শুভ্র হবে ক্রিকেট, শুদ্ধ হবে পৃথিবী!

এই হাই ফাইভও দেয়া যাবে না। কনুই কনুই লাগাতে হবে! কার্টলি অ্যামব্রোস কী বলবেন কে জানে! তিনি বলেছিলেন, ‘উইকেট পাবার পরে বন্ধুদের সাথে হাত মেলাতে গেলে আমি আরেকটা উইকেট পাবার প্রেরণা পাই!’

ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী সময় ক্রিকেট অনুপস্থিত ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। বিশ্বযুদ্ধের অমানবিকতার সেই সময়ে টানা ৭ বছর কোন ক্রিকেট হয়নি! বিশ্বযুদ্ধের নির্মমতার কাছে ক্রিকেট এক তুচ্ছ ব্যাপার। তবু ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে একটা বড় ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গিয়েছিলো! সেটা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ৯৯.৯৪ গড়!

হ্যাঁ বিখ্যাত এই সংখ্যাটা ১০০ না হবার পিছনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও ভূমিকা আছে। বলা হয়, একজন স্পোর্টসম্যানের সবচেয়ে ভালো সময় কাটে ২৮-৩৩ বছর বয়সে। ফিটনেসের উত্তরণের কারণে সংখ্যাটা এখন ৩৫ বছরে ঠেকেছে। পরিসংখ্যান বলে যে বিশ্ব ইতিহাসের সব খেলোয়াড়রাই তাঁদের সেরা সময়টা এই বয়সসীমাতেই কাটিয়েছেন! অথচ স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ১৯৩৮ সালের আগস্টে ওভাল টেস্টের পরের ম্যাচটা খেললেন ১৯৪৬ এর নভেম্বরে!

১৯০৮ সালে জন্ম নেয়া খেলোয়াড়টি তার ৩০ বছর বয়স থেকে ৩৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাইম সময়টাতে একদমই খেলেননি! অথচ ওই সময়টাই ছিল তার গড় বাড়ানোর(!) সময়! একটা ছোট পরিসংখ্যান দেয়া যায়, ১৯৩৮ এর অ্যাশেজে স্যার ডনের গড় ছিল ১০৮.৫০! তারপর উনি আট বছর টেস্টের বাইরে। ফেরার পরে ১৯৪৬ এ অ্যাশেজে গড়টা কমে যায়(?)! মাত্র ৯৭.১৪! মোটামুটি একটা ধারণা করা হয় যে, মাঝের আট বছর টেস্ট খেললে স্যার ডন সম্ভবত ১০৫+ গড় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতেন।

কালজয়ী এন্টারটেইনাদের জন্ম হয় দুঃখের সময়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। চার্লি চ্যাপলিন সম্পর্কে বলা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুঃখের সময়ে নাকি এই লোকটা একাই আমেরিকার মানুষকে হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ানদের কাছেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে স্যার ডন ছিলেন একটু আনন্দের-স্বস্তির জায়গা। তাঁর ব্যাটিং দেখে দুঃখ ভুলত মানুষ!

যাই হোক, লেখার মূল বিষয় স্যার ডন না। আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিরতিটা সম্ভবত পৃথিবী দেখলো গত চার মাসে। ইংল্যান্ড শ্রীলংকায় গেলো। প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে ফেরত আসলো। দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত গিয়ে খেলতে পারলো না। উল্টো একই হোটেলে থাকা কোভিড পজিটিভ কণিকা কাপুরের সংস্পর্শে আসার কারণে আলাদাভাবে কোয়ারাইন্টাইনে থাকলো। তবু এর মধ্যে চেষ্টা হয়েছিলো। নিউ জিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া খালি মাঠে একটা ওয়ানডে খেলেছিলো। ১৩ মার্চের সেই ম্যাচ হয়ে গেলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ স্মৃতি! তাঁর দুইদিন আগে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে খেলেছিলো শেষ টিটুয়েন্টি! এরপর কতকিছু হয়ে গেলো।

একেকটা বড় বড় ঘটনা বিশ্বের টাইমলাইনকে দুই ভাগ করে দেয়। নতুন বিশ্বের নাম তাই করোনা পরবর্তী বিশ্ব!

অথচ বছরের শুরুটা কী দুর্দান্ত ছিল! বছর শুরুতেই অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বজয়! আকবর আলীদের উচ্ছ্বাসের সময় অবশ্য আমাদের সিনিয়ররা পাকিস্তানের সাথে লজ্জার হারে ব্যস্ত ছিলেন! আকবর আলী যখন শিরোপা নিচ্ছেন, মাহমুদউল্লাহ তখন হ্যাটট্রিক বলে অফ স্ট্যাম্পের দুই হাত বাইরের বল ড্রাইভ করে উইকেট দিতে ব্যস্ত!

