পাকিস্তানি ‘অঙ্কুরে বিনষ্ট’ টেস্ট একাদশ

পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই যুগে যুগে তারার মেলা। অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারই সুযোগ পেয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন সেরাদের কাতারে। কেউ বা আবার ঝরে পড়েছেন অল্পতেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর কাঁড়া পারফরম্যান্সের পরেও অনেকেই নিজেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মেলে ধরতে পারেননি। সাদা পোশাকে পাকিস্তান ক্রিকেটে এমন আক্ষেপ অনেক আছে। অনেক ফুলই নষ্ট হয়ে গিয়েছে অঙ্কুরে!

১৯৮০ সাল থেকে আজ অবধি পাকিস্তান ক্রিকেটে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মেলে ধরতে না পারা এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েত কম না। এদের দিয়ে চাইলে দিব্যি একটা একাদশ বানিয়ে ফেলা যায়।

  • সালমান বাট (অধিনায়ক)

২০১০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে নিষিদ্ধ হন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক সালমান বাট। ওপেনিংয়ে পাকিস্তানের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার মত সব রকম সম্ভাবনা আর সামর্থ্য ছিল।

কিন্তু ফিক্সিং কাণ্ডে ক্যারিয়ার থমকে গিয়েছে মাত্র ৩৩ টেস্টে। সাদা পোশাকে ৩০ গড়ে করেছেন ১৮৮৯ রান। ফিক্সিংয়ের কালো অধ্যায়ে নিজেকে না জড়ালে হয়তো নিজেকে সফলদের কাতারে নিতে পারতেন। এই একাদশে অধিনায়ক ও ওপেনার হিসেবে থাকবেন সালমান বাট।

  • সেলিম এলাহী

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩২ গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার রান ও লিস্ট এ ক্রিকেটে ৫২ গড়ে ৬ হাজারের বেশি রান! ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পারফরম্যান্স জাতীয় দলে সাদা পোশাকে ধরে রাখতে পারেননি সাবেক পাকিস্তানি ব্যাটার সেলিম এলাহী।

২৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে দেখা পেয়েছেন মাত্র এক ফিফটি! ১৯ গড়ে করেছেন ৪৩৬ রান। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সাদা পোশাকে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি সাবেক এই পাকিস্তানি ব্যাটার।

  • মোহাম্মদ ওয়াসিম

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মোহাম্মদ ওয়াসিম ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা একজন তারকা। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নিজের সামর্থ্যের ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি তিনি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৫ গড়ে ১০ হাজার রানের মালিক ওয়াসিম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে টেস্টে মাত্র ১৮ ম্যাচ খেলেছেন! এই ১৮ ম্যাচে ৩০ গড়ে করেছেন মোটে ৭৮৩ রান!

  • আমির মালিক

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা মাত্র তিন ক্রিকেটারের একজন ছিলেন পাকিস্তানের আমির মালিক।

ঘরোয়া ক্রিকেটের মতোই জাতীয় দলেও ছিলেন অসাধারণ ফর্মে। ১৪ টেস্টে ৩৫ গড়ে ৫৬৫ রান করার পরেও ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি তিনি। তিন ফিফটির সাথে করেছেন দুটি সেঞ্চুরিও। শুরুটা দুর্দান্ত করলেও এরপর ধারাবাহিকতা না থাকায় মূলত ছিটকে যান তিনি। সম্ভাবনাময় থেকে বনে যান পাকিস্তান ক্রিকেটের আক্ষেপ।

  • বাসিত আলী

পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বাসেত আলীকে ভাবা হতো পরবর্তী জাভেদ মিয়াঁদাদ। যদিও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। মিয়াঁদাদ জাতীয় দলে থাকা অবস্থায় ঝড়ে পড়েন বাসিত।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৮ হাজার রানের মালিক হলেও জাতীয় দলে খেলেছেন মোটে ১৯ টেস্ট। ২৭ গড়ে করেছেন ৮৫৮ রান! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১ সেঞ্চুরির মালিক বাসিত আলী সাদা পোশাকে জাতীয় দলে দেখা পেয়েছেন মাত্র এক সেঞ্চুরির!

