বাংলাদেশে তখন দিনের আলো পুরোপুরি ফুটে উঠেনি, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে সবে আড়ামোড়া ভাঙ্গতে শুরু করেছিল সবাই; সুদূর নেপিয়ারে ততক্ষণে অবশ্য একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে, বোলারদের নির্দয় তান্ডবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন ব্যাটাররা। বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ধ্বসে পড়া ব্যাটিং লাইনআপ টাইগারদের এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই, কেননা এবার গল্পে বিধ্বস্ত হয়েছে কিউইরা।
বাইশ গজে এমন অভাবনীয় ঝড় তোলার পেছনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের একজন সৌম্য সরকার। শরিফুল ইসলাম আর তানজিম হাসান সাকিবের মত বিশেষজ্ঞ পেসারদের সাথে পাল্লা দিয়ে উইকেট তুলেছেন তিনি – শেষপর্যন্ত ১৮ রানের বিনিময়ে তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে থেমেছেন। আর এতেই নিজের সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পেলেন এই তারকা।
পিচে ঘাসের পুরু আস্তর, টসে জিতে নাজমুল হোসেন শান্ত তাই ফিল্ডিং নিতে দুইবার ভাবেননি। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করে পাওয়ার প্লের মধ্যেই দুই উইকেট তুলে নেন সাকিব; এরপর শরিফুলও নাম তোলেন স্কোরবোর্ডে। দুজনের অপ্রতিরোধ্য বোলিংয়ে ৭০ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা কিউইরা যখন প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিল তখনি আঘাত হানেন সৌম্য।
টানা তিন ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিকদের একশ রানের আগেই অলআউট করার লজ্জায় ডোবান তিনি। বলের গতি খুব বেশি না হলেও এদিন দারুণ সুইং দেখা গিয়েছিল তাঁর বোলিংয়ে। জস ক্লার্কসন আর অ্যাডাম মিলনে দুজনকেই ইনসুইংয়ে বোল্ড করেছেন এই ডানহাতি বোলার; অন্যদিকে আদিত্য অশোককে আউটসুইংয়ে বোকা বানান।
উপরের সারির ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও লেজের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষেই অনেকবার এমন হয়েছে, লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটিং ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সৌম্যর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি নেপিয়ারে, বাংলাদেশও তুলে নিয়েছে বড় জয়।
তরুণ অধিনায়ক শান্তও একটা ধন্যবাদ পেতে পারেন; পিচে পেসাররা সুবিধা পাচ্ছে বুঝতে পেরে এই পার্ট টাইমারকে দিয়ে টানা বল করিয়েছিলেন। সেসময় মুখস্ত ট্যাকটিক্স বিবেচনায় মেহেদি মিরাজ, রিশাদ হোসেনের মত স্পেশালিস্ট বোলারকে ব্যবহার করলে হয়তো এমন বোলিং দেখানোর সুযোগ পেতেন না তিনি।
সাকিব আল হাসান না থাকায় অলরাউন্ডার কোট পূরণ করতেই দলে নেয়া হয়েছিল আলোচনার বাইরে থাকা সৌম্য সরকারকে। সেসব নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হয়েছে, তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলে ভরসার প্রতিদান দিয়েছেন এই ওপেনার। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে নিজের বোলিং সত্তার প্রমাণ দিয়েছেন, অন্তত পেস বান্ধব উইকেটে তিনি যে পার্ট টাইমারের চেয়ে বেশি কিছু সেটিই বুঝিয়ে গেলেন।