আইপিএলের বিস্ময়কর ‘ছাড়’

আগামী বছর আইপিএলের ‘মেগা অকশন’ হবে। ফলে এ বছর নিলামে খুব বেশি বড় তারকা থাকার কথা ছিলো না। মনে করা হয়েছিলো, এবার সবগুলো দলই অন্তত তারকা খেলোয়াড়দের ধরে রাখবে। কিন্তু তা হয়নি। প্রায় সব দলই কিছু তারকা ছেড়ে দিয়েছে।

ফলে এ বছরের ‘মিনি অকশন’ও হয়ে উঠতে যাচ্ছে আকর্ষনীয়।

এবার দলগুলোর ছেড়ে দেওয়া কিছু তারকার নাম দর্শকদের চোখ কপালে তুলেছে। স্টিভেন স্মিথ থেকে মুজিব-উর রহমান; এসব তারকাকে কে দলগুলো ছেড়ে দেবে, এটা কল্পনা করা যায়নি।

আসুন দেখে নেওয়া যাক এবার আইপিএলে ছেড়ে দেওয়া চমকপ্রদ ৫ তারকাকে।

 

  • স্টিভেন স্মিথ (রাজস্থান রয়্যালস)

ভারত দল যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে, তখন থেকেই স্মিথকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে গুজব শোনা যাচ্ছিলো। কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস এই মেগা অকশনের আগের বছরে স্মিথকে ছেড়ে দেবে, এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না।

ধরে নেওয়া যায়, রাজস্থানকে কোনো শিরোপা এনে দিতে না পারায় তারা তাদের অধিনায়ককে নিয়ে এই শক্ত সিদ্ধান্ত নিলো। নতুন মৌসুমের জন্য রাজস্থান অধিনায়ক হিসেবে সানজু স্যামসানের নাম ঘোষনা করেছে।

কিন্তু ব্যাটসম্যান স্মিথের যে পারফরম্যান্স আইপিএলে, তাতে তাকে ছেড়ে দেওয়াটা বিষ্ময়কর ব্যাপার। ৯৫ ম্যাচে তিনি ২৩৩৩ রান করেছেন; গড় ৩৩-এর ওপরে এবং স্ট্রাইক রেট ১৩০-এর ওপরে। তবে গত বছর তার পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিলো না। ফলে দলে রাখলেও তাকে একাদশে নেওয়া নিয়ে হয়তো একটা দ্বিধা থাকতে পারে।

  • অ্যারন ফিঞ্চ (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)

এই দলটির জন্য অবশ্য কাজটা নতুন কিছু নয়। তারা প্রতি মৌসুমেই বেশ কয়েক জন তারকা খেলোয়াড় ছেড়ে দেয়। আবার নিলাম থেকে কয়েক জনকে কেনে। বিরাট কোহলি ছাড়া তারা দল স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে খুব আগ্রহী কখনোই ছিলো না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সীমিত ওভারের অধিনায়ককে ছেড়ে দেওয়াটা তারপরও বিষ্ময়কর।

ব্যাঙ্গালুরু দলের সাফল্যের খরার মধ্যে তাকে বড় অবলম্বন মনে করা হচ্ছিলো। বিশেষ করে কোহলিকে তিনি ট্যাকটিক্যাল কিছু জায়গায় সমস্যা হলো, ফিঞ্চের গত মৌসুমটা একেবারেই ভালো যায়নি। ১২ ম্যাচে তিনি মাত্র ২৬৮ রান করতে পেরেছিলেন।

এই ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে থেকে ফিঞ্চের আরও একটা আইপিএল দলে খেলার সম্ভাবনা তৈরী হলো। এখন পর্যন্ত ফিঞ্চ আটটি দলে আইপিএল খেলেছেন। কেবল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংসে খেলেননি কখনো। এবার এই দুই দলের একটাতে ডাক পেলে নতুন একটা দল পাবেন তিনি।

  • মুজিব উর রহমান (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)

২০১৮ সালে তাকে দলে ভিড়িয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলো পাঞ্জাব। সে সময় অবিশ্বাস্য মূল্যে বিক্রি হয়েছিলেন মুজিব। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সাথে ভালো একটা জুটিও করতে পেরেছিলেন।

প্রথম মৌসুমে ১১ ম্যাচে ১৪ উইকেট পেয়েছিলেন। পরের মৌসুমে অবশ্য বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি; জাতীয় দলে ব্যস্ত ছিলেন। আর গত মৌসুমে খুব বেশি খেলারও সুযোগ পাননি। মাত্র দুটি ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়েছিলো।

পাঞ্জাব এখন স্পিনে মূলত তরুনদের মধ্যে রবি বিষ্ণয় ও কে গৌতমের ওপর নিরআভর করছে। এদিকে বিগ ব্যাশেও এবার খুব একটা সুযোগ পাননি মুজিব।

তারপরও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সম্পদ মনে করা হয় এই আফগান তারকাকে। সেখানে তাকে ছেড়ে দেওয়াটা একটু চোখে লেগেছে বৈকী!

  • ক্রিস মরিস (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)

ক্রিস মরিস একটা বিষ্ময়ের মধ্যেই সময় কাটাচ্ছেন। ১০ কোটি রূপী দিয়ে তাকে কিনলো ব্যাঙ্গালুরু। এই অলরাউন্ডারের মধ্যে এতো টাকা দিয়ে কেনার কি আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছিলো না।

৯ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে মোটামুটি তিনি নিজেও কম চমক দেননি। তার চেয়ে বড় চমক হলো সেই মরিসকেই এক বছর পর তারা ছেড়ে দিচ্ছে!

গত মৌসুমে ব্যাঙ্গালুরুর সবচেয়ে নিয়মিত বিদেশী ছিলেন মরিস। প্রতিটা ম্যাচে বল করেছেন। মনে হচ্ছিলো, তাকে নিয়ে দলটির পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, ব্যাঙ্গালুরুর ভবিষ্যত পরিকল্পনায় তিনি ছিলেন না।

একদিকে ডেল স্টেইন ২০২১ সালে খেলছেন না। অন্য দিকে মরিসকেও ছেড়ে দিলো। ব্যাঙ্গালুরুকে এখন বোলিংটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

  • গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)

ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে গত মৌসুমে কম কথা হয়নি। পাঞ্জাবের হয়ে তার ব্যর্থতার কারণে যাচ্ছেতাই সমালোচনা হয়েছে এই অলরাউন্ডারের। ধারাভাষ্য থেকে বীরেন্দর শেবাগ তাঁকে ‘চিয়ার লিডার’ পর্যন্ত বলেছেন।

কিন্তু এক মৌসুমে যে ম্যাক্সওয়েলের জাদু শেষ হয়ে যায়নি, তার প্রমাণ তিনি ক দিন পরই দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দূরন্ত সময় কাটিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। তিনি ভারতকেই হারিয়েছেন।

মনে করা হয়েছিলো, এরপর ম্যাক্সওয়েলকে পাঞ্জাব রেখে দেবে। কিন্তু তা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link