সাল ১৯৮৮। তখন ও ২২ গজের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ক্রিকেট ঈশ্বরের আবির্ভাব হয়নি। সে সময় বোলারদের ত্রাসের অপর নাম ভিভ রিচার্ডস। যাকে বল করতে গেলে বুক কাঁপতো না এমন বোলার হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এমন ব্যাটসম্যান কে কি না দিনের শেষ ওভারে বাউন্সার দিয়ে দিল ছেলেটা! তাও আবার সাথে স্লেজিং! সে সময় ভিভের সাথে স্লেজিং আর জলে নেমে কুমিরের সাথে লড়াই প্রায় সমার্থক ছিল। এমন অবস্থায় অভয় দিতে এগিয়ে এলেন তাঁর ক্যাপ্টেন, ইমরান খান।
সাহস জুগিয়ে আবার বাউন্সার দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। এবার ও ডাক করলেন ভিভ। বিনিময়ে পেলেন আবার স্লেজিং। এতেই হয়তো মন:সংযোগে ব্যাঘাত ঘটেছিল ক্যারাবিয়ান সম্রাটের। দিনের শেষ বলে বিষাক্ত ইনসুইং এ বোল্ড হয়ে গেলেন ভিভ। ঘাতক সেই ছেলেটি।
শোনা যায় উপরোক্ত ঘটনাটির জন্য নাকি ভিভের থেকে খুনের হুমকি ও পেয়েছিল ছেলেটি। সেই ছেলেটির নাম ওয়াসিম আকরাম, কালক্রমে ক্রিকেটের বাইশ গজে ফাস্ট বোলিং দিয়ে ওয়াসিম আকরাম কি কি করেছেন সেটা আর না বলে দিলেও চলে।
সেদিন, সাথে একটি শিক্ষাও পেয়েছিল যে এই ২২ গজের যুদ্ধে তাবড় ব্যাটসম্যান দের বিরুদ্ধে বল করতে গেলে এই আগ্রাসন ও সমান জরুরী। শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসতে হলে তাকেও চোখে চোখ রেখে লড়তে হবে। নিজেকে দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। বোলিং কে নিয়ে যেতে হবে শিল্পের পর্যায়ে।
পেরেছিলেন সদিনের ওয়াসিম আকরাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯১৬ উইকেট তাঁর দখলে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের ইমরান ব্রিগেডের অন্যতম যোদ্ধা। বোলিং সাম্রাজ্যে রিভার্স সুইং শিল্পের অন্যতম কাণ্ডারি। সতীর্থ পেসার ওয়াকার ইউনুসকে সাথে নিয়ে ব্যাটসম্যান দের বিরুদ্ধে কার্যত শাসন করে গিয়েছেন এক দশক।
হতে পারে উনি অন্য দেশের, হতে পারে উনি এমন একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন যে দেশটি কে হয়তো ভারতীয়রা অনেকেই কোনোদিন মন থেকে ভালোবাসতে পারেনি। তবুও, তাঁকে বোধহয় কোনো ভারতীয় ঘৃণার চোখে দেখেনি আজ পর্যন্ত।
ক্রিকেটের কোনো ধর্ম হয় না, কোনো জাত হয় না, কোনো দেশ ও হয় না। সেখানে একটাই ধর্ম — ক্রিকেট। আর এই ধর্মের একনিষ্ঠ উপাসক হলেন ওয়াসিম আকরাম, সুলতান অব স্যুইং!