নিউজিল্যান্ডের ভিনদেশি একাদশ

আসলে নিউজিল্যান্ড দেশটা খুবই ছোট। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে তাই উমহাদেশের মত ক্রিকেট প্রতিভাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই, অসংখ্য ভিনদেশি বা ভিন্ন দেশে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার খেলেছেন নিউজিল্যান্ডে।

২০১৫, ২০১৯, ২০২১ এই তিনটি পঞ্জিকা বর্ষে আইসিসি আয়োজিত সবগুলো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে একটি দল ছিল ধ্রুব। দলটি নিউজিল্যান্ড। গেল কয়েক বছরে অদ্ভুত রকমভাবে নিজেদের ক্রিকেটের উন্নতি ঘটিয়েছে তাঁরা। ধারাবাহিক পারফর্মেন্স তাঁদেরকে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তির তকমা।

তবে নিউজিল্যান্ড সমর্থক অনেকেরই হয়ত জানা নেই ব্ল্যাকক্যাপসদের প্রতিনিধিত্ব করা বেশকিছু খেলোয়াড়দের জন্মস্থান নিউজিল্যান্ড নয়। ভিনদেশে জন্মানো এই খেলোয়াড়দের নিয়ে রীতিমত সাজানো যেতে পারে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি একাদশ।

  • কলিন মুনরো 

দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত বাঁ’হাতি এই ব্যাটারের নিউজিল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয়েছে জন্ম হওয়া দেশের বিপক্ষেই। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে টি-টোয়েন্টি সিরিজের মধ্য দিয়ে কলিন মুনরো তাঁর নিউজিল্যান্ড যাত্রা। এখন পর্যন্ত ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে তিনি খেলেছেন একমাত্র টেস্ট সহ ৬৫টি টি-টোয়েন্টি ও ৫৭টি ওডিআই। তাঁর সংগ্রহকৃত রানের সংখ্যা মোট ৩০১০।

  • ডেভন কনওয়ে 

ডেভন কনওয়ের জন্মস্থানও দক্ষিণ আফ্রিকা। মুনরো নিউজিল্যান্ড দলে রয়েছেন প্রায় এক দশক ধরে। তবে কনওয়ে এসেছেন বছর খানেক। নিউজিল্যান্ডের মাঠে ২০২০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অভিষেক হয় কনওয়ের। তারপর থেকেই ব্ল্যাকক্যাপসদের টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত মুখ তিনি। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রান করেছেন ৬০২।

  • গ্লেন ফিলিপস 

দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত তৃতীয় খেলোয়াড় গ্লেন ফিলিপস। নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছেন উইকেট রক্ষক এই ব্যাটার। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সহ নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৩৪টি। ১৪১ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন ৬৪৫। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে একটি টেস্ট ম্যাচও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

  • লুক রঞ্চি 

একবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দুই দেশের হয়েই প্রতিনিধিত্ব করা একমাত্র খেলোয়াড় হলে লুক রঞ্চি। তিনি ২০১৭ সালে শেষ খেলেছিলেন ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে। সর্বমোট ১০২ আন্তর্জাতিক ইনিংস খেলে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২০৭৫ রান। এর পাশাপাশি উইকেট রক্ষক হিসেবে ১৮টি স্ট্যাম্পিং এর সাথে ক্যাচ ধরেছেন ১৩৩টি।

  • জন ওয়াটলিং (অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক)

২০০৯ সালে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বদলে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট সিরিজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন উইকেট রক্ষক ব্যাটার জন ওয়াটলিং। এখন অবধি ৭৫ টেস্ট ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন ১১৭ ইনিংস। তাঁর টেস্টের রানের ঝুলিতে রয়েছে ৩৭৯০ রান।

  • গ্র্যান্ট এলিয়ট 

২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো এক ইনিংস খেলে নিজ জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নকআউট করে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে জয় তুলে নিয়েছিলেন গ্রান্ট এলিয়ট। তাঁর ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে সেটা অতন্ত সেরা একটি মুহূর্তে নি:সন্দেহে। তাছাড়া ব্ল্যাকক্যাপসদের জয়ে বহুবার ব্যাট ও বলে নিজের অবদান রেখেছেন এলিয়ট। ওয়ানডেতে ৮৩ ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৯৭৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৩৯টি উইকেট।

  • ভিক্টর পোলার্ড

ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা ভিক্টর পোলার্ড নিউজিল্যান্ডে হয়ে খেলছেন ৩২টি টেস্ট ম্যাচের পাশাপাশি তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। টেস্টে খেলা ৫৯ ইনিংসে তিনি রান করেছেন ১২৬৬। বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৪০টি উইকেটও সংগ্রহ করছেন এই অলরাউন্ডার। তিনি পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলেও খেলেছেন।

  • কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম 

জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে খেলা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম জাতীয় পর্যায় প্রতিনিধিত্ব করছেন নিউজিল্যান্ডের। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে ১০৯টি ম্যাচ খেলা ডি গ্র্যান্ডহোম রান করছেন ২৪৩৪। বল হাতে তাঁর উইকেটের সংখ্যা ৮৬।

  • ইশ সোধি

ভারত বংশোদ্ভূত ইশ সোদি বর্তমানে নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ বোলার। তাঁর লেগ স্পিনে ভরসা করে নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। আস্থার প্রতিদান দিতেও তিনি কার্পণ্য করেননি। ১১৪ ম্যাচ খেলে তিনি উইকেট নিয়েছেন ১৬৬টি। তিন ফরম্যাটেই সমান কার্যকরী ইশ সোদি।

  • নিল ওয়াগনার

দক্ষিণ আফ্রিকান নিল ওয়াগনার খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি গায়ে জড়িয়েছেন নিউজিল্যান্ডে জার্সি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বয়সভিত্তিক দলেও খেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের বোলিং আক্রমণের আস্থাভাজন সেনানী নেইল ওয়াগনার এখন পর্যন্ত খেলা ৫৪ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে উইকেট নিয়েছেন ২২৯টি।

  • দীপক প্যাটেল

এই তালিকায় সবচেয়ে বিখ্যাত সম্ভবত ১৯৯২ বিশ্বকাপ খেলা দীপক প্যাটেল। গুজরাটি বংশোদ্ভূত এই অফ স্পিনারের জন্ম আবার কেনিয়াতে। ৭৪ ওয়ানডেতে ৪৫ আর ৩৭ টেস্টে ৭৫ উইকেটের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানটা সাদামাটা দেখালেও নব্বই দশকে নিউজিল্যান্ডের উত্থানের পেছনে এই মানুষটির অবদান কোন অংশে কম ছিল না। ১৯৯২ বিশ্বকাপে বল হাতে ৯ ম্যাচে মাত্র ৮ উইকেট পেলেও ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন মাত্র ৩.১ হারে!

  • দ্বাদশ ব্যক্তি: টামা ক্যানিং

নিউজিল্যান্ডের হয়ে মাত্র চার ওয়ানডে খেলা ডানহাতি পেস বোলার জন্মগ্রহণ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়াতে। তাঁর চার ম্যাচের ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে উইকেট সংখ্যা পাঁচটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link