হোয়াইটওয়াশ, যে স্বাদ ভুলতে বসেছিল বাংলাদেশ দল

তিন সিরিজ বাদে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা। বাংলাদেশের সাদা পোশাক যেন ক্রমশ হয় আরও সাদা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রীতিমত কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ জুড়েই দাপট দেখিয়েছে সফরকারীরা। দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশ হেরেছে ১৯২ রানের বড় ব্যবধানেই।

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসের শুরু থেকেই পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সিদ্ধান্তের যথার্থতাই প্রমাণ করে গেছে লংকানদের পুরো ব্যাটিং ইউনিট। কোন ব্যাটার সেঞ্চুরির দেখা পাননি বটে, কিন্তু প্রত্যেকেই খেলে গেছেন বড় সব ইনিংস।

তাতে করে শ্রীলঙ্কার মোট রান গিয়ে দাঁড়ায় ৫৩১। এত বিশাল সংগ্রহের পথে কোন ব্যাটার সেঞ্চুরি হাঁকাননি, সেটাও যে এক রেকর্ড। প্রথম ইনিংসে কুশল মেন্ডিস ৯৩ ও কামিন্দু মেন্ডিস ৯২ রানে থাকেন অপরাজিত। তখন অবধি বাংলাদেশ ছিটকে যায়নি ম্যাচ থেকে।

চট্টগ্রামের উইকেট বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক। তেমন এক উইকেটে দাঁড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ৫০০ এর কাছাকাছি রান অন্তত করাই যায়। তবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যর্থতার গল্প যেন শেষ হওয়ার নয়। দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ অবশ্য ভাল কিছুর প্রত্যাশাই করছিল। ১ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় দিন।

পরদিন সকাল বেলায় শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাটারদের উইকেট বিলানোর উৎসব। চা বিরতির আগেই অলআউট বাংলাদেশ। সর্বসাকুল্যে ১৭৮ রানই সংগ্রহ করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ঠিক সেখানে যেন লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের ম্যাচ ভাগ্য। যদিও বাংলাদেশের বোলাররা একটা শেষ লড়াই করবার প্রচেষ্টা চালায়। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে চেপে ধরে লঙ্কানদের।

২৫ ওভার ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা হারায় তাদের মহামূল্যবান ৬টি উইকেট। বাংলাদেশকে ফলো-অনে ফেলে ব্যাটিংয়ের নিমন্ত্রণ দেয়নি শ্রীলঙ্কা। তা যেন হিতে-বিপরীত হয়ে ধরা দেয় শ্রীলঙ্কার জন্যে। ১০২ রান তুলতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যায় লংকান ব্যাটারদের। হাসান মাহমুদ যে অস্বস্তির অন্যতম কারণ।

তবে চতুর্থ দিন সকালবেলা অবশ্য আগের দিনের সেই ধারটা চোখে পড়েনি। আরও ৫৫ রান যোগ করে নিজেদের ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। তাতে করে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৫১১ রান। এত বিশাল লক্ষ্য টপকানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই।

এমনকি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়ার জয়ও শ্রীলঙ্কার লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কম। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। ওটাই ছিল সর্বোচ্চ, এখনও তাই আছে। অতএব বাংলাদেশের যেন চিন্তাই ছিল কেবল ব্যবধান কমানো।

অন্তত সেই চিন্তা কাজে দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। গোটা টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান বাংলাদেশ করেছে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে। সেটা অবশ্য মুমিনুল হক ও মেহেদী হাসান মিরাজের অর্ধশতকের কল্যাণে। মুমিনুল ৫০ করে আউট হয়ে গেলেও, মিরাজ টিকে ছিলেন। লেজের দিকের ব্যাটারদের সঙ্গে নিয়ে মিরাজ ব্যবধান কমিয়েছে, টেস্ট গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে।

পঞ্চম দিনের সকালে ঘন্টা খানেকে একটু বেশি সময় ধরে হয়েছে খেলা। তাতে করে ৩১৮ অবধি পৌঁছাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন খালেদ আহমেদ। ৮১ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের এই ম্যাচ থেকে শ্রীলঙ্কা বাগিয়ে নিয়েছে ১২টি পয়েন্ট। সিরিজে তাদের অর্জন ২৪ পয়েন্ট। শ্রীলঙ্কা পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে উঠে এসেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ নম্বরে। বাংলাদেশ সম্ভবত একটু স্বস্তি খুঁজে পাবে। কেননা ৯ নম্বরে যে অবস্থান ইংল্যান্ডের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link