প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। কত আশার ব্যাপার। প্রত্যেকটা দল তৈরি। বাংলাদেশের জন্য আরও ঐতিহাসিক ব্যাপার ছিল। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশের ম্যাচ হবে ঢাকায়। মঞ্চ প্রস্তুত। একসাথে ভিরাট কোহলি আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং কিংবা ওপেনিংয়ে দুই প্রান্তে লিটন দাস আর রোহিত শর্মাকে দেখতে চাইবার স্বপ্ন! সব ভেস্তে গেলো!

খেলার মাঠের স্বপ্নগুলোকে করোনা অনেকভাবে কেড়ে নিলেও মাঠের বাইরে অনেক বাস্তব মহান মুহূর্ত দিয়ে গেলো। করোনা দুর্যোগে মানুষ যখন বন্দী তখন কিছুটা বিনোদনের খোরাক হয়ে এলেন বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা। তামিম ইকবাল লাইভ করলেন। লাইভে এসে কোহলি, উইলিয়ামসনরা মন খুলে ব্যাটিং টিপস দিলেন। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যকার বন্ধুত্ব, খুনসুটি- সব দেখলো মানুষ।

কিছু কিছু সাক্ষাৎকার মানুষকে ভাবালো, কিছু স্বস্তি দিলো! ওদিকে রোহিত শর্মা, আশ্বিন, আর্নল্ড, বাবর আজম- সবাই লাইভে এসে নিজেদের কথা মন খুলে বলছেন। ক্রিকেটারদের মনে হচ্ছে পাশের বাড়ির ছেলে! ওইদিকে বড় এক বিনোদন হয়ে আবির্ভূত হলেন ডেভিড ওয়ার্নার! পরিবার নিয়ে একের পর এক নাচের ভিডিও দেখে হাসতে থাকলো ক্রিকেটপ্রেমীরা। ব্যাট হাতে তার পিচের নাচন না দেখতে পারলেও গানের নাচন অন্তত দেখা যাক!

ক্রিকেটাররা যে শুধুই ক্রিকেটার নয়, সমাজের প্রতিনিধি- সেটা মানুষ দেখলো। পুরো বাংলাদেশের অবস্থা যাই হোক না কেন, মাশরাফি নড়াইলকে আলাদা করে কভিদের জন্য উদাহরণ করে গড়ে তুললেন। নিজে পরিবারসহ আক্রান্ত হলেন। নাজমুল অপু দেখালেন তিনি মানুষটা কত বড়। তাঁকে নাগিন সেলিব্রেশন দিয়ে ট্রল করা অবান্তর! সাকিব-মুশফিক-মাশরাফি থেকে শুরু করে আকবর আলী পর্যন্ত সবাই নিজেদের ব্যাট-গ্লাভস-ক্যাপ-ব্রেসলেট নিলামে তুললেন! সব করোনা দুর্গতদের জন্য।

প্রত্যেকটা ক্রিকেটার নিজেদের প্রিমিয়ার লিগ না খেলতে পারা, নিজেদের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যেও মানুষকে সাহায্য করা থেকে একবিন্দু পিছিয়ে ছিলেন না! পাকিস্তানে শাহিদ আফ্রিদি সাহায্য করতে করতে আক্রান্ত হলেন। ও হ্যাঁ, মুশফিকের ব্যাটটা তার ফাউন্ডেশন থেকেই কেনা হয়েছে! তার বাইরে পাকিস্তান ক্রিকেটে আক্রান্ত হলেন আরও ১০জন! ওদিকে বাংলাদেশের স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি তাঁর বেতন দিয়ে দিলেন বাংলাদেশের করোনা দুর্গতদের।

সবাই বিভিন্নভাবে সাহায্য করছেন, আক্রান্ত হচ্ছেন! কিন্তু জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সাহায্য করা থেমে নেই। ওইদিকে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) সাতজন কোভিড পজিটিভ। বাসায় বসে বসে মানুষ মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। বিনোদন জগতের খবরও ক্রিকেটকে আক্রান্ত করলো। বিশ্বকাপজয়ী ধোনির চরিত্রে অভিনয় করা বলিউডের সুশান্ত সিং রাজপুত মারা গেলেন। এই নিয়ে ক্রিকেটাররাও সুশান্তকে মনে করলেন।

ওইদিকে প্রত্যেকটা বোর্ডের অর্থনৈতিকভাবে কাহিল অবস্থা! অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড নিজেদের দেউলিয়াপনা ঠেকাতে তাঁদের প্রধান ব্যাকটিকে বরখাস্ত করলো। বিসিসিআই আইপিএল আয়োজন করতে না পেরে তাঁদের সবচেয়ে বড় লাভের ক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত, আবার একদিকে ট্যাক্স কাট করছে। আবার এর মধ্যেই করোনা দুর্গত ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ ফান্ডের ব্যবস্থা করছে।

