আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে ফিরেছে। মাঠে নেমেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। করোনা ভাইরাসের অনাকাঙ্খিত বিরতি শেষে আবারো মাঠে গড়ালো ব্যাট-বলের লড়াই। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকাও চলমান এই ‘নিউ নর্মাল’ বাস্তবতা মাথায় রেখেই মাঠের ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) একদম হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। আটটি মাঠ ও এর অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে রেখেছে সংস্থাটি, যাতে করে যত দ্রুত সম্ভব ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরানো যায়।
ক্রিকেটাররা ঘরে বসেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে সেসব দেখাও গেছে। ফিটনেস নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন সম্ভবত মুশফিক। তবে, এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটম্যান গেল মঙ্গলবার রীতিমত মাঠেই নেমে গেলেন। বাড্ডার ফোরটিস স্পোর্ট ক্লাব মাঠে তাঁকে অনুশীলন করতে দেখা গেল। তিনি টুকটাক ব্যাটিংও করলেন।
এর একদিন আগে ফেনীর স্থানীয় এক মাঠে নিজ হাতে উইকেট বানান পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এর অর্থ হল অনুশীলন করতে তিনিও যাচ্ছেন বাড়ির বাইরে।
আর এমন সব ঘটনা অনেক রকমের বিভ্রান্তিরও জন্ম দিচ্ছে। আসলে এই মহামারী পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা বিষয়ে বিসিসির গাইডলাইনটা কি?
কিছুদিন আগে মুশফিক ও আরেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এসে নিজেদের মত করে অনুশীলন করতে বিসিবির কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু, মিরপুরের ‘রেড জোন’-এ থাকার ব্যাপারটা মাথায় রেখে বিসিবি অনুমতি দেয়নি।
মুশফিক-সাইফউদ্দিনের ঘটনা ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তারাও কি চাইলে বাড়ির পাশেই কোনো মাঠে গিয়ে অনুশীলন করতে পারে? এমন অবস্থায় ক্রিকেটাররা দ্বিধাবিভক্ত। তবে, অধিকাংশই বাইরে গিয়ে মুশফিকদের অনুশীলন করতে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
অধিকাংশই বিষয়টাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন না। বিসিবি এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাড়িতে জিম সামগ্রী নিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ দিচ্ছে। আর সেই সুবিধা নেওয়া প্রথম ক্রিকেটার হলেন মুশফিক। গেল সোমবারই তিনি মাঠে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার বলেন, ‘তিন মাসের বেশি সময় ধরে আমরা ক্রিকেট থেকে দূরে আছি। অনেকগুলো খেলা আমরা মিস করেছি। তবে, বিসিবির পক্ষ থেকে আমাদের অনুশীলনের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা মাঠে যেতে প্রস্তুত না – ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। আসলে আমাদের বিসিবির পক্ষ থেকেই গাইডলাইন দেওয়া আছে, সেটা মেনে আমরা মিরপুর ছাড়া অন্য যেকোনো জায়গায় অনুশীলন করতে পারবো।’
প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও জানালেন, করোনা ভাইরাসের চলমান পরিস্থিতিতে বোর্ডও খেলোয়াড়দের বাইরে গিয়ে নিজস্ব অনুশীলন ব্যবস্থাকে অনুৎসাহিত করছে।
তিনি বলেন, ‘মুশফিক বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সে জানে কিভাবে সঠিক সুরক্ষা বিধি মানতে হয়। আমাদের মিরপুরে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা আছে। কিন্তু, মিরপুর রেড জোনে থাকায় খেলোয়াড়দের বাসাতেই অনুশীলন করতে বলা হয়েছে। তাঁরা চাইলে আমাদের কাছ থেকে সরঞ্জাম নিয়ে যেতে পারে। তবে, আমরা কোনো অবস্থাতেই ক্রিকেটারদের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে অনুৎসাহিত করে থাকি। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারটা তাঁদেরকেই আগে দেখতে হবে। এখনকার পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’
তিনি জানালেন, ঢাকার মধ্যে থেকে কেউ বাড়ির বাইরে গিয়ে অনুশীলন করুক সেটা বোর্ড চায় না। বললেন, ঢাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানে অনুশীলন না করাই ভাল। বিশেষ করে মিরপুর তো রেড জোনে আছে। কেউ ঢাকার বাইরে অনুশীলন করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের জানাতে হবে, আমাদের গাইডলাইন মানতে হবে।’
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যা ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান জানালেন, মুশফিক-সাইফউদ্দিনদের নিজস্ব অনুশীলনের ফলে ঘটা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার বোর্ড নেবে না। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম না যে আমরা তাঁকে (মুশফিকুর রহিম) বাড়ির বাইরে অনুশীলন করতে দেখছি। এর আগে ওকে রাস্তায় দৌঁড়াতে দেখেছি। ফাঁকা মাঠে ওয়ার্ক আউট করতে দেখেছি। এসব কাজের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। বাজে কিছু হলে তার দায়-দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়।’
তবে, শুধু ‘অনুৎসাহিত’ করাটা কি আদৌ কোনো সমাধান? বিসিবির এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটা দিক নির্দেশনা থাকা উচিৎ – ক্রিকেটাররা কি করতে পারবেন, কি করতে পারবেন না – সেটা একদম স্পষ্ট করে বলা উচিৎ। এই বাড়ি বসে থাকার সময়ে আসলে তাদের ডায়েট চার্ট, ফিটনেস থেকে শুরু করে অনেক কিছু নিয়েই কাজ করা উচিৎ। বিসিবিকি আদৌ সেটা করছে? নাকি দায়িত্ব খেলোয়াড়দের ওপর ছেড়ে স্রেফ ‘অনুৎসাহিত’ করার মধ্যেই তাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ। দায়িত্ব পালন না বলে এটাকে ‘দায় এড়ানো’ বলেও বসতে পারে কেউ কেউ।