শরীর জুড়েই তার লেপ্টে আছে টেস্ট খেলোয়াড় তকমা। তাইতো সাদা পোশাকে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেন তাইজুল ইসলাম। সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। দারুণ পারফরমেন্সের ঝলক দেখিয়েছেন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও।
শুরুটা অবশ্য চোখ ধাঁধানো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে। চা বাগানের কোল জুড়ে থাকা স্টেডিয়ামের তিনি দেখালেন বা-হাতের কারিকুরি। তাতে করে তো তার ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়েছে কীর্তি। দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ১০ খানা উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে তো নিউজিল্যান্ডের ছয় ব্যাটারকে নিয়েছিলেন নিজের পকেটে। তাতে করে ক্যারিয়ারের ১২ তম ফাইফার পেয়ে যান তাইজুল ইসলাম। সেই সাথে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় দফা এক টেস্টে দশ উইকেট পাওয়ার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। যদিও আগের স্বাদে ছিল খানিক তিক্ততা। ম্যাচ হারের। তবে এবারের স্বাদ যেন ছিল অমৃত। তার বোলিং নৈপুন্যেই তো নিউজিল্যান্ডকে হারানো গিয়েছিল ঘরের মাঠে, তাও আবার প্রথমবারের মত।
এমনকি কেন উইলিয়ামসনের মত ব্যাটারকে দুই ইনিংসেই ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। উইকেট শিকারের সেই ধারা তাইজুল অব্যাহত রেখেছিলেন ঢাকা টেস্টেও। স্পিনারদের স্বর্গে তার ঝুলিতে গিয়েছে মোট ৫ উইকেট। প্রতিপক্ষের ১৬টি উইকেটই নিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা।
মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে খানিক লড়াই হয়েছে উইকেট শিকারের। মিরাজ এক উইকেট বেশি পেয়েছেন তার থেকে। তবে তাইজুলের সৃষ্টি করে দিয়ে যাওয়া চাপের ফায়দাই তুলেছেন দলের বাকি বোলাররা। সেখানেই মূলত তাইজুলের কার্য্যকারিতা আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়।
দলের নিয়মিত ও সেরা বা-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান ছিলেন না। তার অবর্তমানে নিউজিল্যান্ডের মত পূর্ণ শক্তির বিপক্ষে তাইজুলকেই বোলিংয়ের দায়িত্বটা নিতে হতো। অভিজ্ঞতার বিচারে সে কাজটি তিনি করেছেন ভালভাবেই। যদিও শেষ ম্যাচটায় জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
সেই আক্ষেপ ঝড়েছে তাইজুলের কণ্ঠে। সিরিজ সেরার পুরষ্কার নেওয়ার সময়ই জানান দলকে জেতাতে পারলেই খুশি হতেন তিনি। তবে তাইজুল অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে চাইলে খুশি হতেই পারেন। কেননা এই পারফরমেন্স অন্তত তাকে লম্বা সময় ধরেই দেবে মানসিক প্রশান্তি, তাতে করে নিজেকে আরও ধারালো করতে পূর্ণ মনোযোগই দিতে পারবেন তাইজুল।
খানিকটা মানসিক অবসাদগ্রস্ত তার হয়ে পড়ারই কথা। সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত নন। তিনি কখনোই সুযোগটা পান না। ১৮ ম্যাচে ৩০ উইকেট শিকার করার পরও ব্রাত্য থেকে গেছেন তিনি। এমনকি বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে দলের ভাবনাতেও ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাকে ছাড়াই উড়াল দেয় দল। অথচ অভিজ্ঞতা বিচারে তিনি সুযোগ পেতে পারতেন দলে।
সেই বিষয়টি খানিকতা অবসাদগ্রস্ত করেই তুলতে পারে তাইজুল ইসলামকে। তবে সেই অবসাদ ঝেড়ে ফেলে তাইজুল বারংবার ফিরে এসেছেন ‘রেড চেরি’ হাতে নিয়ে। লম্বা বিরতির পর টেস্ট ক্রিকেটে খেললেও তার পারফরমেন্সের ঘাটতি চোখে পড়ে খুব স্বল্পই। তাইতো কেন উলিয়ামসনদের ফাঁদে ফেলতে পারেন তিনি অনায়াসে।