  • আসিফ মুজতবা

ঘরোয়া ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে প্রায় ২৪ হাজার রানের মালিক! পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা হবার সম্ভাবনা আর সামর্থ্য সবটাই ছিল আসিফ মুজতবার। কিন্ত জাতীয় দলে সাদামাটা ক্যারিয়ারে থমকে গিয়েছেন অল্পতেই। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই জাতীয় দলে অভিষেক।

তবে, যে সম্ভাবনা দেখিয়ে তিনি এসেছিলেন সেটি পূরণ করতে পারেননি তিনি। টেস্টে খেলেছেন মাত্র ২৫ ম্যাচ। ২৪ গড়ে করেছেন মোটে ৯২৮ রান! দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে সেরাটা দিয়েও আর ফিরতে পারেননি তিনি।

  • কামরান আকমল

এই আক্ষেপময় একাদশে উইকেট রক্ষক হিসেবে থাকবেন কামরান আকমল। অন্তত বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি সময় ছিলেন জাতীয় দলে। কিন্তু উইকেট রক্ষক হিসেবে বরাবরই তিনি ছিলেন সমালোচিত। ২০০৯-১০ অস্ট্রেলিয়া সফরে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার এক ইনিংসে চারটি ক্যাচ ছাড়েন কামরান!

তাঁর দেওয়া সুযোগে ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন হাসি। নবম উইকেটে পিটার সিডলের সাথে গড়েন ১৩৩ রানের জুটি! ওই ম্যাচে ৩৬ রানে হারে পাকিস্তান! পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় পেসার রানা নাভেদের সাথে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলেন আকমল। ব্যাট হাতে ৫৩ টেস্টে ৩১ গড়ে করেছেন ২৬৪৮ রান। অধারাবাহিকতা না থাকলে কিংবা উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে নিজের সেরাটা দিতে পারলে হয়তো টেস্টে আরও দীর্ঘ হত আকমলের ক্যারিয়ার।

  • আতাউর রহমান

ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসদের সাথে পেসত্রয়ী হিসেবে তরুণ আতাউর রহমানের মাত্র ১৭ বছর বয়সেই জাতীয় দলে অভিষেক হয়। সাদা পোশাকে মাত্র ১৩ টেস্টে ৩৫ গড়ে শিকার করেছেন ৩১ উইকেট।

নিখুঁত লাইন-লেন্থ, স্যুইং করানোর ক্ষমতা থাকার পরেও অল্পতেই থেমে গেছে আতাউরের ক্যারিয়ার। ২০০০ সালে ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আজীবন নিষেধাজ্ঞা পান তিনি!

  • মোহাম্মদ আসিফ

পাকিস্তান ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় আক্ষেপের কথা আসলে সবার উপরের দিকে থাকবেন মোহাম্মদ আসিফ। ক্যারিয়ারে যে ক’দিনই খেলেছেন স্যুইং ভেলকিতে নাচিয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটারদের। সেরাদের কাতারে যাওয়ার সব রকম সম্ভাবনাই ছিল আসিফের মাঝে।

কিন্তু ইনজুরি আর ফিক্সিং ইস্যুতে নিজের ক্যারিয়ার শেষ করে দেন অল্পতেই। ২৩ টেস্টে মাত্র ২৪ গড়ে শিকার করেছেন ১০৬ উইকেট! কিন্তু নিজের ভুলেই সম্ভাবনাময় এক উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নিভে গেল মাঝপথেই।

  • মোহাম্মদ সামি

ক্লাব ক্রিকেট থেকে উঠে এসে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। অভিষেকেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট সহ ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই গড়েন হ্যাটট্রিক!

এরপরই পাল্টে যায় সামির ক্যারিয়ার। অধারাবাহিকতার কারণে জায়গা হারান পেসার মোহাম্মদ আসিফের কাছে। সাদা পোশাকে বোলিং গড় গিয়ে ঠেকে ৫৩ তে! ৩৬ টেস্টে ৫৩ গড়ে ৮৫ উইকেট নেওয়ার পর আর সাদা পোশাকে ফিরতে পারেননি সামি।

  • মোহাম্মদ আকরাম

ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আক্তারদের সাথে পাল্লা দিয়ে জাতীয় দলে থিতু হতে পারনেনি পেসার মোহাম্মদ আকরাম। অবশ্য পারফরম্যান্সটাও যে ঠিকঠাক ছিল না। সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন সাদামাটা।

সপ্তম টেস্টে এসে পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেও ৯ টেস্টে ৫১ গড়ে ১৭ উইকেট নেওয়ার পরই বাদ পড়েন দল থেকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৯ গড়ে ৪১৫ উইকেট প্রমাণ করে আকরামের সামর্থ্যের। তবে জাতীয় দলে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।

  • আকিব জাভেদ (দ্বাদশ খেলোয়াড়)

ওয়ানডেতে নিয়মিত মুখ হলেও টেস্টে একাদশে ধারাবাহিক হতে পারেননি পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার আকিব জাভেদ। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসদের ছায়ায় কেটেছে আকিবের ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়।

২২ টেস্টে ৩৫ গড়ে নিয়েছেন ৫৪ উইকেট। রঙিন জার্সিতে দলের অন্যতম সেরাদের একজন হলেও সাদা পোশাকে সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি আকিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link