রোনাল্ড আরাউহো: আক্রমণ থেকে রক্ষণ

বয়স কতই বা হবে। বিশের কোটা পেরিয়েছেন । একুশে পা দিয়েছেন।

এইটুকু বয়সে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার মতো দলের রক্ষণ সামলাচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে  একটু আধটু কথা তো হবেই। রোনাল্ড আরাউহো। পরিবার সূত্রে পাওয়া নাম দ্য সিলভা। পুরো নাম রোনাল্ড ফেডেরিকো আরাউহো দ্য সিলভা।

উরুগুয়ের শহর রিভেরা। লাতিন আমেরিকার আরেক ফুটবল পরাশক্তি  ব্রাজিলের স্যান্টানা ডু লিভরামেন্টো শহরের কাছাকাছি এই রিভেরা অবস্থিত। এই শহরেই ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন রোনাল্ড আরাউহো। খেলেন সেন্টার ব্যাক পজিশনে। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার এই ডিফেন্ডার খেলছেন বার্সেলোনার হয়ে।  উরুগুয়ের জার্সি গায়ে অভিষেকও হয়ে গেছে তাঁর।

প্রথমাবস্থায় আরাউহো খেলতেন  তাঁরই শহরের ক্লাব হোরাকান ডি রিভেরায়। রিভেরা থেকে তিনি যোগ দেন উরুগুয়ের আরেক ক্লাব রেনটিসটাসে।

রোনাল্ড আরাউহো তার সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্ট্রাইকার হিসাবে!

পরবর্তীতে তার উচ্চতা দেখে আর শারিরীক সক্ষমতা আর স্পিড দেখে কোচ তাকে সেন্টার ব্যাক খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন। এইভাবেই একজন স্ট্রাইকার থেকে হয়ে উঠেন  একজন পুরোদস্তর ডিফেন্ডার ।

রেনটিসটাসের হয়ে তাঁর সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে।সেকেন্ড ডিভিশনের এক ক্লাবের বিপক্ষে  বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন।  শুরু করেছিলেন জয় দিয়ে। আরাউহো সিনিয়র ক্যারিয়ারে প্রথম গোলের দেখা পান ৯ ডিসেম্বর,  ২০১৬ সালে।। সে দলে নিয়মিত জায়গা পেতে শুরু করেন ২০১৭ সাল থেকে। রেনটিসটাসের  হয়ে ১৭ ম্যাচ খেলে ৭ গোল করেছেন। একটা হ্যাটট্রিক ও আছে তাঁর।

এরপর উরুগুয়ের প্রিমেরা ডিভিশনের ক্লাব বোস্টন রিভারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এই ক্লাবের হয়ে তাঁর অভিষেক হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে।

২৯ আগস্ট ২০১৮, পাঁচ বছরের চুক্তিতে বার্সেলোনা তাদের ‘বি’ টিমের জন্য সাইন করায় তাঁকে। সেগুন্ডা ডিভিশনে ভালো খেলার পুরষ্কার ও পাই সে। বার্সেলোনা মুল দলে খেলার সুযোগ পেয়ে যান। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৬ অক্টোবর ২০১৮, লা লিগায় অভিষেক হয় তাঁর।

অবশ্য শুরু থেকে মাঠে ছিলেন না, ৭৩ মিনিটে টডিবোর পরিবর্তে মাঠে নামেন। বার্সেলোনা বড় জয় পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু,  তাকে মাঠ ত্যাগ করতে হয়ছিল মন খারাপ করেই! ৮৬ মিনিটে যে  লাল কার্ড দেখেছিলেন!

জেরার্ড পিকে ইনজুরির কারণে দলে নেই। আরাউহোর উপরই আস্থা রেখেছেন কোচ। আস্থার প্রতিদানটা ভালো মতোই দিচ্ছেন এই উরুগুয়ান। আস্তে আস্তে  বার্সেলোনা মুল দলের ভরসা হয়ে উঠছেন। ২০২০-২১ মৌসুমে নিয়মিত খেলার সুযোগও পাচ্ছেন। ইভান রাকিটিচের রেখে যাওয়া ৪ নাম্বার জার্সিটাও পেয়েছেন। ১৯ ডিসেম্বর ২০২০,  বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় নিজের প্রথম গোলের দেখাও পেয়েছেন। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগেও মাঠে নেমেছেন এই উরুগুয়ান।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, লিগে আরাউহো খেলেছে এমন ম্যাচে বার্সেলোনা একটা ম্যাচও হারেনি!

প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা ভালোই পরীক্ষা নিয়েছেন আরাউহোর। পরীক্ষায় উতরেও গেছেন। ২১ বার ড্রিবলের প্রচেষ্টায় একবারও আরাউহোকে পরাস্ত করতে পারে নাই তারা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে লাস্ট ১৪ ম্যাচে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে সফল ড্রিবলিং করতে পারে না। বার্সেলোনার রক্ষণ দুর্গ ঠিক মতোই আগলে রাখছেন এই একুশ বছর বয়সী।

উরুগুয়ে অনুর্ধ্ব-১৮, অনুর্ধ্ব-২০ দলে খেলেছেন। জাতীয় দলে ডাক পান ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর । বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ম্যাচে। চিলি ও ইকুয়েডরের বিপক্ষে।

একজন স্ট্রাইকারের কাজ যেমন গোল করা। ডিফেন্ডারের কাজ হলো গোল আটকানো। রক্ষণ সামলানো। রক্ষণ সামলানোর কাজটা আরাউহো  ঠিকঠাক করতে জানেন। রোনাল্ড আরাউহো দিনের পর দিন যেন  আরো পরিণত হন। হয়ে উঠতে পারেন বার্সেলোনার রক্ষণের কাণ্ডারি।  সেই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link