বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে অন্যতম এক হতাশার নাম পেস বোলিং অলরাউন্ডার। দীর্ঘ এ সময়কালে সুযোগ পেয়েছেন অনেক ক্রিকেটার। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হারিয়েও গিয়েছেন। জিয়াউর রহমান, আবুল হোসেন রাজু, ফরহাদ রেজার মতো পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের আগমন ঘটেছে। তাঁরা খেলেছেনও, কিন্তু ক্ষণিকের পর তাদের প্রস্থানও হয়েছে।
পেস বোলিং অলরাউন্ডারের এই অভাব ঘোচাতে অমিত প্রতিভা নিয়ে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ডান হাতি মিডিয়াম পেস বোলিং, সাথে বাঁহাতি ব্যাটিং- দুইয়ের মিশেলে শুরুর দিকে আশার গল্পই শুনিয়েছিলেন এ ক্রিকেটার। ২০১৯ বিশ্বকাপেও চমক দেখিয়েছিলেন অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে।
কিন্তু হঠাতই ছন্দপতন। পুরোনো পিঠের ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় আস্তে আস্তে জাতীয় দল থেকে সরে যেতে শুরু করলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সর্বশেষ ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে জাতীয় দলে খেলেছিলেন। এর পর থেকেই বাইরে তিনি। সাইফউদ্দিনের জন্য এখন সম্বল শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেট।
তবে সেখানেও আছে বিপত্তি। ইনজুরি যে তাঁর পিছু ছাড়ে না। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সেরে উঠতে না উঠতেই ইনজুরির ভয়াল থাবা। ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়ে এই ইনজুরি বয়ে নিয়েই চলতে হচ্ছে এ অলরাউন্ডারকে। আর সে কারণে এই ইনজুরিতেই ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময় কেটে যাচ্ছে, জাতীয় দলের জার্সি দীর্ঘ মেয়াদে গায়ে না চাপানোর আক্ষেপে।
সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সাইফউদ্দিন খেলেছিলেন আবাহনীর হয়ে। তাতে ১২ ম্যাচ খেলে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। জাতীয় দলে তারকার ভীড়ে হয়তো তাতেও সুযোগ মিলত না। তবে বিশ্বকাপের মাস দুয়েক আগেই আবার পুরোনো পিঠের ব্যথা ধরা পড়ে তাঁর।
নতুন করে সেই চোট ফিরে আসায় চিকিৎসার জন্য সাইফউদ্দিনকে কাতারেও পাঠিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কখনোই পুরোপুরি ইনজুরি মুক্ত হবেন না এই অলরাউন্ডার। বিসিবি চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরি ভাষ্য অনুযায়ী, সাইফউদ্দিন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। এজন্য তাঁর মেরুদণ্ডে অনেক চাপ পড়ে।
কিছু, ইনজুরি আছে যেগুলো যথার্থ পুনর্বাসনের পরও সেরে উঠে না। এই ইনজুরিকে নিয়ন্ত্রণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এজন্য ম্যাচ সিলেকশন, ফিজিক্যাল ফিটনেস, ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্ট, টেকনিক প্রত্যেকটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, জাতীয় দলে সাইফউদ্দিন ফিরলেও তিনি টানা খেলতে পারবেন না। তাঁকেই বিশ্রাম নিয়েই খেলতে হবে। রিহ্যাব অনুসরণ করতে হবে। আর এমন ইনজুরি প্রবণ ক্রিকেটারকে কোনো দলই নিতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই জাতীয় দলে সাইফউদ্দিনের ফেরার সম্ভাবনা এখন বেশ ক্ষীণই বটে।
তাছাড়া, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং লাইনআপ যেমন ছন্দে আছে, তাতে সাইফউদ্দিনের দলে জায়গা নেই বললেই চলে। তার উপর সর্বশেষ সিরিজে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সৌম্য সরকার, ব্যাটিং, বোলিং- দুই ইউনিটেই পারফর্ম করেছে। তাই ধরে নেওয়াই যায়, অচিরেই সাইফউদ্দিনের জাতীয় দলভাগ্যের দুয়ার খুলছে না। বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এরই মধ্যে নিজের শেষ দেখে ফেললেন কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়।