সিলেটে ফিরলো আনন্দের ক্রিকেট

দিনের আলো যখন নিভু নিভু করছে। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে চলে গেছে, সাথে আলোটা কমে গোধুলি নামছে। ঠিক তখনই ফ্লাট লাইট বাতি একটি একটি করে আস্তে আস্তে জ্বলে উঠছিল, সেই কৃত্রিম আলোতে শুরু হল ইভ্যালি সিলেট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ২০২১।

একটা সময় সিলেট ক্রিকেট লিগে খেলেছেন অর্জুনা রানাতুঙ্গার মত বিশ্বকাপ জয়ী তারকা।

উপমহাদশের অনেক তারকা ক্রিকেটার সিলেটের বাইশ গজে ব্যাট বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন। বাংলাদেশের জাতীয় দলের অনেক তারকা ক্রিকেটারের উপস্থিতি রাঙিয়েছিল সিলেটের ক্রিকেট লিগ। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম খানরা খেলে গেছেন সিলেট লিগে।

সিলেট লিগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের পদচারণা তেমন একটা সময় দেখা যায়নি। কোনো এক অজানা কারণে সেটা কয়েক বছর বন্ধ ছিল। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারের কথা বাদই গেলো। কিন্তু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়েও ঠিক সময় লিগ আয়োজন হয় না।

অবশেষে সিলেটের মাঠে গড়ালো জমকালো আয়োজনের ক্রিকেট।

এবারও করোনা কারণে লিগ আয়োজন করা হয়নি। স্থানীয় তরুন ক্রিকেটারদের কথা চিন্তা করেই সিলেটে মাঠে ক্রিকেট আয়োজনের জন্য কাজ করে সিলেট ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন। গেল ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অভিজাত কুশিয়ারা আন্তর্জাতিক কনভেনশনক হল এ সিলেটের প্রথমবারের মত ফ্রাঞ্চাইজি লিগের প্লেয়ারস ড্রাফট অনুষ্টিত হয়। সেখানে ড্রাফটের মাধ্যমে স্থানীয় ১৩ জন ক্রিকেটার নিয়ে দল গঠন করে অংশগ্রহনকারী পাঁচটি দল। সিলেট বাইরে দুই ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ আছে। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সব দল দুজন করে জাতীয় ক্রিকেটার দলে ভিড়িয়েছে।

প্রথম ম্যাচে দেখা গেছে ফজলে মাহমুদ রাব্বি, সোহাগ গাজী, মোক্তার আলীকে। এছাড়াও উদ্বোধনীয় ম্যাচে খেলেছেন নাহিদুল ইসলাম। সিলেটার্স এ্যাসোসিয়েশনের এমন আয়োজন সিলেটের হারানো ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার সুবাতাস দিচ্ছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় বহুল প্রতীক্ষিত ইভ্যালি সিলেট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের উদ্বোধনীয় অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ফ্রাঞ্চাইজি এই ক্রিকেট লিগের উদ্বোধন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল হক।

উদ্বোধনীয় ম্যাচে মোকাবেলা করে স্টার প্যাসিফিক স্ট্রাইকারস এবং কুশিয়ারা রয়েলস।

১১৯ রান তাড়া করতে নেমে ধীরগতিতে ব্যাট করেন কুশিয়ারার রয়েলসের দুই ওপেনার ইমতিয়াজ হোসাইন তান্না এবং মিজানুর রাহমান সায়েম। একটা সময় দলের রান ছিল ১০ ওভারে ২৮। তার সাথে দ্রুত বেশ কয়েকটা উইকেট হারায় তার দল। সেখান থেকে দলকে টেনে নেন জাকের আলী অনিক। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

মুক্তার আলীকে সাথে শুরু ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন। অনিক ব্যাট হাতে মাত্র ৩১ বলে তিন ছক্কা এবং দুই চারে ৪১ রানে অপরাজিত তার এই ইনিংস কুশিয়ারে রয়েলসকে হারতে বসা ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। শেষ পাঁচ ওভারে প্রায় ১১ রান করে প্রয়োজন ছিল, সেই কঠিন কাজটা সহজে সামাল দেন অনিক। তার মারমুখী ব্যাটিংয়ের কারণে চার উইকেট প্রথম ম্যাচে জয় লাভ করে কুশিয়ারা রয়েলস। ম্যাচ জয়ী অপরাজিত ৩১ বলে ৪১ রানের ইনিংসের কারণে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন অনিক।

এমন পরিস্থিতির সাথে বেশ পরিচিত অনিক। সেই বয়স ভিত্তিক দল থেকেই দলকে এভাবে টেনে নিয়ে গিয়েছেন অনেকবার। তাই এই ম্যাচে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হয় না তার। দল শুরুতে উইকেট হারানোতে একটু চাপ ছিল। তবে এরকম পরিস্থিতে খেলার আগে অনেক অভিজ্ঞতা ছিল বলেই কাজটা তার জন্য সহজ হয়েছিল। জাকের আলী অনিক বলেন, ‘শুরুতে উইকেট পড়ে যাওয়াতে একটু চাপ ছিল, তবে আগে এমন পরিস্থিতিতে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা ছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে, আমার মনে হয়েছিল দুই চারটা বাউন্ডারি হলে খেলাটা বের হয়ে আসবে।’

২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপ খেলা এই উইকেট কিপার এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে ডাক পাননি। তিনি বিশ্বাস করেন ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যেতে থাকলে খুব একব সময় জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন। সেজন্য তিনি ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে যেতে চান। বড় কোনো টুর্নামেন্টে রান করতে পারলে সেই আত্মবিশ্বাসটা আরেকটু বেড়ে যায় তার, ‘অবশ্যই এরকম বড় কোনো প্রতিযোগিতায় রান করতে পারলে আত্মবিশ্বাস একটু বাড়ে, সবসময় ভাল খেললে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি। এটা অবশ্যই সবাই দেখে। অবশ্যই স্বপ্ন আছে জাতীয় দলে খেলার। আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আছে।’

প্রথম ম্যাচের মূল আকর্ষন ছিলেন জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার অলক কাপালি, ফজলে মাহমুদ রাব্বি। এই দুই তারকা ছিলেন স্টার প্যাসিফিক দলে। এছাড়া তারা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার নাবিল সামাদ এবং নাহিদুল ইসলামকে খেলিয়েছিল একাদশে। প্রথমে ব্যাট করে স্টার প্যাসিফিক স্ট্রাইকার্স নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে সাত উইকেটে সংগ্রহ করে ১১৮ রান।

মঙ্গলবার দুইটি ম্যাচ অনুষ্টিত হবে। প্রথম ম্যাচে সকাল সাড়ে নয়টায় এমকেবি প্লাটুন মোকাবেলা করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ওয়ারিয়র্সকে। দুপুর দেড়টায় দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুশিয়ারা রয়েলস মোকাবেলা করবে সিলেট উইনাইটেডের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link