Social Media

Light
Dark

দ্য বেকহ্যাম ব্র্যান্ড

মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘ববি চার্লটন সকার ট্রেনিং স্কুল’ এর পুরস্কার জিতে বার্সেলোনাতে ট্রেনিং নিতে যাওয়া ছেলেটা সেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কাউটদের নজরে পড়লো, মাত্র আঠারো বছর বয়সে ‘রেড ডেভিলস’দের হয়ে অভিষেক করলো। ১৯৯৭ সালে বাইশ বছর বয়সে প্রিমিয়ার লিগে শ্রেষ্ঠ উদীয়মান খেলোয়াড়ের সম্মান অর্জন করলো। এই পর্যন্ত গল্পটার সাথে আর পাঁচটা ভালো ফুটবলারের গল্পের মিল ছিল।

গল্পটা রূপকথার সরণি ধরলো ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপ থেকে। যদিও নেগেটিভভাবে। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। বিপক্ষে আর্জেন্টিনা। টানটান উত্তেজনাপূর্ন রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের মাঝে নীল – সাদাদের অধিনায়ক দিয়েগো সিমিওনেকে লাথি মেরে লালকার্ড দেখে ইংল্যান্ডের সাত নম্বর জার্সিধারী বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ইংল্যান্ডও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল। ব্রিটিশ প্রেস উঠে পড়ে লাগলো ‘বেকস এর বাপ – বাপান্ত’ করতে।

সেই সমালোচনা এমন পর্যায়ে উঠলো যে স্ট্যাফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটি বারো সপ্তাহব্যাপী একটা কোর্স চালু করলো যার মুখ্য বিষয় হলো – ‘ডেভিড বেকহ্যাম ও তাঁর ক্যারিয়ারের সমাজের উপর প্রভাব।’ কোর্সটা এই ধারণা থেকে চালু করা হয়েছিল যে ব্রিটিশ সমাজে ফ্রান্স বিশ্বকাপে বেকহ্যামের দুর্ভাগ্যজনক কাণ্ডের প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের প্রভাবের সমতুল্য।

বেকহ্যামের জনপ্রিয়তা ক্রমশ শীর্ষে উঠতে শুরু করলো যখন বেকহ্যাম ‘দ্য স্পাইস গার্লস’ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য ভিক্টোরিয়া অ্যাডামসের সাথে ডেটিং শুরু করলেন এবং অবশেষে পরিণয়ে আবদ্ধ হলেন। বেকহ্যামের ব্যবসায়িক বুদ্ধির ঝলক পাওয়া যায় যখন তিনি ৮ লক্ষ পাউন্ড খরচ করে করা তার বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি ‘ওকে!’ ম্যাগাজিনকে ২০ লক্ষ পাউন্ডের বিনিময়ে বিক্রি করেন।

বিশেষ করে,দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেন যে ২০০২ সালে পরিচালক গুরিন্দর চাড্ডা, তার নামে চলচিত্র নির্মাণ করেন – ‘বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম!’ আচ্ছা, শুধুই কি ব্র্যান্ডিং, প্রচার, ফ্যাশনমুখরতা বেকহ্যামকে আর পাঁচজন ফুটবলারের থেকে আলাদা করে রেখেছিল ? সমসাময়িক দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলারদের সাথে এক ব্র্যাকেটে এনেছিল ? উত্তর – না।

বেকহ্যাম খুব সচেতনভাবেই জানতেন এতো জনপ্রিয়তা, প্রচার, অর্থ, প্রাচুর্য, বৈভব, মানুষের ভালোবাসা সবকিছুর পিছনে একটিই রহস্য – ফুটবল। তাই তিনি ফুটবলকে ব্রাত্য করে কিছু করেননি। ফুটবলের জন্যই এত কিছু, তাই ‘ফুটবল ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই তাকে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফ্রি কিক টেকার ধরা হয়।

তার গোলের পাসের ঠিকানা লেখা ডান পা দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে বারে বারে প্রমান করার মধ্যে দিয়ে আপামর ফুটবলপ্রেমীর মনে একটা স্থির বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে যে বক্সের বাইরে ২৫ – ৩০ গজ দূরত্বে কোনো দল ফ্রি কিক পেলে মনে হয় বেকহ্যাম থাকলে নিশ্চিত গোল হতো।

আর, সেই বিশ্বাসই প্রতিনিয়ত জন্ম দিয়ে চলেছে ফ্রি কিক স্পেশালিস্টদের। যাদের একটাই মূলমন্ত্র – বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link