বিশ্বকাপ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে আগের বছর শেষ করেছিলেন। এবারের বছরটা শেষ করতে যাচ্ছেন সেই সোনালি স্মৃতি রোমন্থন করে। ব্যবধানটা এক বছরের। অমরত্ব পেয়েছিলেন আগেই। তবে এই এক বছরে সর্বজয়ীদের কাতারে নাম লেখানো হয়ে গিয়েছে লিওনেল মেসির। তর্ক-সাপেক্ষে সর্বকালের সেরার আসনে আসিত হয়েছেন দ্য এলএম টেন।
২০২৩, চলতি বছরে পুরো বিশ্ব মেসিকে চিনেছে আলাদাভাবে। আগের সবকটি বছর মেসি শুরু করেছেন বিশ্বজয়ের আক্ষেপ নিয়ে। ‘সব পাওয়া’ মেসির একমাত্র অপূর্ণতা ছিল সেটিই, বিশ্বকাপ। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের পর সেই অপূর্ণতা আর থাকেনি। মেসি এখন বিশ্বকাপ জয়ী।
পূর্ণতার সেই গল্প লেখার পর মেসি এগিয়ে চলেছেন স্ব-মহিমায়, অনন্যতায়। দেড় যুগ ধরে বহু চাপ সামলেছেন, সেই চাপ জয় করেছেন, হেঁটেছেন শ্রেষ্ঠত্বের পথে। তাই বিশ্বকাপ জয়ের পর ফুটবলটা শুধুই উপভোগ করতে চেয়েছেন। আর তাই ইউরোপ ছেড়ে মেসির যাত্রা আমেরিকার প্রান্তে।
আমেরিকায় পা রাখলেন, খেললেন এবং জিতলেনও। মেসি আসার আগে যে ইন্টার মায়ামির কোনো শিরোপা জয়েরই ইতিহাস ছিল না, সেখানে মেসি জাদুতে ভর করে লিগস কাপ জেতে আমেরিকার দলটি। মেসি সেই টুর্নামেন্টে শুধু খেললেনই না। বলাই বাহুল্য, আমেরিকা জয় করলেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেরা খেলোয়াড়— দুই পুরস্কারই উঠলো আর্জেন্টাইন মহাতারকার হাতে।
চলতি বছরে মাঠের মেসিকে দেখা গেছে কমই। ইন্টার মায়ামিতে মেসি আসার আগে এমএলএসে তলানিতে ছিল দলটি। আর সে কারণে শেষ পর্যন্ত প্লে-অফ নিশ্চিত করতে পারেনি মেসির মায়ামি। তাই অক্টোবরেই শেষ হয়ে যায় মায়ামির মৌসুম। তাই ফুটবলের বাইরেই থাকতে হয়েছে মেসিকে অনেকটা সময় জুড়ে।
কিন্তু মাঠের মেসির অনুপস্থিতি থাকলেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের সরব গর্জন আলোচনা ছিল গোটা বছর জুড়েই। টাইমস ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে সেরা ক্রীড়াবিদ নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যালন ডি অর জিতেছেন। আবার ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ পুরস্কার লরিয়াস স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন এ বছরেই। পুরষ্কারের পুষ্পমাল্যে পুরো বছরটাই যেন কাটিয়েছেন মেসি।
বিশ্বকাপ জেতার পরের বছর বলে কথা। ক্যারিয়ার জুড়ে যে আক্ষেপ নিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন, সেই আক্ষেপ ঘুচানোর পর একটু খানি স্বস্তি খুঁজে নিতেই পারেন মেসি।
তবে আসন্ন বছরটা আবার ব্যস্ততাতেই কাটাতে হবে মেসিকে। অবশ্য হাতছানি রয়েছে বেশ কটি শিরোপা জেতার। জাতীয় দলের হয়ে একটি এবং ক্লাবের হয়ে মেসি জিততে পারেন ছয়টি ট্রফি। এই সাত ট্রফির মধ্যে আছে কোপা আমেরিকা ও কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সুযোগও।
কোপা আমেরিকার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে মাঠে নামবে তারা। ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুলাই। সাম্প্রতিক ছন্দ বিবেচনায় এই টুর্নামেন্টে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে মেসির আর্জেন্টিনা।
২০২৪ সালে মেসি মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) পুরোটাই খেলার সুযোগ পাবেন। এ বছর মেসি এসেই বদলে দিয়েছেন দলকে। এর মধ্যে দলে যোগ দিয়েছেন লুইস সুয়ারেজও। নতুন মৌসুমে প্লে-অফে চোখ রেখেই মাঠে নামবে ইন্টার মায়ামি। এ বছর ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিয়েই দলটিকে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ট্রফি এনে দিয়েছেন মেসি।
তাঁর হাত ধরেই ইন্টার মায়ামি জিতেছে লিগস কাপের শিরোপা। এবার মেসির সামনে চ্যালেঞ্জ সেই শিরোপা ধরে রাখার। এরপর মেসি তৃতীয় যে শিরোপাটি মায়ামিকে জেতাতে পারেন, সেটি ইন্টার-আমেরিকান কাপ। গত মৌসুমে লিগস কাপ জেতার কারণেই মূলত এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়েছে ইন্টার মায়ামি।
ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ শিরোপার একক মালিক এখন মেসি। সেই সংখ্যাটা আরো বাড়িয়ে নেওয়ার পথে রয়েছেন তিনি। মেসি নিশ্চিতভাবেই সেই পথযাত্রায় জয়ের জন্যই ছুটবেন। শিরোপা-ক্ষুধা তো তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। বলতেই হয়, কোথায় গিয়ে থামবেন এই মেসি?