উইকেটের পেছনে, কিংবা অন্য কোথাও

উইকেটরক্ষকের কাজটা ক্রিকেট মাঠে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড, কিন্তু খুবই জরুরী। সাধারণত, উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো মানুষটির কাজটা খালি চোখে বোঝা যায় না। তখনই বোঝা যায়, যখন তিনি ভুল করেন। তাই, ক্রিকেটের একদম গোড়া থেকেই উইকেটরক্ষকরা হন নিজের জায়গায় স্পেশালিস্ট।

তবে, সময় যত এগোচ্ছে উইকেটরক্ষকের কাজে বা ধরণে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আজকালকার উইকেটরক্ষকরা আবার একেকজন অলরাউন্ডার। কারণ নিজেদের উইকেটকিপিং বাদেও তাঁদের মন দিতে হয় ব্যাটিংয়ে। তািই দেখা যায় – একটা দলে, অনেক সময় একটা একাদশেই একাধিক উইকেটরক্ষক থাকেন।

কিন্তু, উইকেটের পেছনে তো আর সবাই দাঁড়াতে পারবেন না। তাই, মাঠের অন্য কোথাও ঠাঁই হচ্ছে উইকেটরক্ষকদের। সেখানেও দেখা যাচ্ছে অনেকেই বেশ দারুণ ফিল্ডার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উইকেটের পেছনে ‘হিট’, মাঠের অন্য জায়গাগুলোতেও ‘ফিট’ – এমন সব ক্রিকেটারদের নিয়েই আমাদের এবারকার আয়োজন।

  • সাঞ্জু স্যামসন (ভারত)

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে পজিশনে সাঞ্জু স্যামসন খেলতে চেয়েছেন সে পজিশনে খেলতে পারেননি তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেটের পিছনে ফিল্ডিং না করেও বেশ সামনে এগিয়ে ছিলেন তিনি।

সাঞ্জু স্যামসন জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এই সাত ম্যাচে বেশ দূর্দান্ত সব ফিল্ডিং করেছেন তিনি। বাউন্ডারি লাইনে দাড়িয়ে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করেছেন সাঞ্জু স্যামসন। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মিড উইকেট বাউন্ডারি লাইনে বেশ দূর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছিলেন স্যামসন। উইকেট টি ছিলো স্টিভ স্মিথের। এছাড়াও লং অন বাউন্ডারিতেও বেশ ভালো এক ফিল্ডিং করেছিলেন তিনি।

এই কাজটি করার সময় তিনি বাতাসে ভেসে ছিলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তিনি বাউন্ডারি লাইনের বাইরে চলে যাচ্ছেন। তারপরও বলটি তিনি মাঠের ভিতরে ঠেলে দেন এবং বিপক্ষ দলে চার হওয়া থেকে বাঁচান। তাঁর এই ফিল্ডিং ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং ক্রিকেট সমর্থক কারোরি দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং ক্রিকেট সমর্থকরা এই ফিল্ডিংকে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ফিল্ডিং হিসেবে বিবেচনা করেছে।

স্যামসনের শুভাকাঙ্খীরা তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারা জাতীয় দলে স্যামসনকে বেশিদিন দেখবেন বলে মনে করেন না। কারণ স্যামসনের ব্যাটিংয়ে বেশ অনিয়মিত পারফর্ম করেন। যদি তিনি নিয়মিত দলে পারফর্ম করতে পারেন তাহলে তাকে জাতীয় দলে তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত ক্রিকেটার খুবই কম আছে। জাতীয় দলের হয়ে ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন যদি তিনি ব্যাটিংয়ে নিয়মিত রান করতে পারেন।

  • জশ বাটলার (ইংল্যান্ড)

জশ বাটলার উইকেট রক্ষক এবং ব্যাটসম্যান দুই অবস্থানেই বেশ দূর্দান্ত। তাকে এই দুই অবস্থান থেকে সরানো ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজমেন্টের জন্য বেশ কষ্টকর। উইকেটের পিছনে দাঁড়ানো নিয়ে বাটলার এবং জনি বেয়ারস্টোর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের হয়ে উইকেটের পিছনে দাড়িয়েছেন তিনি এবং দূর্দান্ত কিছু ক্যাচ ধরেছেন।

যদি বাটলার উইকেটের পিছনে না দাড়ান তাহলে তিনি স্লিপ এবং ডিপ অঞ্চলে বেশ দূর্দান্ত ফিল্ডিং করেন। এছাড়াও ফিল্ডিংয়ের সময় বল থ্রো করতে এবং বলের পিছনে বেশ ভালো দৌড়াতে পারেন। এর কারণে ব্যাটসম্যানরা তাঁর ফিল্ডিংয়ে সহজে দুই রান নিতে পারেনা। তিনি উইকেটের পিছনে ন দাড়ালে ইংল্যান্ড দল তাকে একজন আক্রমণাত্মক ওপেনার কিংবা ফিনিশার যেকোনো স্থানে খেলাতে পারে।

লাল বলে ইংল্যান্ড দলের নিয়মিত উইকেট রক্ষক হিসেবে খেলেছেন তিনি। এই সময়ে খুব দ্রুত স্ট্যাম্পিং করার জন্য তিনি বল নিতে পারেন এবং এই কারণেই তিনি বেশ বাহবা পেয়েছেন। তাঁর এই ধরনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার কারণে ইংল্যান্ড দলে তাঁর অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত হয়েছে এবং ইংল্যান্ডের বর্তমান লাইন আপের গুরুত্বপূর্ন সদস্যে পরিণত হয়েছেন।

