এ আরেক বিরাটের গল্প

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার বিবেচনা করা হয় তাঁকে। ফিটনেস এবং ডেডিকেশনের মাধ্যমে নিজেকে অন্যন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি। সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলে যাচ্ছেন তিনি।

নিজের খেলার জন্য যতটা প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি তাঁর থেকে বেশি সমালোচনা হয়েছে মাঠে তাঁর আক্রমণাত্মক আচরণ করার জন্য। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ একজন ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনা করা হত তাঁকে। তবে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আরো পরিণত করেছেন তিনি। এরফলে মাঠে তাঁর আচরণ নিয়ে সমালোচনা কমে গিয়েছে। বরং মাঠে এখন তাঁর স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়ে প্রশংসা করা হয়।

ক্রিকেট মাঠে তাঁর এই রকম স্পোর্টসম্যানশিপ আচরণ নিয়ে এই আয়োজন।

  • ইংলিশ ওপেনার হাসিব হামিদের প্রশংসা

২০১৬-১৭ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ইংল্যান্ড দলের হয়ে অভিষেক হয় ইংলিশ ওপেনার হাসিব হামিদের। অভিষেক সিরিজে বেশ দূর্দান্ত খেলছিলেন তিনি। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে উমেশ যাদবের বলে হাতের ইনজুরিতে পড়েন। এর ফলে মাঠ থেকে বের হতে হয় তাঁকে।

কিন্তু তিনি হাতের ইনজুরি নিয়েই আবার মাঠে নামেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন হাসিব হামিদ। ব্যাটিংয়ে নেমে জেমস অ্যান্ডারসনের সাথে জুটি গড়ে তোলেন এবং ৫৯ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।

হাসিব হামিদের এই ইনিংস মন জয় করে নেয় ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির। তিনি ম্যাচ শেষে হাসিব হামিদকে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থনা করি সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই পর্যায়ে বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন তিনি। তাঁর দল যখন তাঁকে মাঠে নামতে বলেছিলো সে বেশ ভালোভাবেই মেনে নিয়েছে। জেমস অ্যান্ডারসনের সাথে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন সেটা তাঁর পরিপক্কতাকে প্রমান করে দেয়। সে জানতো সে কি করতে চায়।‘

  • মোহাম্মদ আমিরের প্রশংসা

স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৫ সালে ক্রিকেটে ফেরেন মোহাম্মদ আমির। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামেন মোহাম্মদ আমির। পাঁচ বছর পর ক্রিকেটে ফিরে নিজেকে বেশ ভালোভাবেই প্রমাণ করেছিলেন আমির। এই ম্যাচের আগে ভারতীয় ব্যাটসম্যান আমিরের বেশ প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি সে (আমির) বিশ্বমানের বোলার। পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞায় না থাকলে সে শীর্ষসেরা তিন বোলারের মধ্যে একজন হতেন। তাঁর প্রচুর প্রতিভা আছে, সে বলে বেশ ভালো গতি এবং বাউন্স পাচ্ছে।‘

বিরাট কোহলির এই বক্তব্য সমর্থক মহলে বেশ প্রশংসা কুড়ায়।

  • ওয়াহাব রিয়াজের সাথে সৌজন্য

২০১৯ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এই ঘটনা ঘটান বিরাট কোহলি। এই ম্যাচে রোহিত শর্মা  এবং বিরাট কোহলি পাকিস্তানী বোলারদের চড়াও হয়ে খেলেন। তাঁদের ব্যাটে ভর করে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পায়। এর ফলে বিশ্বকাপের মঞ্চে পাকিস্তানের কাছে না হারার রেকর্ড গড়ে ভারত।

এই ম্যাচে ভারতের ইনিংসের সময় পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ তাঁর সর্বোচ্চ দিয়ে খেলছিলেন। বোলিং করার সময় তিনি পিচে পড়ে যান, এই সময়ে রান নিচ্ছিলেন বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। বিরাট কোহলি রান নেওয়ার সময়ে ওয়াহাব রিয়াজের পিঠে হাত রেখে তিনি ঠিক আছেন কিনা দেখেন। এই ঘটনা সারা বিশ্বের ক্রিকেট ফ্যানদের মন জয় করে নেয়।

  • স্টিভ স্মিথের পাশে

স্টিভ স্মিথ সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তিনি বল টেম্পারিং কান্ডের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর সমর্থকরা তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। তাঁকে মাঠে বেশ উত্যক্ত করা হত।

বিরাট কোহলি এবং স্টিভ স্মিথ দুই জন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও বিরাট কোহলির দর্শকদের কাছে অনুরোধ করেন তাকে উত্যক্ত না করার জন্য। স্টিভ স্মিথের পক্ষে চিয়ার এবং হাত তালি দিতে বলেন।

এই ঘটনার জন্য ২০১৯ সালে আইসিসির স্পিরিট অফ দ্য ক্রিকেট পুরষ্কার পান। এর পাশাপাশি আইসিসি স্পিরিট অফ দ্য ক্রিকেট অফ দ্য ডেকেডের জন্য মনোনীত হন।

  • কেএস ভারতের হাতে ট্রফি

কে এস ভারত, এখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা একজন ভারতীয় উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। এই ঘটনা ঘটেছিলো ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভার‍ত ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজে। এই সিরিজে প্রথমবারের মত গোলাপী বলের টেস্ট খেলে ভারত এবং বাংলাদেশ।

কলকাতায় গোলাপী বলের টেস্ট জয়ের পর সিরিজ জয়ের ট্রফি নেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এরপর সাবেক অধিনায়ক ধোনির তৈরি করা ঐতিহ্য অনুযায়ী কে এস ভারতের হাতে ট্রফি তুলে দেন  কোহলি। এই সিরিজে ভারতের তখনকার নিয়মিত উইকেট রক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাক আপ উইকেট রক্ষক হিসেবে ছিলেন। এই সময়ে ঋষাভ পান্ত রাজ্যদলের হয়ে সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি খেলছিলেন। এই কারণে এই সময়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link