ওইদিকে অস্ট্রেলিয়া আবার বিশ্ব টি-টোয়েন্টি যেকোনমূল্যে আয়োজন করতে চায়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাও নিজেদের বেতন কেটে দিচ্ছেন অসহায় ক্রিকেটার, মানুষদের সাহায্য করার জন্য। একদিকে দুর্যোগ, অন্যদিকে সাহায্য – বিশ্বের ভেদাভেদ যেন ঘুচে যাচ্ছে একটার পর একটা! কোভিড-১৯ সব দুর্যোগের মাঝেও এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিচ্ছে সবাইকে!

এর মধ্যে শুরু হলো বর্ণবাদ। আমেরিকাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর দাবানল ছড়িয়ে পড়লো পুরো পৃথিবীতে। ড্যারেন স্যামিরা তাঁদের বিরুদ্ধে করা বর্ণবাদের প্রতিবাদ করতে থাকলেন। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা জার্সিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ লেখাটা সাথে নিয়ে মাঠে নামবেন। নতুন পৃথিবীতে সব বৈষম্য অবসানের বার্তা।

কত কত ঘটনা! মার্চের ৮ তারিখে যখন এলিসা হিলি একের পর এক ছক্কাগুলো মারছিলেন তখন কি ভেবেছিলেন তাঁর স্বামী মিচেল স্টার্কের দল থেকে ছুটি নিয়ে তাঁর খেলা দেখতে আসা সার্থক? এরপর তাঁর কতগুলো খেলা বাতিল হবে?

নারীদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে রেকর্ড ৮৬১৭৪ জন দর্শকের উপস্থিতি ছিল সেদিন! সেখান থেকে আজকের টেস্ট ক্রিকেটে দর্শক সারি হবে শূন্য! যেই ইংল্যান্ডের সকাল বার্মি আর্মিদের জন্য বিখ্যাত, যেই বার্মি আর্মির বিউগলের সুর ইংল্যান্ডের টেস্ট শুরুর অবিচ্ছেদ্য অংশ- সম্ভবত গত শত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সেই সুর আজ মাঠে বাজবে না! বার্মি আর্মিদের সেই ‘হো’ স্বর ছাড়া সকাল, কিংবা একটা চার মারলে দর্শক সারিতে বসে সত্যিকার ভদ্রলোকের মতো হাততালি দেয়া উচ্ছ্বাস ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট কেমন হবে জানিনা! দর্শক হিসেবে ওই টেস্ট ক্রিকেটের সাথেই তো আমরা অভ্যস্ত। শূন্য গ্যালারির টেস্ট ক্রিকেট ইংল্যান্ডের ইতিহাসেই প্রথমতম অভিজ্ঞতা!

আরও কতকিছু বদলে যাচ্ছে! অ্যালেন ডোনাল্ড এখন ক্রিকেট খেললে কী করতেন জানিনা। তবে ‘সাদা বিদ্যুতের’ কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে নাকের উপর ডোনাল্ডের সাদা চুন মাখা আস্তরণের কথা। সেখান থেকে ঘাম বেয়ে পড়তো। ডোনাল্ড সেই ঘাম, থুথু সব মিলিয়ে বল ঘষতেন! বলের শাইনিং সাইডে এগুলো ঘষা সুইংয়ের বড় অস্ত্র। ওয়াসিম-ওয়াকারের কথা ভাবতে গেলেও কৌতূহল হচ্ছে!

লোক দুইটার জন্য অন্য সব ফিল্ডারদের কাজ ছিল বল ঘষা। থুথু, ট্রাউজার সব জায়গায় বল ঘসবে! পারলে বল ছুড়ে না দিয়ে ফিল্ডাররা মাটিতে গড়িয়ে বল ফেরত দিতেন। বল যত তাড়াতাড়ি পুরানো হবে তত তাড়াতাড়ি রিভার্স সুইং মিলবে! নতুন পৃথিবীতে থুথু দিয়ে বল ঘষা নেই! কোভিডের সবচেয়ে বড় অস্ত্র মুখের লালা। তাই মুখের লালা ঘষলেই ফিল্ডাররা সতর্কতা সিগন্যাল পাবেন আম্পায়ারের কাছ থেকে। সেই সিগন্যাল দুইবার হলেই ৫ রানের পেনাল্টি! ঘামই যেহেতু ভরসা তাই মাথায় ব্যান্ড পরে ঘাম আটকানোর চেষ্টাও করবেন বোলাররা।

নতুন পৃথিবীতে নতুন ক্রিকেটে নতুন কৌশল! আর হ্যাঁ! ক্রিকেটের একটা আকর্ষণীয় বিনোদন হচ্ছে, উইকেট পাবার পরে বোলারদের সেলিব্রেশন। এটা দেখতে যতটা না ভালো লাগে, তাঁর চেয়ে বেশী যারা খেলে তাঁদের সহ ফিল্ডারদের সাথে হাই ফাইভ দেয়াতে বেশী চার্জড আপ লাগে! এই হাই ফাইভও দেয়া যাবে না। কনুই কনুই লাগাতে হবে! কার্টলি অ্যামব্রোস কী বলবেন কে জানে! তিনি বলেছিলেন, ‘উইকেট পাবার পরে বন্ধুদের সাথে হাত মেলাতে গেলে আমি আরেকটা উইকেট পাবার প্রেরণা পাই!’

