সাদা থেকে রঙ্গিন পোশাকে পরিবর্তন ঘটলে বাংলাদেশ দলেরও রং বদলায়। একটু বেশি বদলায় যখন খেলাটা হয় পঞ্চাশ ওভারে। একদিনের ম্যাচই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রিয় ফরম্যাট। অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় এই ফরম্যাটের পারফরম্যান্সও তাই বলে। ভালো লাগার এই পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ প্রায় ছয় মাস পর।
সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের হারারেতে একদিনের ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, যাদের বিপক্ষে জিতলে উচ্ছাস প্রকাশের কিছু নেই তবে পরাজয় বয়ে আনবে একরাশ লজ্জা এবং হতাশা। পূর্নাঙ্গ সিরিজে তিনটি একদিনের ম্যাচের পাশাপাশি দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলবে আফগান দল। এই সিরিজের কিছু দিক একটু বেশিই আলোচনায় রয়েছে তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।
- ওয়ানডে সুপার লিগ এবং ওয়ানডে র্যাংকিং
২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি মূল পর্বের টিকিট কাটতে চাইলে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে শুরু হওয়া সুপার লিগের টেবিলে প্রথম সাতটি(ভারতসহ আটটি) দলের মাঝে একটি হতে হবে। সুপার লিগ মিশন ভালোভাবেই শুরু করা বাংলাদেশ টেবিলের দুইয়েই আছে; সুযোগ আছে টেবিল টপার হওয়ার।
তার জন্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেই হবে বাংলাদেশ দলের৷ অন্যদিকে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে থাকা বাংলাদেশের সামনে পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে ছয়ে উঠার সুযোগ রয়েছে; তবে প্রয়োজন ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। কঠিনই বটে,তবে অসম্ভব নিশ্চয়ই নয়।
- আফগান স্পিন জুজু
অজি কিংবা কিউই কন্ডিশনে ভ্রমন করলেই যেমন সবার আগে তাদের পেসার নিয়ে ভাবতে হয়,তেমনি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেললেই ব্যটারদের ভাবতে হয় আফগান স্পিনারদের নিয়ে। আফগানিস্তান দলে রশিদ, মুজিব, নবীদের নিয়ে তৈরি স্পিন আক্রমনভাগ যেকোনো দলের বিপক্ষেই ভয়ানক।
তবে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একটু বেশিই ভয়ে থাকেন আফগানী স্পিন নিয়ে, আগামীকাল শুরু হওয়া এই সিরিজে জুজু কাটিয়ে উঠতে পারা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জই বটে।
- আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ভয়হীন ক্রিকেট
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের এপ্রোচ নিয়ে। একটু যেন ডিফেন্সিভ মনে হয়, টি-টোয়েন্টির স্বভাবসুলভ ব্যাটিং যেন অলীক কল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছি বাংলাদেশের জন্য৷
সংবাদমাধ্যমের সামনে সবসময়ই ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কথা দেয়া হয় বিসিবি থেকে তবে মাঠের এগারোজন কতটুকু টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই আগ্রাসী মনোভাব দেখান তাই দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতে হচ্ছে দর্শকদের। নতুন ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্সের আগমনও তাদের প্রত্যাশার পালে হাওয়া দিচ্ছে।
- একগুচ্ছ নতুন মুখ, নতুন প্রত্যাশা
অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য ইবাদত হোসেনের লাল বলের ক্যারিয়ার সাদামাটা। নতুন বছরের শুরুর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স বাদ দিলে বলার মত কিছু থাকে না এই পেসারের। তবে সাদা বলে ঘরোয়া-তে নিয়মিত পারফর্ম করায় নির্বাচকরা তাকে সাদা বলেও বাজিয়ে দেখতে চাচ্ছেন। প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে।
অন্যদিকে বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদও ওয়ানডে দলে প্রথমবারের মত ডাক পেলেন। গত বছরের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ এবং সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলে ইতোমধ্যেই সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা মুনিম শাহরিয়ার ডাক পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি দলে।
তার সাথে কিছুদিন আগে টেস্ট অভিষেক হওয়া মাহমুদুল জয় এবং ইয়াসির রাব্বিও টি-টায়েন্টি দলের অংশ হয়েছেন। একেকটি নতুন মুখ,নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আসে। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পারবেন তারা তা সময়ই বলবে।
আরেকটি নতুন সিরিজ, আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা। ওয়ানডে-তে নিজেদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সুপার লিগে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা এবং টি-টোয়েন্টিতে ভয়ডরহীন ব্র্যান্ড ক্রিকেট খেলাটাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে বাংলাদেশের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য।