কোহলির বিরাট রূপ

সাল ২০১২। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিডনি টেস্ট দ্বিতীয় দিন। ছেলেটার সেটা প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর ছিল। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে মা-বোনকে নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য শুনে নিজেকে আটকাতে না পেরে মধ্যমা দেখিয়ে বসে সেই তরুণ।

এরপর বহুদিন পেরিয়েছে। সেই ছেলেটার আগ্রাসী মনোভাবই হয়ে ওঠে অন্যতম এক অস্ত্র। যে আগ্রাসী মনোভাব তার অধিনায়কত্বে থাকাকালীন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দলের মধ্যে।

বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে সেই অস্ট্রেলিয়ানদের স্লেজিংকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। আর ধীরে ধীরে অজি গ্যালারির প্রিয় হয়ে ওঠে আর তাঁর অন্যতম প্রিয় মাঠ এখন অ্যাডিলেড।

২০১৯ বিশ্বকাপ। আবারও ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি – স্টিভেন স্মিথ, সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। বল টেম্পারিংয়ের এর অভিযোগে নির্বাসন থেকে সদ্য প্রত্যাবর্তন করেছেন।

গ্যালারি থেকে ক্রমাগত ভেসে আসছে কটূক্তি। ক্রিজে থাকা তৎকালীন ভারতীয় ক্যাপ্টেন গ্যালারিকে আর্জি জানায় স্মিথকে অভিবাদন জানানোর জন্য।

২০২৩ বিশ্বকাপ। লোকটার নিজের ঘরের মাঠ। ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচ। যার অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিরাট-নাভিন উল হক সাক্ষাৎ। ঘটনার সূত্রপাত আইপিএলের সেই ম্যাচ যেখানে বিরাটের সাথে তুমুল সংঘাত হয়েছিল নাভিন ও গৌতম গম্ভীরের।

তারপর থেকে নাভিন যেখানেই খেলেছে কটূক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ঘরের মাঠে ব্যাটিং ক্রিজে থাকা বিরাট আবার দর্শকদের অনুরোধ করে না করতে আর সাথে নবীনের সাথে হাল্কা হাসি বিনিময় এবং আলিঙ্গন।

২০২৪ সালের আইপিএল। ব্যাঙ্গালুরু ও কলকাতা মুখোমখি বিরাটের দ্বিতীয় ঘর মানে চিন্বাস্বামী স্টেডিয়ামে। আবারও বিরাট ক্রিজে। টাইমআউটে বিরাটের দিকে গম্ভীরের এগিয়ে এসে ছোট্ট বার্তালাপ এবং আলিঙ্গন।

এরপর ওয়াঙখেড়েতে মুম্বাইয়ের মুখোমুখি ব্যাঙ্গালুুুরু। মুম্বাইয়ের নতুন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া মরসুমের শুরু থেকেই সম্মুখীন হচ্ছে নিজেদের সমর্থকদের কটূক্তি ও দুর্ব্যবহারের।

হার্দিক ব্যাটিং করতে ক্রিজে আসতেই গ্যালারি থেকে ধেয়ে এল অসহ্যকর কটূক্তি। টিম হারের মুখে তখন। বাউন্ডারিতে বিধ্বস্ত বিরাট। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বোঝালেন তিনি কতটা অসন্তুষ্ট।

আর হার্দিক যে ভারতেরই সম্পদ। আর আজ হার্দিক এই জায়গাতে এসেছে এই মুম্বাইয়ে খেলেই যার সাক্ষী ওয়াঙখেড়ের দর্শক, সঙ্গে সঙ্গে কটূক্তি পরিবর্তিত হয়ে গেল হার্দিক হার্দিক চিৎকারে। ম্যাচ শেষে হার্দিক জড়িয়ে ধরলো বিরাটকে যে আলিঙ্গনে শুধুই সৌজন্যবোধ নয়, স্মিত হাসিতে মিশেছিল অনেকটা চাপা যন্ত্রণা।

এতো কয়েকটা মাত্র ঘটনা তুলে ধরলাম। এছাড়াও মোহাম্মদ শামির পাশে থাকা কিংবা তরুণ বোলার আর্শদীপকে বড় ভাইয়ের মতো সমর্থন এগুলো তো আছেই। বিরাট এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটার। টেস্টে ভারতের সেরা অধিনায়ক। সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় দ্বিতীয়।

তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ধারেকাছে কেউ নেই। বিরাটের আগ্রাসনের খুব ভক্ত অনেকেই। তবে বিরাটের এই মানবিক দিকটা অনেকটাই আজও চাপা পড়ে যায়। ঔদ্ধত্য আর আগ্রাসী বিরাট বিপক্ষ শিবিরের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দেয় আর শিশুসুলভ আচরণ।

জুনিয়রদের প্রতি ভালোবাসা কিংবা হঠাৎ গানের তালে পা মেলানো বিরাট ভারতবাসীর হৃদয়ের খুব কাছের। এইরকমই থাকুক বিরাট আর শুধু ব্যাটে নয় নিজের এই বিরাট মন দিয়েও জিতে নিক তাঁর নিন্দুকদের ভালোবাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link