন।
তবুও যেনো কোথায় একটা অপূর্নতা ছিল। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে পাওয়া যাচ্ছিল না সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। নিয়মিত টেস্ট ক্রিকেট খেলাচ্ছিল না তাঁকে ভারত। ভাবা হচ্ছিল রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেই রোহিত তাঁর সেরাটা দিতে পারবেন।
প্রায় ২ বছর পর ভারতের হয়ে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন এবার। তারপর এবছর ভারতের হয়ে মোট ১১ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে ২১ ইনিংসে ৪৭.৬৮ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। ১৬১ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস সহ করেছেন ৯০৬ রান। এবছর ৪ টি হাফ সেঞ্চুরির পাশে আছে ২ টি সেঞ্চুরি। রোহিত শর্মা প্রমাণ করলেন যে যিনি পারেন তিনি সবজায়গাতেই পারেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে রোহিতের এই প্রত্যাবর্তনে পূর্নতা পেল রোহিতের ক্যারিয়ার, পূর্ণটা পেল টেস্ট ক্রিকেটও।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্টেও নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করাটা এবছর রোহিতের অন্যতম বড় পাওয়া। আসলে রোহিতের পুরো ক্যারিয়ারের জন্যই এটা বিশাল এক অর্জন। টেস্ট ক্রিকেটই তো একজন ব্যাটসম্যানের স্বপ্নের জায়গা। রঙিন পোশাকে ঝড় তুলে অনেক সুনাম কুড়ালেও, ক্যারিয়ার শেষে টেস্টের এই রানগুলোর হয়তো হবে রোহিতেই আনন্দের জায়গা।
এবছর রোহিত আরো বড় কিছুও অর্জন করেছেন। রঙিন পোশাকে তাঁকে কেন্দ্র করেই এবার এগিয়ে যেতে চাচ্ছে ভারত। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের নয়া অধিনায়ক এখন তিনি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ভারতকে নেতৃত্ব দিবেন এই ওপেনার। ফলে রোহিত তাঁর ক্যারিয়ারকে অবিস্মরণীয় করে তোলার এক সুযোগ পেল এবছর।
এছাড়া আইপিএলে লম্বা সময় ধরেই নিজের অধিনায়কত্বের প্রমাণ করে আসছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনির মত অধিনায়ক থাকার পরেও আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক বলা হয় রোহিতকে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁর নেতৃত্বে আইপিএলের অন্যতম সফল দলে পরিণত হয়ছে। তবে ভারতের হয়ে কোনভাবেই অধিনায়কত্ব করার সুযোগটা পাওয়া যাচ্ছিল না।
এর আগেও কখনো কখনো ভারতকে নেতৃত্বে দিয়েছেন। তবে এবার পুরোপুরি দায়িত্বটা তাঁকে হস্তান্তর করা হলো। ভারতকে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন তাঁর। এতদি ধরে আইপিএলে যে কাজটা করে যাচ্ছিলেন সেটা এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করে দেখানোর পালা। আইপিএলের সেই সাফল্য গুলোও যেন এবার পূর্নতা পেল। ফলে ২০১৩ সালে রোহিত শর্মা হিটম্যান হওয়ার দিকে এগিয়ে গেলেও, ২০২১ সালে ভারত যেন রোহিতের পুরোটা খুঁজে পেল।