তরুণ কাঁধে নেতৃত্বের ভার

জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন তো সবাই দেখে। আবার এটাও ঠিক যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সবসময়ই কঠিন। আর তা যদি হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব তাহলে তো কথাই নেই।

ক্রিকেট তো ভারতে স্রেফ একটা খেলা নয়, খেলার চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার। মাথার ওপর তো রীতিমত চেপে বসে চাপের বোঝা, সমর্থকদের চাহিদা। মজার ব্যাপার হল, ভারতীয় ক্রিকেটের এই পাহাড়সম নেতৃত্বের চাপ নিতে দেখা গেছে অল্পবয়সী তরুণদেরও। সেরকমই পাঁচজন তরুণের গল্প শোনা যাক তাহলে।

  • বিরাট কোহলি২৪ বছর ২৩৯ দিন

বিরাট কোহলি তো এখন ভারতের নিয়মিত অধিনায়ক। তবে ২০১৩ সালে একবার মহেন্দ্র সিং ধোনীর অনুপস্থিতিতে বিরাট কোহলি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে নেতৃত্ব অবশ্য খুব বেশি সুখকর ছিল না বিরাটের জন্যে। প্রথমেই উপুল থারাঙ্গা, মাহেলা জয়াবর্ধ্বনের সৌজন্যে ৩৪৮ রানের পাহাড়সম রান করে ফেলে শ্রীলঙ্কা।

বিরাট কোহলি দুই ওভার মিডিয়াম পেসে হাত ঘোরালেও তা খুব বেশি কাজে দেয়নি। এরপর কিংসটনের সে ম্যাচে ব্যাট করতে নামলেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি ভারত, ১৯ ওভারের মাথায় মাত্র ৬৫ রানে হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথ্যুস কোহলিকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন মাত্র দুই রানে। ম্যাচটা ভার‍ৎ শেষ অব্দি হেরে যায় ১৬১ রানের বিশাল ব্যাবধানে। শুরুটা এমন হলেও নিয়মিত অধিনায়ক হবার পর অবশ্য কোহলির নেতৃত্ব বেশ সুখকরই হয়েছে। ৮৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে বিরাট জিতেছেন ৬২ ম্যাচ!

  • বীরেন্দ্র শেবাগ২৪ বছর ১৭৮ দিন

বীরেন্দ্র শেবাগ খুব সম্ভবত তর্কসাপেক্ষে ক্রিকেটের সবচাইতে আক্রমণাত্মক ওপেনারদের মধ্যে একজন। টেস্ট আর ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই তিনি স্ট্রাইক রেট বজায় রেখেছেন ৮০ এর ওপরে। তবে এই ওপেনারও কিন্তু হাতে পরেছেন ভারতের অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড।

২০০৩ সালের ঘটনা সেটি, ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিল শেবাগ। সেসময় শেবাগের বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর ১৭৮ দিন। শেবাগের ৪৩ রান আর বল হাতে নেওয়া এক উইকেটের সৌজন্যে সে ম্যাচটা অবশ্য বেশ ভালভাবেই জিতে যায় ভারত। তবে, শেবাগ এরপরও ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আরো ১১ বার।

শেবাগের নেতৃত্বে ১২ ম্যাচের ৭ টিতেই জয় পেলেও, শেবাগ অধিনায়ক হিসেবে একটা অনন্য রেকর্ড করে ফেলেছেন এর মধ্যেই। ২০১১ সালে উইন্ডিজের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নেমে তিনি অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলে ফেলেছিলেন (২১৯)

  • কপিল দেব২৩ বছর ২৪৯ দিন

কপিল দেব এখন অবধি ভারতের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার, নেতৃত্বগুণেও ভারতকে তিনি জিতিয়েছেন বিশ্বকাপের ট্রফি। তবে ভারতের হয়ে কাপিলের নেতৃত্বের অভিষেক ঘটে ১৯৮২ সালে। শ্রীলঙ্কার সাথে সে ম্যাচটাতে ছয় নম্বরে নেমে ৩১ বলে ৪৯ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন হরিয়ানা হ্যারিকেন খ্যাত কপিল দেব।

তাঁর দলও প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে তোলে ২৬৯ রান। এই রান ডিফেন্ড করতে নেমে বল হাতেও উজ্জ্বল ছিলেন কপিল, আট ওভার বল করে মাত্র নয় রান দিয়ে নিয়ে নেন শ্রীলঙ্কার এক উইকেট। সে ম্যাচটা মাত্র ৪৬ ওভারেই জিতে নেয় ভারত।

  • সুরেশ রায়না২৩ বছর ১৮২ দিন

জিম্বাবুয়ে সফরের সেই সিরিজে ভারত তাঁদের সব সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে দেয়। ফলে নেতৃত্বের দায়িত্ব বর্তায় সুরেশ রায়নার কাঁধে। প্রথম নেতৃত্বের সেই ম্যাচে রায়না করেন ৫৩ বলে ৩৭ রান। তবে, রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি আর রবীন্দ্র জাদেজার হাফ-সেঞ্চুরিতে ভারত পেয়ে যায় ২৮৬ রানের লড়াকু স্কোর।

তবে, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ব্রেন্ডন টেইলরও ভারতের জবাব বেশ ভালভাবেই দেওয়া শুরু করে, ওপেনিং জুটিতেই তুলে ফেলে ৮৮  রান। এরপর ক্রেইগ আরভিনের সৌজন্যে ভারতের বিপক্ষে জয় পায় জিম্বাবুয়ে। এ ম্যাচসহ ভারতকে আরো ১২ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন রায়না, তবে তাঁর পাঁচটিতেই তিনি মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছেন।

  • শচীন টেন্ডুলকার২৩ বছর ১২৬ দিন

ভারতের হয়ে নেতৃত্ব দেওয়া সবচাইতে তরুণ বয়সের ক্রিকেটারের নাম শচীন টেন্ডুলকার। এমনিতেই নিয়মত অধিনায়ক হিসেবে ৭২ ম্যাচের ৪২ টিতে হার বলে দেয়, নেতৃত্বগুণে শচীন তাঁর ব্যাটিং স্বত্ত্বার মত খুব বেশি উপরের দিকে থাকবেন না।

যা হোক, শচীন প্রথমবারের মত নেতৃত্ব দেন ১৯৯৬ সালে, কলম্বোতে। তা সে ম্যাচে ১৩৮ বলে ১১০ রান করে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তিনি। তবে, আজহারউদ্দীন ছাড়া র কেউ সঙ্গ না দেওয়ায় ভারতের স্কোর ২২৬ রান পার হয়নি। তবে ব্যাটিং-এর মত বোলিং-এও সুবিধা করতে পারেনি ভারত। সনাথ জয়াসুরিয়ার সেঞ্চুরিতে খুব সহজেই ভারতের রান টপকে যায় শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার হারানো একমাত্র উইকেটটি অবশ্য পকেটে পুরেছিলেন শচীন।

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link