‘ফ্লোটার’ হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা আগেও খেলেছেন টপ-অর্ডারে। তাতে, প্রতিপক্ষের বোলিং পরিকল্পনা গুড়িয়ে দিয়ে সুনামও কুড়িয়েছেন। তবে, এবার মাশরাফির পরিকল্পনা কাজে লাগেনি।
পারফর্মিং আর্টের বাস্তবতাটাই এমন। সব সময় সব পরিকল্পনা কাজে লাগে না। আর মাশরাফির এখন যে বয়স আর ফিটনেস, তাতে তিন নম্বরে হঠাৎ করে আট-নয় মাস পর ব্যাট করতে নেমে পারফর্ম করা সহজ নয়।
মাশরাফি পারেননি, তাই না পারার সমালোচনা হবেই। আসলে, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শুরু থেকেই তাঁকে ঘিরে হচ্ছে নানা রকম আলোচনা ও বিতর্ক। টুর্নামেন্ট শুরুর সপ্তাহ খানেক আগেও দল সিলেট স্ট্রাইকার্স তাঁর খেলা নিয়ে নিশ্চয়তা পায়নি।
একটা টুর্নামেন্টকে ঘিরে একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ও খেলোয়াড়দের অনেক রকম পরিকল্পনা থাকে। আর অধিনায়ক তো টিম ম্যানেজমেন্টের পার্ট। মাশরাফি সেই পরিকল্পনায় যোগ হয়েছেন একদম টুর্নামেন্ট শুরুর আগ দিয়ে।
এই অবস্থায় সব কিছু ‘হ য ব র ল’ যে হবেই তা তো সহজেই অনুমিত। মাশরাফি প্রথম ম্যাচে নেমেই উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু, তৃতীয় ওভারেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। দল ম্যাচ হেরে গেছে। এটা খুবই স্বাভাবিক, সেদিন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামেন পাক্কা ২৫০ দিন পর।
দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং পরিকল্পনাও ব্যর্থ। তিন নম্বরে নেমে সাত বলে ছয় রান করেন। একটা বাউন্ডারি হাঁকান। তবে, রান আউট হন দৃষ্টিকটু ভাবে। মাশরাফির বয়স এখন ৪০। এই বয়সেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে যাওয়ার অনেক নজীর আছে। তবে, তাঁর জন্য যে ধরণের ফিটনেস ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, মাশরাফি কি তাঁর ধারে কাছেও ছিলেন?
মাশরাফিকে কোনো বিতর্ক ছাড়াই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক বলা যায়। পরিসংখ্যান তাঁর পক্ষেই রায় দেয়। তাঁর দলকে তাঁতিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাঁর শেষ বেলা কেন এমন হবে? এমন তো নয় যে সিলেট স্ট্রাইকার্সে কোনো বিকল্প নেই!
এর মধ্যেও হয়তো কখনও কখনও মাশরাফি উইকেট পাবেন, মিতব্যয়ী বোলিং করবেন, কিংবা কার্যকর কোনো ক্যামিও খেলবেন। তবে, সেটা তাঁর প্রাকৃতিক সামর্থ্যের জোরে। লিজেন্ডস ক্রিকেটে যেমন শচীন কিংবা লারারা ঝলক দেখান। কিন্তু, সেটা দিয়ে স্বীকৃত ও পেশাদার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলা যায় না।
চাইলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়ক করা যায়। মাশরাফির জায়গায় কোনো তরুণ পেসারকে খেলানো যায়। রেজাউর রহমান রাজা বেঞ্চ গরম করছেন। তাঁর তো অন্তত একটা সুযোগ প্রাপ্য! সময় কারও জন্য থেমে থাকে না, স্বয়ং মাশরাফির জন্যও না। এটা যত তাড়াতাড়ি তিনি নিজে বুঝতে পারবেন – ততই মঙ্গল।
দারুণ সব তরুণ প্রতিভা, আর কার্যকর সব বিদেশি – সিলেট স্ট্রাইকার্স দলটা সব মিলিয়ে ছবির মত সুন্দর। সমস্যা যে একটা – সেটা খোদ মাশরাফির চেয়ে ভাল কেউ জানে না। সমাধানটাও তাঁরই হাতে।