পাদপ্রদীপের নিচটায় নাকি সবসময় অন্ধকার থাকে। যে পাত্র থেকে জ্বালায় আলো তা সর্বদাই থাকে অবহেলিত। এমনই এক অবহেলিত চরিত্র সম্ভবত অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ভিনগ্রহের প্রাণি লিওনেল মেসি কেড়ে নিয়েছেন সমস্ত নজর। বিপদের দিনে যে সবার আগে করেছে উদ্ধার তাকে যেন ঠিক মনে থাকে না কারো।
কোপা আমেরিকার ফাইনাল অথবা বিশ্বকাপ ফাইনাল- যা কিছু অর্জন সেখানে যে মারিয়ারও রয়েছে অবদান। তবুও মারিয়া কি কখনো পেয়েছেন তার প্রাপ্য সম্মান? হয়ত পেয়েছেন কিংবা পাননি। তিনি সেসব নিয়ে কখনোই ভাবেননি। আকাশী জার্সিটা গায়ে চাপিয়ে তিনি যখনই মাঠে নেমেছেন, তখনই নিজেকে নিঙড়ে দিয়েছেন।
কোস্টা রিকার বিপক্ষে খেলেননি লিওনেল মেসি। তাতেও কোন আঁচ লাগতে দেননি দলের উপর। আর্জেন্টিনার এই দলটা প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। এদের অর্জনেও সেই ক্ষুধার আগুন নেভে না। তবে এই দলটাকে দেখানো চাই সঠিক পথ। জয়ের সেই ধারায় কি করে ভাসতে হয় তাই যেন দেখালেন মারিয়া, আরও একটি বার।
কোস্টা রিকার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে আলবিসেলেস্তারা। সেই ম্যাচেও জয় পাওয়ার সেই তাগিদটা তৈরি করেন ডি মারিয়া। ডি-বক্সের বাইরে থেকে একটা শট। চোখ ধাঁধানো সেই ফ্রি-কিক থেকে গোল। গোলটা সমাদৃত হলো না। অথচ হওয়া উচিত ছিল।
ফ্রি-কিক থেকে এমন দারুণ গোল করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এটাই মারিয়ার পুরো ক্যারিয়ারের হাইলাইটস। তিনি দলের জন্যে নিজেকে উজাড় করে দিয়েও কোনদিন পাননি লাইমলাইট। দলের জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে গোলবার, বহুবার। সেই গোলবারের মুখকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলেছেন মারিয়া কতবার। কেউ রেখেছে সে হিসেব? রাখেনি হয়ত।
তবুও মারিয়া আরও একটিবার খুলেছেন সেই অবরুদ্ধ দ্বার। তিনি দেখিয়েছেন আবারও সেই জয়ের পথ। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আর্জেন্টিনার হয়ে। এই দৃশ্য কি আর মারিয়া ভক্তদের সচারচর দেখতে মেলে!
শুধুই কি সেই ফ্রি-কিক গোল। পুরোটা ম্যাচ জুড়েই তিনি তার উপস্থিতির জানান দিয়েছেন। কোস্টারিকার রক্ষণের বুকে কাঁপন ধরিয়েছেন বারংবার। সতীর্থদের বলের জোগান দিয়েছেন। অনুজদের শিখিয়েছেন মাঠের কসরত। যেন আরও একটা প্রজন্মকে নিজ হাতেই তৈরি করে দিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। অনুজদের দিয়ে যাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন লিগ্যাসি।
হয়ত আর বেশিদিন বাকি নেই। বড়জোর আসন্ন কোপা আমেরিকা। এরপর নিশ্চয়ই তুলে রাখবেন আর্জেন্টিনার সেই আকাশী-নীল জার্সি। তখনও কি তাকে মনে রাখা হবে? আর্জেন্টিনার ইতিহাসে একটা অধ্যায়ে স্থান পাবেন তিনি, না-কি পড়ে রইবেন কোন এক ছোট অনুচ্ছেদ হয়ে।