অস্ট্রেলিয়ান দূর্গ ‘গ্যাবাটোইর’ ধাঁধা

এই আধুনিক যুগে সৈন্য-লষ্কর নিয়ে মুরুদ-জানজিরা অভিযানে যাওয়ার কথা বলছি না। বরং দুনিয়ার আরেক প্রান্তে রাহানের সামনে এখন বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে আছে আরেক দূর্গ। রাহানেরা একবার চেষ্টা করতে পারেন সেই দূর্গের পতন ঘটাতে।

মুরুদ-জানজিরার নাম শুনেছেন, আজিঙ্কা রাহানে?

শোনার কথা। রাহানেও মহারাষ্ট্রের ছেলে। এই মুরুদ-জানজিরাও মহারাষ্ট্রের একটা দূর্গ দ্বীপ। নিশ্চয়ই তিনি ছোটবেলা থেকে এই দূর্গের অনেক গল্প শুনে বড় হয়ে উঠেছেন। তিনি নিশ্চয়ই জেনেছেন যে, কয়েক শ বছর ধরে এই দূর্গ কেমন অপরাজেয় হয়ে টিকে আছে। রাহানে নিশ্চয়ই জানেন যে, বাজি রাও থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় বীর চেষ্টা করেও এক দিনের জন্যও এই দূর্গের পতন ঘটাতে পারেননি।

তাহলে রাহানে নিজে একটা চেষ্টা করে দেখবেন নাকি!

না, এই আধুনিক যুগে সৈন্য-লষ্কর নিয়ে মুরুদ-জানজিরা অভিযানে যাওয়ার কথা বলছি না। বরং দুনিয়ার আরেক প্রান্তে রাহানের সামনে এখন বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে আছে আরেক দূর্গ। রাহানেরা একবার চেষ্টা করতে পারেন সেই দূর্গের পতন ঘটাতে।

হ্যা, সেই দূর্গের নাম গ্যাবা।

আনুষ্ঠানিক নাম হলো ব্রিসবেন আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। লোকে আদর করে বলে, গ্যাবা। গ্যাবা নামটা এসেছে জায়গাটার নাম থেকে। ব্রিসবেনের এই স্টেডিয়ামটা অবস্থিত উলুংগ্যাবা নামে একটা জায়গায়। এটাকেই ছোট করে বলা হয় গ্যাবা। তবে যে নামটা শুনলে মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়, সেটা হলো-গ্যাবাটোইর; মানে, অপরাজেয় গ্যাবা!

হ্যা, আক্ষরিক অর্থেই এই গ্যাবা অস্ট্রেলিয়ার জন্য এক অপরাজেয় দূর্গের নাম। এখানে নামলেই অস্ট্রেলিয়া যেনো হারতে ভুলে যায়। সোনালী যুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড বা ভারত; এই গ্যাবা থেকে জয় নিয়ে ফিরতে পারাটা একটা স্বপ্নের ব্যাপার।

আর এখানেই সিরিজ জেতার বা অন্তত ড্র করার স্বপ্ন নিয়ে আগামীকাল থেকে শেষ টেস্ট খেলতে নামতে হবে ভারতকে।

আচ্ছা, পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানো যাক গ্যাবার মাহাত্ম।

গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়া ৬২টি টেস্ট খেলেছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টি, হ্যা, ৮টি টেস্টে হেরেছে তারা কোনো দলের কাছে। সেই ১৯৩১ সাল থেকে এই একটা ভেন্যুতে মাত্র ৮ বার হারাতে পেরেছে তাদের কোনো সফরকারী দল।

এখানে সর্বশেষ কবে হেরেছে অস্ট্রেলিয়া, জানেন?