  • হেইনরিখ ক্লাসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)

হেইনরিখ ক্লাসেন একজন বিশুদ্ধ উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। কিন্তু তিনি জাতীয় দলে এই পজিশনে খুবই কম সময় খেলতে পেরেছেন। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এই পজিশনে নিয়মিত খেলতেছেন দলের সাবেক অধিনায়ক এবং সেরা উইকেট রক্ষক কুইন্টন ডি কক।

২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজে অবিশ্বাস্য এক সিরিজ খেলেন। এই সিরিজের সময়ে তিনি বুঝতে পারেন উইকেট কিপিং দিয়ে জাতীয় দলে নিজের অবস্থান ধরে রাখা বেশ কষ্টকর হবে তাঁর জন্য। এই দীর্ঘদেহী প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান নিজের দিনে বিপক্ষে দলের যেকোনো বোলিং লাইন আপের উপর তান্ডব চালাতেন পারেন। মাঠের বাউন্ডারি লাইন যতই বড় হোক না কেন সেটা তাঁর জন্য কোনো সমস্যা নয়।

জাতীয় দলে তাঁর অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে তিনি যেকোনো সময় দলের প্রয়োজনে উইকেট কিপিং করতে পারেন। উইকেট কিপিংয়ের বাইরে বেশ দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিয়মিত জাতীয় দলে খেলে যাচ্ছেন তিনি এবং দূর্দান্ত ফিল্ডিং করে যাচ্ছেন। তাঁর দলে থাকাটা দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ব্যাটিং গভীরতা বেশ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং দলের ব্যাটিং শক্তি বেশ খানিকটা এগিয়ে দিচ্ছে।

  • ম্যাথু ওয়েড (অস্ট্রেলিয়া)

ম্যাথু ওয়েড এমন ক্রিকেটার যিনি কিনা দলের বৃহত্তর স্বার্থ যেকোনো অবস্থায় খেলতে পারেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার সব সংস্করণেই উইকেট রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে টেস্ট দলে টিম পেইন এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অ্যালেক্স ক্যারির কাছে জায়গা হারান তিনি। এরপরে ঘরোয়া ক্রিকেটে আবারো দূর্দান্ত পরিশ্রম করে দলে আসেন ম্যাথু ওয়েড।

ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর নিয়মিত পারফর্মেন্স তাকে জাতীয় দলে ফেরত এনেছে এবং সব সংস্করণ জুড়েই অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। সেখানে তিনি খেলেছেন একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি অধিনায়ক এবং উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ দূর্দান্ত পারফর্ম করেছেন।

ম্যাথু ওয়েড উইকেটের পিছনে বেশ সফল এবং তিনি উইকেটের পিছনে থাকাকালীন সময়ে সব ধরনের সুযোগ নেন।সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়েড একটি স্ট্যাম্পিং মিস করার পর ভারতীয় ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ানকে বলছেন তিনি (ওয়েড) ধোনির মত এতো দ্রুত স্ট্যাম্পিং করতে পারেননা। যদি ম্যাথু ওয়েড কোনো টেস্ট ম্যাচে উইকেট রক্ষক হিসেবে না খেলেন তাহলে তাকে বেশিরভাগ সময় শর্ট লেগে ফিল্ডিং করতে দেখা যায়। এছাড়াও মাঠের অন্যান্য অংশেও তাকে ফিল্ডিং করতে দেখা যায়। এই থেকেই খেলার প্রতি তাঁর আবেগ প্রমাণিত হয়।

  • কুশল পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)

এই শ্রীলংকান ব্যাটসম্যান মূলত পরিচিত তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য। তিনি একাই বিপক্ষে দলের বোলিং লাইন আপের উপর তান্ডব চালাতে পারেন এবং একাই ম্যাচ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারেন।

কুশল পেরেরা তাঁর দলের জন্য নিজের সেরা ফর্ম সবসময় নিয়ে আসতে চান। যাতে তার দল তাঁর পরিশ্রমের ফলাফল পায়। তিনি উইকেটের পিছনেও বেশ দক্ষ এবং উইকেটের পিছনে আমরা তাকে বেশ কিছু দূর্দান্ত ক্যাচ নিতে দেখেছি।

দলে একজন বিশেষজ্ঞ উইকেট রক্ষক নিরোশান ডিকওয়েলাকে জায়গা দিতে গিয়ে কুশল পেরেরাকে মাঠের অন্য অংশে নিয়মিতই ফিল্ডিং করতে হচ্ছে। মাঠের অন্যান্য অংশেও বেশ দূর্দান্ত ফিল্ডিং করছেন তিনি।

দূর্ভাগ্যবশত নিরোশান ডিকওয়েলা ব্যাট হাতে নিয়মিত রান করতে পারছেন না। এর ফলে তাঁর জায়গায় আবারো কুশল পেরেরাকে দেখা যেতে পারে। যদি কুশল পেরেরাকে আবারো উইকেটের পিছনে দেখা যায় তাহলে বেশ ভালো একটা ব্যাপার হবে। কারণ কুশল পেরেরা উইকেটের পিছনে দাঁড়াতে বেশি ভালোবাসেন। আর এর ফলে উইকেটের পিছনে বেশ কিছু দুর্দান্ত ক্যাচ ধরতে দেখা যাবে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link