হোক না নতুন কৌশল, নতুন নিয়ম তবু ক্রিকেট তো ফিরছে। ১১৭ দিন পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে তাঁর সাদা-শুভ্র পোশাকে। চিরায়ত এই প্রতীক হয়তো শান্তির বার্তারও প্রতীক। জেসন হোল্ডার আর বেন স্টোক্স যখন টস করতে নামবেন তখন সেটা শুধুই আর দশটা সাধারণ টস হবে না, এক ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে মানুষের নত না করার একটা ধাপ হয়ে দাঁড়াবে!

সকালের ওই আর্দ্রতায় বল করতে অ্যান্ডারসন বা কেমার রোচ যেই দৌড়ে আসুক না কেন, সেটা যে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আনন্দ এনে দিবে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই! আইসিসির করা ক্রিকেটকে আবার স্বাগত জানানোর ভিডিওটাই চোখে পানি এনে দিয়েছে। সেখানে সাদা পোশাকে লাইভ তো আমাদের আপ্লুত করবে। করোনাকালে ঘরে বসে সবচেয়ে বড় বিনোদন হিসেবেই আবির্ভূত হবে আমাদের জন্য ক্রিকেট বুভূক্ষদের জন্য! ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট প্রমাণ করে ক্রিকেটাররা নিজেদের উজাড় করে দিবেন, সেই আশা তো আছেই। এই করোনার মধ্যেও ফিটনেস ট্রেনিং বাদ দেনই কেউই!

ক্রিকেট আবার ফিরছে! বোল্ট-সৌদি নাকি অ্যান্ডারসন-ব্রড কোন জুটি বেশী ভালো? ভারতের নতুন পেস ব্যাটারি কি শুধুই বছরখানেকের ফ্লুক নাকি লম্বা রেসের ঘোড়া? পাকিস্তানের নতুন সোনালি প্রজন্ম কি পারবে আগের রোমান্টিসিজম ফিরিয়ে আনতে? শ্রীলংকার উত্থান কীভাবে হবে? এবিডি ভিলিয়ার্স কি ফিরবেন? জিম্বাবুয়ে কি টিকে থাকবে?- এই প্রত্যেকটা প্রশ্নে ক্রিকেটামোদীরা আবার মেতে উঠবেন!

মিশেল স্টার্কের সামনে দাঁড়াবেন সেই বিরাট কোহলি, রাশিদ খান ফ্লাইট ছাড়া লেগ স্পিন দিয়ে মুগ্ধ করবেন, অথবা বেন স্টোক্স-সাকিব আল হাসান-জেসন হোল্ডার দ্বৈরথ আধুনিক ক্রিকেটের এক কিংবদন্তী অলরাউন্ড দ্বৈরথে পরিণত হয়ে উঠবে। বিখ্যাত ফ্যাব ফোর কোহলি, স্মিথ, রুট, উইলিয়ামসনের সাথে বাবর আজম যোগ হচ্ছেন। তাঁর সাথে যোগ হবেন আমাদের মুশফিক; কিংবা সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ফুটে উঠবেন লিটন দাস, মুস্তাফিজেরা।

সেই আশায় আমরা ক্রিকেট দেখবো! আবারও কোন টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় আমরা হিসেব কষব যে কাল কী করলে টেস্টটা জেতা যাবে, ড্র করবার অপশনগুলো কী কী? কিংবা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টির শেষ ওভারে চরম আগ্রহে আঙুলে নখ কাটতে থাকবো! নিজ দেশের সাফল্য-ব্যর্থতায় আনন্দ করব, রাগ করব। ফেসবুকে সবাই আবার ক্রিকেটবোদ্ধা হবো! আমরা আবার স্বাভাবিক হবো! পৃথিবীর কালো মেঘ দূর হবে।

শুভ্র হবে ক্রিকেট, শুদ্ধ হবে পৃথিবী! সেই আশায় বসবাস! আপাতত আবারও আইসিসির মতো করেই বলি, ‘ওয়েলকাম ব্যাক ক্রিকেট, ইউ হ্যাভ বিন মিসড!’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...