তখন এই ভারত-অস্ট্রেলিয়া দলের অনেক খেলোয়াড়ের জন্মই হয়নি। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া এখানে হেরেছিলো ভিভ রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। এরপর থেকে স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভেন স্মিথ থেকে এই টিম পেইন পর্যন্ত; অস্ট্রেলিয়ার কোনো অধিনায়ক এখানে আর ম্যাচ হারেননি।

কার্যত ওই আশির দশকেই চার বার গ্যাবায় ম্যাচ হেরেছিলো অস্ট্রেলিয়া। এর আগে পরে এই দূর্গের দেয়ালের প্রতিটা ইট অক্ষত থেকেছে। গ্যাবায় সফরকারীদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই ইংল্যান্ড সর্বোচ্চ চারটি ম্যাচ জিতেছে। এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩টি ম্যাচ জিতেছে এখানে। আর বাকী ম্যাচটি জেতার সৌভাগ্যবান দলটি নিউজিল্যান্ড।

রাহানের জন্য আরেকটা আতঙ্কের তথ্য বলা যাক-ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা; এশিয়ার কোনো দেশ গ্যাবায় কোনোদিন ম্যাচ জিততে পারেনি। বাংলাদেশ তো এখানে টেস্টই খেলেনি।

এবার বুঝতে পারছেন, আজ থেকে ভারত কোনো অগ্নিকুন্ডে ঝাপ দিতে যাচ্ছে?

ভারতের জন্য ব্যাপারটা দুই দিক থেকে আরও শোচনীয়। প্রথমত গ্যাবা কেনো অপরাজেয়? কারণ, এটা পেস বোলারদের স্বর্গ। একসময় ওয়াকা আর গ্যাবা ছিলো দুনিয়ার সবচেয়ে গতির দুই উইকেট। এখানে বলে ঝড় তুলতেন বোলাররা। সংষ্কারের পর গ্যাবা কিছুটা ভদ্রস্থ হলেও এখনও সম্ভবত সবচেয়ে বেশী গতি দেখাতে পারেন ফাস্ট বোলাররা এখানে।

এ হেন ফাস্ট বোলিং উইকেটে আবার রানও আছে। বাউন্সটা নিয়মিত, বল ব্যাটে ভালো আসে। তাই যারা গতিশীল বল সামলে খেলতে পারেন, তাদের এখানে রান করাটা আরাম। এখন ভারতের সেরকম ব্যাটসম্যানদের তালিকা করুন, তার মধ্যে লোকেশ রাহুল, হনুমা বিহারী, বিরাট কোহলিদের নিশ্চয়ই দরকার ছিলো। কিন্তু এই আগুনে উইকেটে এরা নেই ভারতের হয়ে খেলার জন্য।

মিশেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউডদের বলে যে আগুন বের হবে, সেটা সামাল দেওয়ার মত সলিড ব্যাটিং লাইনআপ ভারত নানা কারণেই এই টেস্টে পাচ্ছে না।

তবে আসল বিপদটা এখানেও নয়। আসল ব্যাপার হলো, ভারত এবার আগুনের জবাব আগুন দিয়ে দিতে এসেছিলো। তারাও গ্যাবায় চার ফাস্ট বোলার লেলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। এখন বিশ্বের অন্যতম ত্রাস সেই চার ফাস্ট বোলার কে কে?

জসপ্রিত বুমরাহ, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি ও ইশান্ত শর্মা।

এই কথা শুনলে তো রাহানের বুক ফেটে যাওয়ার কথা। ইনজুরির কারণে এই গ্যাবা টেস্টে মূল একাদশের চার ফাস্ট বোলারের কেউ খেলতে পারবেন না। মানে স্টিভেন স্মিথ, মার্নাস লাবুশেনকে টলানোর মতো গোলাই তো নেই ভারতের হাতে। তাহলে এই দূর্গের পতন কীভাবে হবে?

রাহানে অবশ্য ভেঙে না পড়ে জহির আব্বাসের সাথে কথা বলতে পারেন। জহিরকে পাওয়া কষ্ট হলে নিজেদের বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি তো আছেন। এই দু জন লোক অন্তত জানেন, গ্যাবা থেকে মাথা নিয়ে কিভাবে ফিরে আসতে হয়। এশিয়ার কোনো দেশ গ্যাবা জিততে পারেনি, এটা সত্যি। কিন্তু জহির আব্বাসের পাকিস্তান ও সৌরভের ভারত দুটি টেস্ট বাচাতে পেরেছিলো এখানে।

এখন দিনকাল যা পড়েছে, সেটা করতে পারলেও দূর্গ জয়ের কম হবে না!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...