২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও তিনি স্পিন-দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন। ৪ বছর বাদে এখন জাতীয় দলে এসেও নজর কাড়ছেন। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের সিরিজ জয়ের নায়ক তিনি। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চোখ রাখছেন এ স্পিনার। ভারতের হয়ে রবি বিষ্ণয়ের গল্পটা এগোচ্ছে দুর্দান্ত ভাবেই।
বরাবরই ভারতের একাদশে সুযোগ পেতে দলের মধ্যে বইয়ে যায় এক রকমের সুস্থ্য প্রতিযোগিতা। এই যেমন স্পিন বোলিং ইউনিটেই রয়েছে কত নাম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বোলার যুজবেন্দ্র চাহাল। তিন ফরম্যাটেই সমান তালে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাঁর বিকল্প হিসেবে আবার রয়েছেন অক্ষর প্যাটেল। সাদা বলের ক্রিকেট বিবেচনায় কুলদ্বীপ যাদবের নামটা আগে আনতেই হয়। আবার জাতীয় দলের রাডারে আছেন ওয়াশিংটন সুন্দর, বরুণ চক্রবর্তীরও নাম।
এতগুলো বিশ্বমানের স্পিনারদের মধ্যেও রবি বিষ্ণয়ের নাম এখন টক অব দ্য টাউন। তাঁর উপস্থিতিতে দলে জায়গা মিলছে না চাহালেরও। সব মিলিয়ে প্রশ্ন এখন একটাই, এই মুহূর্তে রবি বিষ্ণয়ই কি ভারতের লাইনআপে থাকা সেরা লেগ স্পিনার? তর্ক-সাপেক্ষে সেটা মেনে নেওয়াতে অবশ্য কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ২১ ম্যাচে ৩৪ উইকেট নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ৯ উইকেট নিয়ে এক সিরিজে ভারতীয় স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও তিনি গড়েছেন। সব মিলিয়ে ২৩ বছর বয়সী এ লেগিকেই ভারতের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিষ্ণয়কে নিয়ে স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের একই সুর। তাঁর মতে, বিষ্ণয় কুইক ডেলিভারি যেমন দিতে পারে, আবার স্লাইডারও দিতে পারে। স্পিন সহায়ক উইকেটে তাঁর বল খেলা ব্যাটারদের জন্য বেশ কঠিন হবে।
রবি বিষ্ণয়ের লেগ স্পিনে তেমন টার্ন তিনি আদায় করতে নিতে পারেন না। তবে তিনি এক টানা অফস্ট্যাম্প বরাবর বল করে যান। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও তিনি বল স্কিড করাতে পারেন। আর এ কারণেই তিনি প্রতিপক্ষে ব্যাটারকে চাপে ফেলতে পারেন সহজেই। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়ার জায়গাটাও এখানে।
এমনিতে স্পিন সহায়ক উইকেটে দুর্দান্ত স্পিনারের কোনো অভাব নেই ভারতের। তবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট কিংবা ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে পারবে, এমন স্পিনারই এই মুহূর্তে দরকার। কন্ডিশনের কারণেই চাহাল তাঁর ৭ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ১ টা বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছেন। অথচ এই সময়কালে জাতীয় দলে তিনি নিয়মিত মুখই ছিলেন।
রবি বিষ্ণয় ঠিক এই জায়গাতেই ছাপিয়ে যেতে পারেন চাহালকে। তাঁর সামনে এখন অপেক্ষা অপার সম্ভাবনা। তবে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দৌড়ে তাঁর জায়গাটা এখনই পাকা নয়। কেননা, তার আগেই হবে আইপিএল। আর এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সই বিবেচ্য হবে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে।
সে হিসেবে চাহালের জন্য এখনও জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। আবার বরুণ চক্রবর্তী, ওয়াশিংটন সুন্দররাও থাকবেন সেই দৌড়ে। সব মিলিয়ে পারফর্ম করেই বিশ্বকাপ দলের সুযোগ আদায় করে নিতে হবে বিষ্ণয়কে।
বয়স কেবল ২৩। এরই মধ্যে গায়ে তকমা লেগেছে ভারতের সেরা লেগস্পিনারের। অনিল কুম্বলের পর আর কোনো লেগস্পিনার সেভাবে কিংবদন্তির পথে হাঁটেননি। সেই যাত্রায় নিশ্চয়ই চোখ রাখবেন রবি বিষ্ণয়।