বিশ্বকাপটা বিরাট কোহলির। গোটা বিশ্বই বিরাট কোহলির। একা হাতেই তো করছেন শাসন। রেকর্ডের বইটা রীতিমত করে দিচ্ছেন তছনছ। ভারতের জার্সিতে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান এখন তার দখলে। তিরাঙ্গা মাথায় নিয়ে সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ রানও তারই করা। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরিও করে ফেললেন ‘কিং কোহলি’।
রোহিত শর্মার গড়ে দেওয়ার ভীতের উপর দাঁড়িয়ে দলকে ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বিরাটের। সেটাই করেছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডকে ছিটকে দিয়েছেন ম্যাচ থেকে। ১১৭ রানের একটা ইনিংস খেললেন বিরাট। তাতেই তো রানের পাহাড় হয়েছে এভারেস্ট সমান।
এর আগে তিনখানা সেমি-ফাইনাল খেলেছেন বিরাট। তাতে কখনোই দুই অংক ছাড়ায়নি তার রান। তবে এবারের বিশ্বকাপটা যেন একেবারেই ভিন্ন। বিরাটের শেষ বিশ্বকাপে ‘বিরাট’ কিছু হবে না তা কি আর হয়! তিনি দৌড়ে বেড়িয়েছেন, তিনি বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন। শেষ অবধি থেমেছেন ১১৭ রানে।
ক্লান্তি যেন তাকে ছুঁয়েই দেখে না। কোন প্রতিবন্ধকতাই যেন তাকে আটকাতে পারে না। তিনি অপ্রতিরোধ্য। তিনি দুর্দমনীয়। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই বিরাটের শাসন চলমান। ধারাবাহিকতার এক অনন্য উদাহরণে পরিণত হয়েছেন তিনি।
ভারত দলটার দূর্নিবার হয়ে ছুটে চলার রাস্তায় তিনি সামলেছেন গাড়ির স্টিয়ারিং। দলের ব্যাটিংটাকে সঠিক পথে রেখেছেন পুরোটা সময় জুড়ে। এমনকি সেমিফাইনালেও ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে খেলে গেছেন একেবারে সাবলীল ভঙ্গিমায়।
তার বিরুদ্ধে কোন রকম পরিকল্পনাই যেন ফলপ্রসূ হওয়ার নয়। নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা ফাঁদ পেতেছিলেন শর্ট মিড-অফে। সেই ফাঁদে পা দেননি। অফ সাইড আটকে ফেলেও আটকানো যায়নি বিরাটকে। আত্মবিশ্বাস আর নিজের উপর থাকা নিয়ন্ত্রণে তিনি শর্ট কাভার ও শর্ট মিড-অফের মাঝের স্বল্প ফাঁকা দিয়েও সিঙ্গেলস বের করেছেন।
বিচক্ষণতা আর ক্রিকেটীয় জ্ঞানের মিশ্রণে তিনি প্রতিপক্ষের সকল পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারেন যেকোন মুহূর্তে। সেটাই করেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর সেই যাত্রায় তিনি বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম ব্যাটার বনে গেলেন। সেমিফাইনালে এর আগে কেবল চারজন ব্যাটারই পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। শেষ তাও বছর ১৬ আগের। ২০০৭ বিশ্বকাপে মাহেলা জয়াবর্ধনে করা সেঞ্চুরি।
ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয়বার সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন বিরাট কোহলি। প্রথমটা ২০০৩ বিশ্বকাপে করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। এরপর প্রায় লম্বা সময় বাদে বিরাটের ব্যাটে নীল রাঙা সেঞ্চুরির দেখা। এই সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে বিরাট ছাপিয়ে গেলেন শচীন টেন্ডুলকারকে।
এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন বিরাট কোহলি। তাছাড়া মাস্টার ব্লাস্টারের ৪৯টি সেঞ্চুরির রেকর্ড আগেই ছুয়েছিলেন বিরাট। সেমিফাইনালের মাহেন্দ্রক্ষণে তিনি পেয়ে গেলেন ৫০ তম সেঞ্চুরি। চলে গেলেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তাকে স্পর্শ করাই যেন এখন রীতিমত হিমশীতল অ্যাটলান্টিক পারি দেওয়ার শামিল।
এমনকি শচীন ছাড়াও সাকিব আল হাসানকেও টপকে গেলেন বিরাট। এক বিশ্বকাপে আটটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের মালিক এখন ভারতের প্রাণভোমরা বিরাট। এত এত রেকর্ড তিনি স্রেফ করলেন একটি ম্যাচে। যে ম্যাচেই তার এমন এক ইনিংসই ছিল প্রত্যাশিত।
বিরাট প্রত্যাশা মিটিয়েছেন। এবার গোটা দলের মেটাবার পালা। ২০১১ সালে ভারত দল বিশ্বকাপটা শচীনের জন্যেই সম্ভবত জিতেছিল। এবার পালা বিরাটের জন্যে জেতার। বিরাট অবশ্য সে পথটা দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সময় বলে দেবে বিরাটের শ্রেষ্ঠত্বে আরও এক পালক যুক্ত হবে কিনা। হয়ে যাবে নিশ্চয়ই!