যুবরাজের ব্যাটে বাজল নস্টালজিয়ার ঘণ্টা

সন্তানকে গ্যালারি থেকে নামিয়ে এনেছেন সোজা সবুজ মাঠে। সন্তানকে না সন্তানদের? নিজের, না সতীর্থেরও? কে খোঁজ রাখে! উদযাপনটাই তো মূখ্য। ক্রিকেট সুন্দর, জীবন সুন্দর, স্মৃতিরা সুন্দর। ইলাস্টিকে বয়ে চলা সময়ের মতই সুন্দর।

সময় অনেকটা ইলাস্টিকের মত, কে যেন বলেছিল। স্মৃতির আঙ্গুল তাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। যুবরাজ সিং যখন লিস্টারের মাঠে ৪২ বলে ৯৩ রানের হিসেব মিলিয়ে সেমি ফাইনালে যাওয়ার জন্য মাঠে নামছেন, আমরা ফিরে যাই দুই যুগ পিছনে। হিরো হোন্ডার স্টিকার লাগানো একখানা ব্যাট হাতে, কলার সোজা করতে করতে বেখেয়ালি ভঙ্গিতে উইকেটে হাজির হচ্ছে এক বাউন্ডুলে।

বেহিসেবি ছেলেটা হিসেব জানে না। ম্যাকগ্রা বোঝে না, লি বোঝে না, ব্রড বোঝে না। মাথার ওপর থেকে নেমে আসে ইন্দ্রের বজ্রের আঘাত। পয়েন্ট, কাভার, মিড উইকেট, স্ট্রেইট বাউন্ডারি, বল ছোটে বজ্রের গতিতে। বহু পরে এসে জানবো, এর নাম ‘হাই ব্যাকলিফট’। দুই যুগ পরে এসে এখন ব্যাটারদের সবথেকে পছন্দের ‘ব্যাটিং স্ট্যান্স’।

৪৩ বছর বয়সে সেই রোয়াব কোথায়! কাভার ড্রাইভের বদলে কাট শট, ফিল্ডারদের বরফে জমিয়ে বুলেট শটের বিপরীতে দুই ফিল্ডারের ফাঁক গলে চুরি করে আদায় করা দুটো চার। এদিকে সেদিকে বল পাঠিয়ে গুটি কতক সিংগেল। তারপর নেমে আসে সেই বজ্রবান।

মর্ত্যের বুকে ইন্দ্রধনু একে বল ছুটে যায় স্কোয়ার লেগ সীমানার ওপারে। ছক্কা! এমন একটা শট দেখার জন্যই তো দর্শকেরা পয়সা খরচ করে লিজেন্ডস লিগ দেখতে স্টেডিয়ামে আসে, টিভির সামনে বসে, মুঠোফোনের স্ক্রিনে চোখ গেথে রাখে। ১১ বলে ২১ রান, ২ চার, এক ছক্কা, ১৯০ স্ট্রাইক রেট, এসব সংখ্যা বোঝার সময় কোথায়!

স্টুয়ার্ট বিনিকে ছোট করছি না। ১৪.১ ওভারে ১৪৫ রানের টার্গেট মিলিয়ে ভারতকে সেমি ফাইনালে পৌছে দেয়ার কৃতিত্ব তারই। ৩ চার, ৪ ছক্কায় ২১ বলে অপরাজিত ৫০। যুবরাজের সাথে ৬৬ রানের পার্টনারশিপে বড় অবদান তাঁরই। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার বিনির যোগ্য হাতেই উঠেছে।

কিন্তু, বিনি একটা প্রজন্মকে স্মৃতিতে ভাষায় না। হাই স্কুলের সেই দিন গুলোর দস্যিপনায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় না। ক্লাস ফাকি দিয়ে টিভি সেটের সামনে বসার অনুভূতি জাগায় না।

কিংবা ইউসুফ পাঠানের ৭ বলে অপরাজিত ২১! ব্রাভোর বল উড়েছে মিড উইকেট বাউন্ডারির উপর দিয়ে, নিশ্চিত ভারতের সেমি ফাইনাল। ডাগ আউটে জুড়েছে শিখর ধাওয়ানের ‘ভাংরা ড্যান্স’। ইউসুফ তার মধ্যেই ছুটেছেন সোজা গ্যালারি লক্ষ্য করে।

সন্তানকে গ্যালারি থেকে নামিয়ে এনেছেন সোজা সবুজ মাঠে। সন্তানকে না সন্তানদের? নিজের, না সতীর্থেরও? কে খোঁজ রাখে! উদযাপনটাই তো মূখ্য। ক্রিকেট সুন্দর, জীবন সুন্দর, স্মৃতিরা সুন্দর। ইলাস্টিকে বয়ে চলা সময়ের মতই সুন্দর।

Share via
Copy link