এডো ব্র্যান্ডেস, ক্রিকেটের মুরগি খামারি

ক্যারিয়ারে তাঁর পাঁচটা ডাক। তবে, নিশ্চয়ই চিকেনটাই বেশি পছন্দ ছিল এডো ব্র্যান্ডেসের। এটা  সেই সময় যখন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা স্রেফ এই খেলাটাকেই একমাত্র জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে নিতে ঠিক ভরসা পেত না।

এডে ব্র্যান্ডেসও তাই ছিলেন। বাড়িতে তাঁর ছিল মুরগির খামার। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টমেটোর খামারও দিয়েছিলেন। তবে, এবারের আলোচনা এই দুই খামারের মাঝের সময়টা নিয়ে। খুব বড় কোনো নাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়ায় তিনি কোনো কালেই ছিলেন না। তবে, জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলেন চারটি বিশ্বকাপ।

প্রথম বিশ্বকাপ ১৯৮৭ সালে। সেবারই তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়। অভিষেকই ডাক মারেন, শূন্য রানে পড়েন রান আউটের ফাঁদে।

১৯৯২ বিশ্বকাপটা তাঁর জন্য এর চেয়ে একটু সদয় ছিল। ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের সামনে সেদিন মোটে ১৩৫ রানের লক্ষ্য ছিল জয়ের জন্য। ব্র্যান্ডেস পটাপট চারটি উইকেট তুলে নেন ২১ রানে, যেন খামার থেকে চারটা ডিম কুড়িয়ে নিলেন।

আর ডিমগুলোও বেশ ওজনদার ছিল – গ্রাহাম গুচ, অ্যালান ল্যাম্ব, রবিন স্মিথ। বাকিজন হলেন ব্র্যান্ডেসেরই ছোট বেলার বন্ধু গ্রায়েম হিক, যিনি জিম্বাবুয়ে থেকে ইংল্যান্ড গিয়ে থিতু হন। সেদিন টানা ১০ ওভার বোলিং করেছিলেন ব্র্যান্ডেস, বোঝাই যাচ্ছে মুরগির পেছনে দৌড়ে বেশ ভালই শরীর তৈরি করেছিলেন তিনি।

তবে, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড হলে বরাবরই শরীরে বাড়তি জোর পেতেন তিনি। ১৯৯৭ সালে থ্রি লায়ন্সদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক-সহ নেন পাঁচ উইকেট। হ্যাটট্রিকের তিনটি উইকেট হল – নিক নাইট, জন ক্রাউলি ও নাসির হুসেইন। উইকেট হোক কিংবা ডিম মান নিয়ে কোনো আপষ করেননি এডো ব্র্যান্ডেস।

তবে, ডিম, মুরগি বা উইকেট নয় – প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ক্রিকেট সমর্থকদের মনে তিনি টিকে আছেন ১৯৯৬ সালে গ্লেন ম্যাকগ্রার স্লেজিংয়ের জবাব দিয়ে। জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারকে ধ্বসিয়ে দিতে না পেরে ম্যাকগ্রা ভিষন বিরক্ত ছিলেন, ব্র্যান্ডেসকে খোঁচা মেরে বলেন, ‘ব্র্যান্ডেজ, তুমি এত মোটা কেন?’ ব্র্যান্ডেসের নির্বীকার জবাব ছিল, ‘ কি আর করা যাবে, তোমার স্ত্রীর সাথে রাত কাটালেই যে সে বিস্কিট খেতে দেয়!’

ম্যাকগ্রা আর যাই হোক, এর পর থেকে ব্র্যান্ডেসের প্রতি বন্ধুসুলভ কোনো আচরণ করেননি। তবে, তাঁর দেশ অস্ট্রেলিয়া করেছিল। জিম্বাবুয়ের হয়ে ক্যারিয়ার শেষ করে ব্র্যান্ডেস পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি  কুইন্সল্যান্ডের সানশাইন কোস্ট ক্রিকেট ক্লাবের কোচ ছিলেন। আর ম্যাকগ্রা না হলেও অজি উইকেটরক্ষক ইয়ান হিলি ভাল বন্ধু ছিলেন ব্র্যান্ডেসের। ফলে, ব্রিসবেনে পায়ের নিচে মাটি পান ব্র্যান্ডেস।

এরপর ঘটে সেই বিস্ময়কর ঘটনা। মুরগি থেকে টমেটোতে চলে আসেন ব্র্যান্ডেস। আর সেখানেও রেকর্ড। ব্রিসবেন, সিডনি ও বেলবোর্নের মার্কেটের জন্য তিনি প্রতি সপ্তাহে ৫০ টন করে টমেটো উৎপাদন করা শুরু করেন।

এত কিছুর মধ্যেও ক্রিকেটটা ছিল। তিনি বুড়োদের নিয়ে একটা বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা ভাবছিলেন। সেখানে কার্ল ‍হুপার বা জন্টি রোডসের মত তারকাদের থাকার কথা ছিল। কিন্তু, করোন মহামারী সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link